খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মুন্ডাদের দেড় হাজারের বেশি পরিবার। নিজেদের পরিচয়ে গর্বিত এই জনগোষ্ঠীর গ্রামীণ সংস্কৃতির বড় আয়োজন ছিল কারাম উৎসব। একসময় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকঢোল, করতাল আর মাদল তালে মেতে উঠতেন মুন্ডা তরুণ-তরুণীরা। হতো নাচ–গান, পূজা ও খাওয়াদাওয়া, যা চলত গভীর রাত পর্যন্ত। এখন সে উৎসব নেই, শুধু গল্প হয়ে বেঁচে আছে মানুষের স্মৃতিতে।

এ অবস্থায় আজ ৯ আগস্ট শনিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকে প্রতিবছর আদিবাসীদের অধিকার, সম্মান ও সংস্কৃতি রক্ষায় এদিন পালন করা হয়।

কয়রার নলপাড়া গ্রামের নমিতা রানী মুন্ডা এখনো আশায় বুক বাঁধেন, হয়তো কোনো এক ভোরে আবার কারাম উৎসব ফিরবে। তাঁর ভাঙা ঘরের বারান্দায় বসে কারাম উৎসবের কথা তুলতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘২০০৯ সালের আইলার আগেই শেষবার হইছিল। এরপর আর হয়নি। কারামগাছই তো নেই, উৎসব হবে কীভাবে?’

কারামগাছ—যেটাকে স্থানীয়ভাবে খিলকদম বলা হয়। এই গাছের ডাল ছাড়া কারাম উৎসব অপূর্ণ। মুন্ডারা বিশ্বাস করেন, এই গাছের ডালে লুকানো আছে সমৃদ্ধি আর মঙ্গল।

সম্প্রতি কয়রা উপজেলার মুন্ডাপাড়ার উঠান থেকে উঠান ঘুরে জানা গেল, গল্পের মতো—কীভাবে এক ঢেউয়ে, এক ঝড়ে হারিয়ে গেছে একটি গোটা উৎসব। তাঁদের কথায়, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বাঁধভাঙা নোনাপানির ঢেউয়ে ডুবে যায় উৎসবের মাঠ, উঠান আর বেদি। জমির লবণাক্ততা এমনভাবে জমে বসে, যে কারামগাছ আর বাঁচে না। মাঝেরপাড়ার পরশুরাম মুন্ডা বলেন, ‘গাছ নাই, উদ্যোগী মানুষও নাই। এই গ্রামের নকুল মুন্ডা বাইচে থাকলি হয়তো উৎসব কুরত। নকুল মুন্ডার ছাওয়ালডাও (ছেলে) বেকার হুয়ি পাড়ি দেছে পাশের দেশ ভারতে।’

কয়রার বতুলবাজার এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্বপন মুন্ডার সঙ্গে। তিনি পেশায় দিনমজুর। ঘরের ছাউনি ঠিক করার ফাঁকে বললেন, ‘আগে কত আনন্দ হইতো! নাচ-গান, খাওয়াদাওয়া। এক রাত এক দিন চইলতো কারাম উৎসব। কিন্তু আইলার পর সব শেষ।’ পাশ থেকে স্ত্রী রেনু বালা মুন্ডা শোনালেন তেতো বাস্তবতা, ‘উৎসব করতে কত টাকা লাগে জানেন? একটু আগে আলু ধার কইরে আনছি, উনি আছে উৎসবের চিন্তায়! গরিবের আবার উৎসব?’

কাটকাটা গ্রামের লক্ষী রানী মুন্ডার শৈশব কেটেছে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে। বিয়ের পর কয়রায় এসে আর দেখেননি সেই উৎসব। তিনি বলেন, ‘বাপের বাড়িতে ছোটবেলায় কত দেখিছি। এখন আর হয় না। শুনিছি উত্তরাঞ্চলের দিকিত্তে কেউ কারামগাছের চারা আইনে এলাকায় লাগাইল, কিন্তু বাঁচানো যায়নি।’

যে জায়গায় কারাম উৎসবের বেদি সাজানো হতো, সেখানে এখন কেবল শূন্যতা। কয়রার মাঝেরপাড়া গ্রামের নকুল মুন্ডার বাড়ি–সংলগ্ন কারাম উৎসবের স্থান। সম্প্রতি তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র ম উৎসব র কয়র র

এছাড়াও পড়ুন:

সুস্থ থাকার মন্ত্রে নানা আয়োজনের ফ্লো ফেস্ট

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার মন্ত্রে আয়োজিত হলো তিন দিনব্যাপী ফ্লো ফেস্ট। এতে ছিল ইয়োগা, নাচ, ধ্যান, গল্প, থিয়েটার, আর্ট, ফিটনেস সেশন ও বই প্রকাশসহ একশর বেশি কার্যক্রম। ফেস্ট ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত।

‘বি ইন ইয়োর ফ্লো’ স্লোগান সামনে রেখে রাজধানীর গুলশান–২ এর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয় এই ফেস্ট। আজ শনিবার ছিল উৎসবের তৃতীয় ও শেষ দিন। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ আয়োজন।

মেলায় ছিল পাঁচটি গ্রাউন্ড—ইয়োগা সালা, মেডিটেশন গার্ডেন, আর্ট সোল জোন, প্লে-গ্রাউন্ড এবং অ্যাম্ফিথিয়েটার। পাঁচটি গ্রাউন্ডই দিনভর ছিল নানা আয়োজনে ব্যস্ত।

ইয়োগা ও ওয়েলনেস উৎসব হিসেবে ইতিমধ্যে আয়োজনটি দেশে জায়গা করে নিয়েছে। ২০২২ সাল থেকে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে এ আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিবছরই এর পরিসর বাড়ছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। সবার জন্য উন্মুক্ত এ আয়োজনে গতকাল অংশ নেন বিপুল দর্শনার্থী।

ফ্লো ফেস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাজিয়া ওমর বলেন, ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে সুন্দর জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সুস্থতার চর্চাকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তোলার জন্য আমাদের এ আয়োজন। আমরা চাই, প্রতিটি মানুষ সুস্থ থাকুক; ওষুধ ছাড়া সুস্থভাবে বাঁচুক।’

শাজিয়া ওমর বলেন, ‘স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা প্রতিবছর একটি ফ্লো ফেস্টের আয়োজন করি। এখানে বিভিন্ন ধরনের ইয়োগা ও মেডিটেশনের প্রশিক্ষকদের আনা হয়। সুস্থতার জন্য প্রয়োজন আমাদের মুভমেন্ট, মেডিটেশন, ক্রিয়েটিভিটি আর কানেকশন।’

মেলায় অ্যাডভেঞ্চারে মেতেছে এক শিশু। রাজধানীর গুলশান-২; ৮ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুস্থ থাকার মন্ত্রে নানা আয়োজনের ফ্লো ফেস্ট
  • নেত্রকোনায় আজ ‘কিচ্ছা উৎসব’
  • কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে শত্রুঘ্ন–মমতা–সৌরভ এক মঞ্চে
  • ‘আলফ্রেড কোভালকোভিস্কি পুরস্কার’ পেলেন হাসানআল আব্দুল্লাহ
  • মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির ১০০ দিন এবং সঙ্গীত ও শিল্পকলা চর্চার গুরুত্ব
  • পদ্মা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ
  • এলাকার নামেই সিনেমা—আবেগে ভাসলেন পাইকগাছার মানুষ
  • মহারাসলীলা উৎসব
  • চোখের সামনে সুন্দর পদ্মপুকুর, আড়ালে নারীর কষ্টের লড়াই
  • স্বপ্ন, সাহস আর নেতৃত্বের উৎসবে অনুপ্রাণিত হলো হাজারো মানুষ