Prothomalo:
2025-08-09@01:00:12 GMT

সুরা আর-রহমান: সারকথা ও ফজিলত

Published: 9th, August 2025 GMT

সুরা আর-রহমান কোরআনের ৫৫তম সুরা। মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে একে মাদানি সুরা বলা হয়। এতে ৭৮টি আয়াত রয়েছে। এই সুরা আল্লাহর অসীম রহমত, তাঁর সৃষ্টির মহিমা এবং মানুষ ও জিনের প্রতি তাঁর অগণিত নিয়ামতের কথা তুলে ধরেছে।

এতে মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এবং তাঁর শাস্তির বিষয়ে সতর্ক থাকতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুরাটির বারবার পুনরাবৃত্ত আয়াত ‘ফাবিআইয়ি আলাই রাব্বিকুমা তুকাজজিবান’ (তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?) মানুষের অন্তরে গভীর প্রভাব ফেলে।

সুরা আর-রহমানের প্রথম কয়েকটি আয়াত: ১.

আর-রহমান, ২. আল্লামাল কোরআন, ৩. খালাকাল ইনসান, ৪. আল্লামাহুল বায়ান ও ৫. আশ-শামসু ওয়াল কামারু বিহুসবান।

এর অর্থ: পরম করুণাময়। তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁকে বাক্‌শক্তি শিখিয়েছেন। সূর্য ও চাঁদ নির্দিষ্ট গণনা অনুসারে চলে।

সুরা আর-রহমানের সারকথা

সুরা আর-রহমানে আল্লাহর অসীম করুণা ও তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়কর সৌন্দর্য বর্ণনা করা হয়েছে। এতে মানুষ ও জিনকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাদেরকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুরাটির মূল বিষয়বস্তু নিম্নরূপ—

আল্লাহর নিয়ামত: সুরাতে রয়েছে কোরআন শিক্ষা, মানুষের সৃষ্টি, বাক্‌শক্তি, সূর্য-চাঁদের নিয়মিত চলাচল, প্রকৃতির ভারসাম্য, সমুদ্র, ফল-ফসল, জান্নাতের সৌন্দর্য ইত্যাদিসহ আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের কথা।

কৃতজ্ঞতার আহ্বান: ‘তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?’ আয়াতটি ৩১ বার পুনরাবৃত্তি করে মানুষকে আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি সচেতন করা হয়েছে।

জান্নাত ও জাহান্নাম: সুরাতে জান্নাতের দুটি বাগান ও এদের সৌন্দর্য এবং জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা আছে, যা মানুষকে পুণ্যের পথে চলতে ও পাপ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহ দেয়।

আল্লাহর মহিমা: সুরাতে আল্লাহর মহত্ত্ব, ক্ষমতা এবং করুণার কথা বর্ণিত হয়েছে, যেমন ‘তাঁর মুখ ব্যতীত সবকিছু ধ্বংসশীল।’

(আয়াত ২৬-২৭) (তাফসির মা’আরিফুল কোরআন, মুফতি শফি উসমানী, পৃষ্ঠা: ৬/৩৪৫-৩৫৫, মাকতাবাতুল আশরাফ: ২০১০)

আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের সার কথা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সুরা আর-রহমানের শিক্ষা

সুরা আর-রহমান মানুষকে নিম্নলিখিত শিক্ষা দেয়:

আল্লাহর রহমত: আল্লাহর করুণা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে এবং তিনি মানুষ ও জিনের জন্য অগণিত নিয়ামত দিয়েছেন।

কৃতজ্ঞতা: মানুষের উচিত আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং তাঁর ইবাদত করা।

আখিরাতের স্মরণ: জান্নাতের সৌন্দর্য ও জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা মানুষকে পুণ্যের পথে চলতে উৎসাহ দেয়।

ভারসাম্য: প্রকৃতি ও সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর নির্ধারিত ভারসাম্য মানুষের জন্য শিক্ষণীয়।

সুরা আর-রহমানের ফজিলত

সুরা আর-রহমানের ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘সুরা আর-রহমান পড়ে মানুষ যদি আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তবে তা তার জন্য উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩১৬৪)

এই সুরা মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভয় জাগায় এবং তাঁর নিয়ামতের প্রতি সচেতন করে।

আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের ফজিলত৩০ জুন ২০২৫পাঠ নির্দেশিকা

সুরা আর-রহমানের পাঠ ও এর বাণী আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে কিছু ব্যবহারিক প্রয়োগ দেওয়া হলো:

নিয়মিত পাঠ: সুরা আর-রহমান প্রতিদিন বা সপ্তাহে একবার পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এটি মানসিক শান্তি দেয় এবং আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়ায়।

প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি: এই সুরা পড়ার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির সৌন্দর্য, যেমন সূর্য-চাঁদ, সমুদ্র, গাছপালার প্রতি আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা উপলব্ধি করতে পারি।

কৃতজ্ঞতার অভ্যাস: প্রতিদিন সুরাটির বাণী স্মরণ করে খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্য, পরিবার ইত্যাদি নিয়ামতের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।

শিক্ষাদান: পরিবারের অন্য সদস্যদের এই সুরা মুখস্থ করানো এবং এর অর্থ বোঝানো, যাতে তারা আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা শিখতে পারে।

সুরা আর-রহমান অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি সুরা। এই সুরা নিয়মিত পাঠ পড়া ও এর বাণী অনুসরণ আমাদের জীবনে মানসিক শান্তি, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর রহম ন র র স ন দর য প রক ত র জন য এই স র উৎস হ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

সুরা আর-রহমান: সারকথা ও ফজিলত

সুরা আর-রহমান কোরআনের ৫৫তম সুরা। মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে একে মাদানি সুরা বলা হয়। এতে ৭৮টি আয়াত রয়েছে। এই সুরা আল্লাহর অসীম রহমত, তাঁর সৃষ্টির মহিমা এবং মানুষ ও জিনের প্রতি তাঁর অগণিত নিয়ামতের কথা তুলে ধরেছে।

এতে মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এবং তাঁর শাস্তির বিষয়ে সতর্ক থাকতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুরাটির বারবার পুনরাবৃত্ত আয়াত ‘ফাবিআইয়ি আলাই রাব্বিকুমা তুকাজজিবান’ (তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?) মানুষের অন্তরে গভীর প্রভাব ফেলে।

সুরা আর-রহমানের প্রথম কয়েকটি আয়াত: ১. আর-রহমান, ২. আল্লামাল কোরআন, ৩. খালাকাল ইনসান, ৪. আল্লামাহুল বায়ান ও ৫. আশ-শামসু ওয়াল কামারু বিহুসবান।

এর অর্থ: পরম করুণাময়। তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁকে বাক্‌শক্তি শিখিয়েছেন। সূর্য ও চাঁদ নির্দিষ্ট গণনা অনুসারে চলে।

সুরা আর-রহমানের সারকথা

সুরা আর-রহমানে আল্লাহর অসীম করুণা ও তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়কর সৌন্দর্য বর্ণনা করা হয়েছে। এতে মানুষ ও জিনকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাদেরকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুরাটির মূল বিষয়বস্তু নিম্নরূপ—

আল্লাহর নিয়ামত: সুরাতে রয়েছে কোরআন শিক্ষা, মানুষের সৃষ্টি, বাক্‌শক্তি, সূর্য-চাঁদের নিয়মিত চলাচল, প্রকৃতির ভারসাম্য, সমুদ্র, ফল-ফসল, জান্নাতের সৌন্দর্য ইত্যাদিসহ আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের কথা।

কৃতজ্ঞতার আহ্বান: ‘তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?’ আয়াতটি ৩১ বার পুনরাবৃত্তি করে মানুষকে আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি সচেতন করা হয়েছে।

জান্নাত ও জাহান্নাম: সুরাতে জান্নাতের দুটি বাগান ও এদের সৌন্দর্য এবং জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা আছে, যা মানুষকে পুণ্যের পথে চলতে ও পাপ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহ দেয়।

আল্লাহর মহিমা: সুরাতে আল্লাহর মহত্ত্ব, ক্ষমতা এবং করুণার কথা বর্ণিত হয়েছে, যেমন ‘তাঁর মুখ ব্যতীত সবকিছু ধ্বংসশীল।’

(আয়াত ২৬-২৭) (তাফসির মা’আরিফুল কোরআন, মুফতি শফি উসমানী, পৃষ্ঠা: ৬/৩৪৫-৩৫৫, মাকতাবাতুল আশরাফ: ২০১০)

আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের সার কথা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সুরা আর-রহমানের শিক্ষা

সুরা আর-রহমান মানুষকে নিম্নলিখিত শিক্ষা দেয়:

আল্লাহর রহমত: আল্লাহর করুণা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে এবং তিনি মানুষ ও জিনের জন্য অগণিত নিয়ামত দিয়েছেন।

কৃতজ্ঞতা: মানুষের উচিত আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং তাঁর ইবাদত করা।

আখিরাতের স্মরণ: জান্নাতের সৌন্দর্য ও জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা মানুষকে পুণ্যের পথে চলতে উৎসাহ দেয়।

ভারসাম্য: প্রকৃতি ও সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর নির্ধারিত ভারসাম্য মানুষের জন্য শিক্ষণীয়।

সুরা আর-রহমানের ফজিলত

সুরা আর-রহমানের ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘সুরা আর-রহমান পড়ে মানুষ যদি আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তবে তা তার জন্য উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩১৬৪)

এই সুরা মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভয় জাগায় এবং তাঁর নিয়ামতের প্রতি সচেতন করে।

আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের ফজিলত৩০ জুন ২০২৫পাঠ নির্দেশিকা

সুরা আর-রহমানের পাঠ ও এর বাণী আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে কিছু ব্যবহারিক প্রয়োগ দেওয়া হলো:

নিয়মিত পাঠ: সুরা আর-রহমান প্রতিদিন বা সপ্তাহে একবার পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এটি মানসিক শান্তি দেয় এবং আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়ায়।

প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি: এই সুরা পড়ার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির সৌন্দর্য, যেমন সূর্য-চাঁদ, সমুদ্র, গাছপালার প্রতি আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা উপলব্ধি করতে পারি।

কৃতজ্ঞতার অভ্যাস: প্রতিদিন সুরাটির বাণী স্মরণ করে খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্য, পরিবার ইত্যাদি নিয়ামতের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।

শিক্ষাদান: পরিবারের অন্য সদস্যদের এই সুরা মুখস্থ করানো এবং এর অর্থ বোঝানো, যাতে তারা আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা শিখতে পারে।

সুরা আর-রহমান অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি সুরা। এই সুরা নিয়মিত পাঠ পড়া ও এর বাণী অনুসরণ আমাদের জীবনে মানসিক শান্তি, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ