নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণের দাবি ব্যবসায়ী সংগঠনের
Published: 27th, July 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা ও জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।
পরে যানজট নিরসনে এক মতবিনিময় সভায় আয়োজন করা হয়। রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা যানজট নিরসনে বিভিন্ন মতামত দেন।
এসময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ভূঁইয়া বলেন, “বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজট একটি নিত্যদিনের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।
এ যানজটের ফলে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, রোগীসহ প্রতিটি শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত মানসিক অস্বস্তি, সময় ও অর্থের অপচয় এবং নানা দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের প্রায় প্রত্যেকটি স্পটে ও বাজারের সামনে এ সমস্যা বিরাজমান।
বিশেষ করে চাষাড়া মোড় থেকে চানমাড়ী স্ট্যান্ড, ২ নম্বর রেলগেইট, পুলিশ লাইন্স, খানপুর রোড, ১ নং রেইলগেইট, কালিরবাজার, পঞ্চবটি মোড় ও শিবু মার্কেটেও যানজটের পরিস্থিতি ক্রমাগত ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এসব স্থানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব, অবৈধ পার্কিং, রিক্সা ও অবৈধ যানবাহন, অবৈধ ভাবে ফুটপাত ও রাস্তা দখল, অটোরিক্সা ও নিয়ম না মানা চালকদের কারণে শহরজুড়ে এক অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।”
তিনি বলেন,“গত পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট নিরসনের জন্য নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে ট্রাফিক বিভাগকে সহায়তা করার জন্য ছাত্রদের মাধ্যমে ভলান্টিয়ার টিম তৈরি করে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগকে সহায়তা করা হয়।
এতে ব্যবসায়ী তথা নারায়ণগঞ্জ শহরবাসী উপকৃত হন এবং যানজট নিরসনে আশার আলো দেখতে পায়। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার উদাহরণস্বরুপ প্রমাণ করেছিল নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে যানজট নিরসন সম্ভব এবং শহরবাসীও আশাবাদী ছিল হয়ত তখন থেকে যানজট বিষয়ে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন।
কিন্তু পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের পরে থেকে যানজট সমস্যা ক্রমাগত আগের চেয়ে ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমরা বিশ্বাস করি, ট্রাফিক বিভাগসহ পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।
আমরা নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করেছি শহরের যানজট প্রবণ পয়েন্টগুলোতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে অতিদ্রুত কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, অবৈধ পার্কিং, অটো রিক্সা নিয়ন্ত্রণ এবং ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ, সেচ্ছাসেবক সংখ্যা বৃদ্ধিসহ ডিজিটাল ট্রাফিক মনিটরিং চালু করা অত্যন্ত জরুরী।”
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “নারায়ণগঞ্জ শহরে দীর্ঘদিন ধরে যানজটের সমস্যা রয়েছে। ছোট্ট এই শহরে জনসংখ্যা খুব বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় সড়ক কম। শহরে প্রচুর অটোরিকশা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় আমরা তা নিয়ে কাজ করছি।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, মাহে রমজান মাসে যানজট নিরসনে আমাদের সহায়তা করার জন্য। শহরে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত জনবল নাই। যানজট নিরসনে দ্রুত সবাইকে নিয়ে একটা কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির পরামর্শক্রমে দ্রুত বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীকে সবার আগে সচেতন হতে হবে।”
মতবিনিময় সভায় বিকেএমইএ, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ নীট ডাইং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পাল্স এন্ড লেনটিল ক্রাশিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ডাইস এন্ড কেমিক্যাল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস রি-সাইকেলিং কালার ফাইবার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর হুসাইনসহ প্রমুখ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স গঠন ব যবস য় ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ চ ম ব র ন র য়ণগঞ জ শহর র য নজট ন রসন ব যবস য় স এন ড
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।