ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের ঘটনাকে ‘একাত্তরের শহীদদের অবমূল্যায়নের ঘৃণ্য অপচেষ্টা’ ও ‘একাত্তরের লাখো শহীদের রক্তের প্রতি এবং জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান’ বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে সংগঠনটি।

বুধবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী ও গণহত্যার দায়ে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনকে ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করানোর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছে তারা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের ওপর গণহত্যার দায়ে চিহ্নিত অপরাধীদের ছবি দিয়ে জুলাই উদ্‌যাপন করা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকলেও একাত্তরের গণহত্যার দায় প্রশ্নাতীত।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে প্রক্টর কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের প্রতিবাদের মুখে প্রক্টরিয়াল টিম ধীরগতিতে ওই ছবি সরায়। তবে কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, ছবিগুলো সরানোর সময় কিছু ব্যক্তি উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং ঘটনাটিকে ‘ছাত্রদের মব অ্যাকশন’ হিসেবে প্রচার করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্রতিবাদের সময় এক ব্যক্তি জুম করে নারী শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করছিল। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা টের পেয়ে ওই ব্যক্তির মোবাইল কেড়ে নেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ইসলামী ছাত্র শিবিরের চৌমুহনী কচুয়া গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। অথচ ৫ আগস্ট উপলক্ষে বাইরের শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এমন অবস্থায় বহিরাগতরা কীভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

অতীতের নানা ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছর থেকে প্রশাসনের শৈথিল্যের কারণে তোফাজ্জল ও সাম্য হত্যাকাণ্ড, শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলা, চারুকলায় মোটিফে আগুন লাগানো, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আমলে না নেওয়াসহ একাধিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

বিবৃতিতে সংগঠনটি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অঙ্গীকার করতে হবে, তারা ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে না; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশনা জারি করতে হবে; গত এক বছরে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত একাধিক ঘটনার দায়ে দায়িত্বে ব্যর্থ প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে; ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারীদের হয়রানির সঙ্গে জড়িত সংগঠন ও সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে; ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে স্থায়ী উদ্যোগ নিতে হবে এবং স্মৃতি-চিরন্তনসহ শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণ করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য দ ধ পর ধ দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল গংদের বিচারের দাবিতে শহরে মানববন্ধন  

ভূমিদস্যু, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর, পলাতক সাবেক পুলিশের ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক, খোরশেদ আলম, মোরশেদ আলম বাবু ও আরিফুর রহমানের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৬ আগষ্ট) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ১৪নং ওয়ার্ডবাসীর ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় মানববন্ধনে বক্তৃতারা বলেন, আমাদের পৈত্রিক বসতবাড়ি নারায়ণগঞ্জ শহরের ১৪নং ওয়ার্ডস্থ ১৮৫/০১ বি.বি. রোডস্থ ২৭ শতাংশের (৫ তলা) বাড়ী থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা বাড়িতে থাকতে পারছি না। প্রতিবেশী ভূমিদস্যু গং অবৈধ দখলের জন্য পায়তারা করছে কৌশলে।

বিগত আওয়ামী লীগের আমলে পুলিশের ডিআইজি পোস্ট কে পুঁজি করে ভূমিদস্যু, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর, পলাতক সাবেক পুলিশের ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক গং ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোর পূর্বক অনাধিকার প্রবেশ করে আমাদের পৈত্রিক বসতবাড়ি থেকে আমাদের স্ব পরিবারে তাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া সেই সময় আমাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি প্রদান করে ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল গং এর খোরশেদ আলম, মোরশেদ আলম বাবু, আরিফুর রহমান প্রমুখ। 

আমরা এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী মামলা নং২৬৮/২১ এবং ৪৫৪/২৩ দুটি রুজু করার পরও নিজ বাড়ীতে ফিরতে পারছি না। বর্তমানে মামলা দুটি বিচারাধীন রয়েছে। তাছাড়া উপরোক্ত ভূমিদস্যু গং বিভিন্ন সময় আমাদের নিরীহ পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট কারন উল্লেখ করে থানায় জিডি ও অভিযোগ দায়ের করে হয়রানি করে আসছে। 

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী নিরীহ পরিবারের দাবী ভূমিদস্যুদের অবৈধ দখল থেকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাব-১১, সেনাবাহিনী ও গণমাধ্যমের সহযোগিতায় আমাদের পৈত্রিক বাড়ি দখল মুক্ত করা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এসময় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, নালিশা বাড়ির প্রকৃত মালিক মৃত হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া চাঁন মিয়ার পুত্র মোমেনুর রহমান, আমিনুর রহমান, মামুনুর রহমান, কন্যা শামীমা কামাল রানী, ফাতেমা ইয়াসমিন ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর কৃষক দলের ক্রীড়া সম্পাদক মো. রানা সহ ১৪নং ওয়ার্ডের জনসাধারণ।

জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৬ হাজার কোটিরও বেশি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক। অন্যের জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার ওপরে। সম্প্রতি মোজাম্মেল হক, তার স্ত্রী ও সন্তানের নামে থাকা জমি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল গংদের বিচারের দাবিতে শহরে মানববন্ধন  
  • একাত্তরের গণহত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের বিক্ষোভ
  • ’৭১-কে ’২৪-এর মুখোমুখি না দাঁড় করানোর আহ্বান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
  • ফিলিস্তিনিদের হাতের মুঠোয় আনতেই কি স্বীকৃতির কথা সামনে আনা হচ্ছে