‘অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান’
Published: 5th, August 2025 GMT
বাংলাদেশের রাজনীতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গণ–অভ্যুত্থানের পথ ধরে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবর্তন। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবি আন্দোলন ১৯৫২ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি ও পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতিতে সে আন্দোলন পরিণতি পায়। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পথ বেয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির ঐতিহাসিক বিজয়, বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আবার গণ-অভ্যুত্থান, পরবর্তী সময়ে যা জনযুদ্ধে রূপ নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়। দীর্ঘ ৮ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটায় ১৯৯০ সালের নাগরিক অভ্যুত্থান।
২০২৪ সালের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আগেকার গণ–অভ্যুত্থানের পরম্পরা এবং ১৯৭১ সালের জনযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার পুনরুজ্জীবন। আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে এই গণ–অভ্যুত্থান রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে। তবে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির ব্যবধান বিরাট। কথা ছিল, আমরা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যাব। অথচ অনেক ক্ষেত্রে হচ্ছে তার বিপরীত। বিশেষত রাষ্ট্রীয় অধিকারহীন ও বর্ণবৈষম্যের শিকার বাংলাদেশের নমশূদ্র, দলিত, হরিজন ও চা–শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এ কথা বিশেষভাবে সত্য।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। তবে চরম বৈষম্যের শিকার নমশূদ্র, দলিত, হরিজন ও চা–শ্রমিকদের জন্য কোনো কমিশন গঠিত হয়নি। এমনকি গঠিত কমিশনগুলোর কোনোটিতে এই বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি নেই। এই জনগোষ্ঠীর নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের (১৯০৪-৬৮) ধারণা ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসকগোষ্ঠীর থেকে মুসলিম শাসকগোষ্ঠী নিম্নবর্গের প্রতি বেশি সহানুভূতিপ্রবণ হবে। বিগত ৭৮ বছর তাঁর ধারণার বিপরীত চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে গণ–অভ্যুত্থানের পরে অনেকেই বলেছিলেন, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ‘ওয়ান অব দ্য ফাউন্ডিং ফাদার্স’। তাতে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী ভিন্নতর কিছু আশা করেছিল।
২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ৵মাত্রার মর্মবাণী হচ্ছে, ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়, সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নিম্নবর্গকে পেছনে রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ৵মাত্রা অর্জন করতে পারবে না। এই বোধ থেকে বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ‘বৈষম্যবিরোধী আইন ২০২২’ বিল আকারে উপস্থাপন করে। তবে বিলটি জাতীয় সংসদে গৃহীত না হওয়ায় আইনে রূপান্তরিত হয়নি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে এই জনগোষ্ঠীর বঞ্চনার অবসানের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও গত ৫৪ বছরে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
উৎপল বিশ্বাস: সদস্য, জাতপাত বিলোপ জোট.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনগ ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
এখন আমার মোবাইলে ওর কোনো ফোন আসে না
ঘরে তাকে তাকে সাজিয়ে রাখা বই। টেবিলে খাতা, আর নানা অর্জনের মেডেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। প্রতিটি কোনায় থাকা স্মৃতি চিহ্নগুলো পরিবারকে আফিকুল ইসলাম সাদের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ঢাকার ধামরাইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ এই শিক্ষার্থীর স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছেন তার মা-বাবা। ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা তারা। ছেলে হারানোর বেদনায় দিন কাটে তাদের। মা-বাবার একটাই দাবি, ছেলে হত্যার বিচার।
পুলিশ বলছে, মামলায় অন্তত অর্ধ শতাধিক আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিগগিরই দেওয়া হবে তদন্ত প্রতিবেদন।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু
রবিবার সমাবেশ, ঢাকাবাসীর কাছে ছাত্রদলের অগ্রীম দুঃখ প্রকাশ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি স্কুল অ্যন্ড কলেজ গেটের সামনে বিক্ষোভ চলছিল। এসময় কলেজছাত্র সাদ গুলিবিদ্ধ হন। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনদিন পর ৮ আগস্ট সকালে তিনি মারা যান।
সাদ সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ধামরাইয়ের রথখোলা এলাকায় বাবা মো. শফিকুল ইসলাম, মা জাহানারা বেগম এবং ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম আবীরের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দড়গ্রাম এলাকায়।
আফিকুল ইসলাম সাদ
ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সাদের মা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘‘ও যতক্ষণ বাইরে থাকত, কিছুক্ষণ পরপরই কল দিয়ে খোঁজ নিত, নিজের খোঁজ জানাত। এখন আমার মোবাইলে ওর কোনো ফোন আসে না।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার সন্তানকে আল্লাহ শহীদের মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ যেন আমার সন্তানকে জান্নাতে নেয়।”
শোককে ধারণ করে ছেলে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবি করেন সাদের বাবা মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘যে ফ্যাসিস্টরা তাকে শহীদ করেছে, আমাদের বুক খালি করেছে, আমার সন্তানকে নিয়ে নিয়েছে তাদের বিচার যেন এই বাংলার মাটিতে হয়।”
সাদকে হত্যার ঘটনায় গত বছরের ২১ আগস্ট ধামরাই থানায় মামলা করেন তার নানা আজিম উদ্দিন। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৮২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৮০-৯০ জনকে।
এ মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবীর মোল্লাসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান।
ধামরাই থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সাদ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। শিগগিরই মামলার প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।”
ঢাকা/মাসুদ