নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে তখন আটকে রাখা হয়েছিল। আর বাইরে চলছিল গণগ্রেপ্তার, হয়রানি-নির্যাতন। এ রকম একটা থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে ২৮ জুলাই রাতে ডিবি কার্যালয় থেকে একটি ভিডিও বার্তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

ওই ভিডিওতে দেখা যায় ডিবি কার্যালয়ে আটক থাকা নাহিদ ইসলাম (এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক) একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন। একটি কাগজ দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা ইতিমধ্যে সরকার পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।’

ডিবির পাঠানো ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে নাহিদ ইসলামের পাশে বসে আছেন বাকি পাঁচ সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদার। এই পাঁচজনের মধ্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আর বাকের গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি থেকে পাঠানো ওই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আন্দোলন থেমে যাবে—এমনটি ভেবেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু ঘটনাটি বুমেরাং হয়েছিল। সমন্বয়কদের ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে বাধ্য করার ঘটনায় মানুষ আরও ক্ষুব্ধ হয়। সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ডিবির কার্যালয় থেকে প্রচারিত ওই বার্তা প্রত্যাখ্যান করে ‘স্পষ্ট বিবৃতি’ দেন। এতে বলা হয়, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডিবি কার্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে দিয়ে জোরপূর্বক যে বিবৃতি আদায় করা হয়েছে, তা দেশের ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু নামে একটি বই লিখেছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। গত মার্চে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ওই বইয়ে ২৮ জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ডিবির পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আন্দোলন প্রত্যাহারের একটা লিখিত বার্তা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা ভাবলাম, এদের কথা শুনে আগে তো বের হই। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে বলে দেব যে আন্দোলন চলবে।’

ছয়জন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়ার পর আন্দোলনের নেতৃত্ব নেন অন্য সমন্বয়কেরা (তখন ছিলেন ৬৫ জন সমন্বয়ক-সহসমন্বয়ক, পরে সংখ্যাটি ১৫৮ হয়)। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুল হান্নান মাসউদ, মাহিন সরকার ও রিফাত রশীদ। এর মধ্যে হান্নান ও মাহিন এখন এনসিপি নেতা। আর রিফাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বর্তমান সভাপতি।

রিফাত রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তখন আমরা বনানীর একটা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ওই ভিডিও বার্তা সেখানে দেখি। ডিবি কার্যালয়ে থাকা সমন্বয়কেরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন—এ বিষয়টা শুরুতে আমাদের জন্য খুব কষ্টদায়ক ছিল। কিন্তু আসিফ ভাই (আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া) আগেই আমাদের বলে রেখেছিলেন, চাপের মুখে যদি কিছু করতে বাধ্য করা হয়, তোমরা মাঠ ছাড়বে না। আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’

রিফাত রশীদ বলেন, ‘আমাদের আগের পলিসির বিষয়টা তখন মাথায় আসে—যিনি মাঠে থাকবেন, তিনিই নেতা; কে কোথায় আছেন, সেটা বিষয় না। আমি, আবদুল হান্নান মাসউদ ও মাহিন সরকার আন্দোলনের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিলাম। আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণাকে ডিনাই করে আমরা বললাম আন্দোলন চলবে। ফেসবুকের মাধ্যমে ও বিভিন্ন মিডিয়াকে আমরা জানাই—আন্দোলন চলবে। জনগণ আমাদের এই ঘোষণাকে গ্রহণ করেছিল।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ