১২–দলীয় জোটভুক্ত লেবার পার্টি ভেঙে ‘ইউনাইটেড লিবারেল পার্টি’ গঠন
Published: 6th, August 2025 GMT
১২–দলীয় জোটের সদস্য লেবার পার্টি বাংলাদেশ থেকে বের হয়ে ‘ইউনাইটেড লিবারেল পার্টি (ইউএলপি)’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। জোটের নেতারা দলটিকে স্বাগত জানালেও এভাবে দল ভাঙার সংস্কৃতি দেশের রাজনীতির জন্য ভালো না বলেও মন্তব্য করেছেন।
আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। লেবার পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে এ দল গঠন হয়।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির বড় দুর্ভাগ্য। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নানা কারণে তাঁরা একতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারেন না। এ জন্য শুধু এই দল দায়ী নয়। তাঁর নিজের দল জাতীয় পার্টিও বহু ভাগে বিভক্ত। আরও অনেক রাজনৈতিক দল একই নামে ব্র্যাকেটবন্দী হয়ে ভিন্ন পরিচয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আত্মপ্রকাশ করছে। এটা ভালো কথা নয়।
নতুন দলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, লেবার পার্টি কয়েকবার ভেঙেছে। তবে এবার নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করায় তিনি বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের নির্দেশনা দিয়েছেন উল্লেখ করে এই রাজনীতিবিদ বলেন, এখনো ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চলছে। আগামী শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১২ দলের এই জোটের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা নতুন দলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ৫ আগস্ট না এলে এই দলের মতো অনেক দলেরই আত্মপ্রকাশ হতো না। তিনি আশা করেন, নতুন দল রাজনীতির মাঠে নিজের সঠিক অবস্থান তুলে ধরবে।
জুলাই ঘোষণাপত্রের মঞ্চে মোস্তফা জামাল হায়দারের মতো নেতার জায়গা না হওয়ার সমালোচনা করে এহসানুল হুদা বলেন, ফ্যাসিস্টদের দোসর, শেখ হাসিনার ছায়ায় থাকা মানুষদের ঠাঁই হয়েছে। এখানে বৈষম্য করা হয়েছে।
ইউএলপির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ১২–দলীয় জোটের সঙ্গে আছেন। আগামী দিনে যা–ই হোক, তাঁর দ্বারা অনৈতিক কিছু হবে না। জোটের সিদ্ধান্তের তিনি বাইরে যাবেন না। ১২–দলীয় জোটের মতো তিনিও বিএনপির সঙ্গে থাকবেন।
অনুষ্ঠানে ইউএলপির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো.
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ১২–দলীয় জোটের অন্য নেতারাও বক্তব্য দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্ট ঘিরে বিশেষ অভিযান, ঢাকায় আওয়ামী লীগের ২১ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বার্ষিকী ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে সারা দেশে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, একটি মহল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেটা মোকাবিলায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বাকিদের থানা–পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন, নবীনগর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন আহমেদ, ঝালকাঠি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার, পীরগঞ্জ থানা যুবলীগ সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন (৩৫), ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক (২৭), বনানী থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. বাদশা খান (২৯), আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য সাব্বির মজুমদার (৪৩), ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি আনিসুর রহমান হিটলু (৪৮), উত্তর খান থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আজিজুল হক (৪৫), ঢাকা জেলা আওয়ামী তথ্যপ্রযুক্তি লীগের সাধারণ সম্পাদক সান মোহাম্মদ (৪২), শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম (৬২), ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকির হোসেন ফরাজী (৫৩), ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোর্শেদ (৫১), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম (৩৩), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য মইনুল হোসেন সুমন (৪৮), কায়েতটুলী শাখা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. রকি ওরফে রায়হান (৩৩), ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহমুদ শিকদার (৪৭), উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রলীগের ১ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক হামীম আহমেদ ওরফে মিনহাজুল আবেদিন, উত্তর খান থানা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম (৫০), শ্যামপুর থানা ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি সায়মন রহমান (৪২) ও খিলগাঁও থানা ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মো. আল মামুন সরকার (৪৪)।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৩৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এর মধ্যে কতজন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী, সেটা আলাদা করে জানানো হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাসায় বাসায় গিয়ে অভিযানঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাত থেকে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগের পদে রয়েছেন এমন অনেক নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ছবি রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাতে মানিকগঞ্জে অভিযান চালিয়ে দৌলতপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা আক্তার (৩৪) ও কলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আবদুল রশিদকে (৪৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্টকে সামনে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ নানাভাবে তৎপর। সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে দলটির কয়েক শ নেতা-কর্মীর ‘গোপন বৈঠকের’ খবর প্রকাশিত হয়েছে। পরে এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বৈঠকে অংশ নেওয়া আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।