চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের
Published: 6th, August 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের ঘটনাকে ‘একাত্তরের শহীদদের অবমূল্যায়নের ঘৃণ্য অপচেষ্টা’ ও ‘একাত্তরের লাখো শহীদের রক্তের প্রতি এবং জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান’ বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে সংগঠনটি।
বুধবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী ও গণহত্যার দায়ে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনকে ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করানোর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছে তারা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের ওপর গণহত্যার দায়ে চিহ্নিত অপরাধীদের ছবি দিয়ে জুলাই উদ্যাপন করা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকলেও একাত্তরের গণহত্যার দায় প্রশ্নাতীত।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে প্রক্টর কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের প্রতিবাদের মুখে প্রক্টরিয়াল টিম ধীরগতিতে ওই ছবি সরায়। তবে কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, ছবিগুলো সরানোর সময় কিছু ব্যক্তি উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং ঘটনাটিকে ‘ছাত্রদের মব অ্যাকশন’ হিসেবে প্রচার করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্রতিবাদের সময় এক ব্যক্তি জুম করে নারী শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করছিল। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা টের পেয়ে ওই ব্যক্তির মোবাইল কেড়ে নেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ইসলামী ছাত্র শিবিরের চৌমুহনী কচুয়া গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। অথচ ৫ আগস্ট উপলক্ষে বাইরের শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এমন অবস্থায় বহিরাগতরা কীভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
অতীতের নানা ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছর থেকে প্রশাসনের শৈথিল্যের কারণে তোফাজ্জল ও সাম্য হত্যাকাণ্ড, শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলা, চারুকলায় মোটিফে আগুন লাগানো, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আমলে না নেওয়াসহ একাধিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
বিবৃতিতে সংগঠনটি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অঙ্গীকার করতে হবে, তারা ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে না; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশনা জারি করতে হবে; গত এক বছরে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত একাধিক ঘটনার দায়ে দায়িত্বে ব্যর্থ প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে; ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারীদের হয়রানির সঙ্গে জড়িত সংগঠন ও সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে; ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে স্থায়ী উদ্যোগ নিতে হবে এবং স্মৃতি-চিরন্তনসহ শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য দ ধ পর ধ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও অনাহারে নিহতের মোট সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৩৮৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬২ জনে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে অবরুদ্ধ নগরীতে আহতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জনে পৌঁছেছে।
আরো পড়ুন:
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন
বিদেশে অবস্থানরত হামাস নেতাদের ওপর আরো হামলার ইঙ্গিত নেতানিয়াহুর
মন্ত্রণালয়ের আরো জানিয়েছে, নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে ৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। এতে করে গত ২৭ মে থেকে মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ কেন্দ্র থেকে সাহায্য নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ২ হাজার ৫০৪ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আরো ১৮ হাজার ৩৮১ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে গাজা উপত্যকায় সব ধরনের আন্তর্জাতিক জরুরি সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। যা গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দার জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দুর্ভিক্ষ, ব্যাপক রোগব্যাধি দেখা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো ভেঙে পড়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে গাজায় দুর্ভিক্ষে মোট মৃতের সংখ্যা ৪৩২ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১৪৬ জন শিশু রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
জাতিসংঘ বলছে, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
ঢাকা/ফিরোজ