ঢাবিতে বিক্ষোভে মেয়েদের ভিডিও করার সময় কলেজছাত্র আটক
Published: 7th, August 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি প্রদর্শনের প্রতিবাদ চলাকালে মেয়েদের ভিডিও করার অভিযোগে এক কলেজছাত্রকে আটক করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে সোপর্দ করা হয়। কবি নজরুল সরকারি কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে আটকের সময় ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। প্রক্টরের উপস্থিতিতে ওই কলেজছাত্রের মুঠোফোন ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি উসামা বিন লাদেনসহ কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তির পোস্ট শেয়ার করেছেন। ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘ইসলামী ছাত্রশিবির, চৌমুহনী কচুয়া’ নামের একটি গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রক্তবীজ অর্ক বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে টিএসসিতে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ দেখি এক লোক মেয়েদের দিকে মোবাইল তাক করে জুম করে ইনঅ্যাপ্রোপিয়েট (অশোভন) ভিডিও করছে। আশপাশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই লোকটি দৌড় দিয়ে সোজা টিএসসির ভেতরে ঢুকে পড়েন। আমরাও পেছনে যেতে চাই। কিন্তু পরে দেখি, সেখানে গুপ্ত সংগঠনের কিছু ছোট ছোট টিম আমাদের টিএসসির ভেতর ঢুকতে দিচ্ছে না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অর্ক লিখেন, ‘প্রায় ৪ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি মোট ৬ বার নিজের নাম বদলায়, ৪টিরও বেশি ফেসবুক আইডি দেখায়।’
ছাত্রশিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে ওই কলেজছাত্রকে আড়াল করার অভিযোগ তুলে অর্ক তাঁর পোস্টে আরও লিখেন, ‘প্রক্টর স্যার ওই ব্যক্তির মেসেঞ্জারে দেখলেন, “ইসলামী ছাত্রশিবির- চৌমুহনী কচুয়া” গ্রুপে সে একেবারে অ্যাকটিভ সদস্য। ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রশিবিরের লোকজন তাকে আড়াল করতে গেল কেন?’
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিয়ান ফারুক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘নারী নিপীড়কদের শেল্টার (আশ্রয়) দেয় কারা? টিএসসিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। এই প্রতিবাদের বিপরীতে টিএসসির গেইটের মুখে শিবিরেরাও স্লোগান দিতে থাকে। এমন এক মুহূর্তে শিবিরের এক কর্মী আমাদের প্রতিবাদের ভেতর চলে এসে নারীদের আপত্তিকর ভিডিও নিতে শুরু করে। ধরা পড়ার পর সে জোরপূর্বক পালিয়ে যায়। পালিয়ে শিবিরের মিছিলে ঢুকে পড়ে এবং টিএসসির ভেতর শেল্টার নেয়।’
ওই ব্যক্তিকে আটক করতে গেলে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বাধা দেন অভিযোগ করে নাহিয়ান ফারুক আরও লিখেন, ‘একজন অপরাধীকে তারা টিএসসিতে ঢুকতে দিলেও, আমাদেরকে টিএসসিতে ঢুকতে বারবার বাধা দেয়। আমরা জোরপূর্বক ভেতরে যাই এবং প্রক্টরসহ শিবিরের ফরহাদের (ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ) সাথে কথা হয়। ঐ ঘটনার পর সেই হ্যারাসার (নিপীড়ক) ধরা পড়ে।’
প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেটা কবি নজরুল কলেজে পড়ে, চাঁদপুরে বাড়ি। আমার কাছে একটু বেকুব টাইপের মনে হয়েছে। তবে ইসলামিক এটা বোঝা যায়। আমি তখন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদেরকেও বলেছি, আমার কাছে দুটো অপশন— হয় পুলিশে দেওয়া, না হয় অভিভাবকসহ মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া।’
প্রক্টর আরও জানান, ‘পরে ওর দুজন মামাতো ভাই ও একজন ছোটবেলার বন্ধু আসে। আমরা প্রাথমিকভাবে মুচলেকা নিয়েছি। ওর ছবি নিয়েছি আর ফোন রেখে দিয়েছি। ওর মুচলেকার কপি চাঁদপুর, শাহবাগ ও চকবাজারের (সে যেখানে থাকে) থানায় পাঠাব এবং জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা হবে। পরে যদি এমন কোনো কিছু করে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ সরাসরি ব্যবস্থা নেবে।’ তাঁর পরিবারের সদস্যরা এসে তাঁকে নিয়ে গেছেন বলেও জানান প্রক্টর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট এসস ত ট এসস র ফ সব ক র ভ তর সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করে নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ ১৭ বছর আন্দোলন করেছে কিন্তু ভোটের জন্য। এই ভোট এই সরকারের কাছ থেকে আমরা আদায় করেই ছাড়ব। সরকারের পেছনে, সরকারের ভেতরে–বাইরে যতই ষড়যন্ত্র চলুক, কোনো ষড়যন্ত্রকেই বিএনপি অপ্রতিরুদ্ধ মনে করে না।’
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে এক অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও আমার না বলা কথা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল।
গত বছর গণ-অভ্যুত্থান না হলে অন্য কোনো মাসে বিএনপির আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হতো বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘যদি জুলাই-আগস্ট না হতো আরেকটা মাসে হয়তো বিএনপি আন্দোলন করে সরকারকে ফেলে দিত।’
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে বিএনপি ঘোষণা দিতে পারলে সেদিনই সরকারের পতন হয়ে যেত উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকারের পতন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। চক্রান্তের কারণে সেদিন সেটা হয়নি। সেই দিন যে জনসমাবেশ হয়েছিল, ওই সমাবেশ থেকে যদি ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে এই সরকার থাকে না।’ তবে পুলিশের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
জুলাই সনদসহ অনেক কিছুতে বিএনপি ছাড় দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কালকে একজন বলছেন যে যদি এইটা না হয়, যদি ওইটা না হয়, তাহলে নির্বাচন হবে না, নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এক ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে আরেক ফ্যাসিবাদকে আনব না। আমরা তো তাই বলছি। এক ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে আরেক ফ্যাসিবাদ আমরাও আনতে চাই না। আমরাও প্রতিরোধ করব।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি আসার সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছিলাম যে বিএনপিকে এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে বলছে হাসিনা গিয়েছে যেই পথে, তারেক যাবে সেই পথে। এটা কোনো রাজনৈতিক স্লোগান নয়। দেশকে সুসংগঠিত রাখার স্লোগান নয়। এটা গণতান্ত্রিক ঐক্যকে বজায় রাখার স্লোগান নয়।'
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ইঙ্গিত করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনারা যে কথাবার্তা আজকে বলছেন আমার মনে হয়, সরকারের মুখপাত্র হয়ে আপনার কথাগুলো বলছেন। আপনাদের বয়স, আপনাদের যে মেধা, আপনাদের অভিজ্ঞতা তাতে আমার মনে হয় না এই সমস্ত কথাগুলো আপনাদের মুখ দিয়ে আসছে কিংবা আপনাদের মাথা থেকে আসছে। এটা অন্যজনের প্ররোচিত কথাবার্তা আপনারা বলছেন, এতে কোনো লাভ হবে না।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ, যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়ন প্রমুখ।
এ ছাড়া জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ যুবদলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চারজন, ২০১৫ সালে গুমের শিকার একজন আইনজীবী এবং যুবদলের রাজনীতি করেন এমন একজন চিকিৎসক বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, দলের চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিনসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন যুবদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা।
এর আগে বেলা সাড়ে তিনটায় যুবদল সভাপতির সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত যুবদলের নেতা-কর্মীদের তথ্য তুলে ধরা হয়। পরে একটি থিম সং পরিবেশনের পাশাপাশি যুবদলের আয়োজনে সম্প্রতি ঢাকার ছয়টি স্থানে অঙ্কিত গ্রাফিতির ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুবদলের ৭৮ জন নেতা, কর্মী ও সমর্থক শহীদ হয়েছেন। আজ তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও আর্থিক অনুদান তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতারয় বিজয়ীদেরও হাতেও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।