বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছুদিন আগেরও ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত একটি পুরোনো পোস্ট গত জানুয়ারিতে ভারতের সাতারা শহরের পুলিশকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। ২০২৩ সালের সে পোস্টে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতাকে ‘অকেজো’ বা ফালতু (ইউজলেস) বলা হয়েছিল। পোস্টদাতা অ্যাকাউন্টটির অনুসারীর সংখ্যা ছিল কয়েক শ মাত্র।

মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাতারার পুলিশ পরিদর্শক জিতেন্দ্র শাহানে এক্স কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়ে এ পোস্টটি সরিয়ে নিতে বলেন। ‘গোপনীয়’ চিহ্নিত করা নোটিশটিতে তিনি লেখেন, ‘এই পোস্ট ও এর বিষয়বস্তু মারাত্মক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।’

তবে পোস্টটি এখনো বহাল আছে। গত মার্চে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এক্স কর্তৃপক্ষ। মামলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে মোদি প্রশাসনের ঢালাও অভিযানকে চ্যালেঞ্জ করে শত শত পোস্টের নজির দিয়েছে এক্স। এটাও তার মধ্যে আছে।

২০২৩ সাল থেকে ভারত সরকার ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করেছে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কর্মকর্তা কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। গত বছরের অক্টোবরে চালু হওয়া একটি সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাঁরা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে সরাসরি এসব নির্দেশ পাঠাতে পারছেন।

এক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারতের এসব পদক্ষেপ অবৈধ ও অসাংবিধানিক। তাদের অভিযোগ, এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পদদলিত করছে। এগুলোর মাধ্যমে বহু সরকারি সংস্থা এবং হাজারো পুলিশ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে করা ন্যায্য কোনো সমালোচনাও দমন করার ক্ষমতা পাচ্ছেন।

আদালতে দাখিল করা নথিতে ভারত সরকার বলেছে, তাদের এই কৌশল অনলাইনে বেআইনি কনটেন্টের বিস্তার রোধ করছে এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করছে। তারা দাবি করেছে, মেটা এবং অ্যালফাবেটের গুগলসহ অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি ভারতের এসব পদক্ষেপকে সমর্থন করছে। অবশ্য মেটা ও অ্যালফাবেটের কাছে রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ইলন মাস্ক নিজেকে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরম সমর্থক’ বলে থাকেন। তিনি ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কনটেন্ট অপসারণ ও নিয়মনীতি মানা নিয়ে একাধিকবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।

ইলন মাস্ক নিজেকে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরম সমর্থক’ বলে থাকেন। তিনি ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কনটেন্ট অপসারণ ও নিয়মনীতি মানা নিয়ে একাধিকবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।

কিন্তু বিশ্বজুড়েই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা এবং ক্ষতিকর কনটেন্টের ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য খুঁজছে। এই পটভূমিতে কর্ণাটক হাইকোর্টে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মাস্কের করা মামলাটি ভারতে কঠোরভাবে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিকেই আমূল চ্যালেঞ্জ করে। ভারতকে এক্স ব্যবহারকারীদের বড় অঞ্চলগুলোর একটি বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

২০২৩ সালে মাস্ক বলেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি বিশ্বের যেকোনো বড় দেশের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। তিনি বলেছিলেন, মোদি তাঁকে সেখানে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দিয়েছেন।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি মাস্ক আর সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতের কর্তৃপক্ষের মধ্যে নেপথ্যে চলমান লড়াইয়ের এই বিবরণের ভিত্তিতে রয়েছে রয়টার্সের একটি খতিয়ান। রয়টার্স আড়াই হাজার পৃষ্ঠার বেসরকারি (নন-পাবলিক) আইনি দলিল-নথিপত্র পর্যালোচনা করেছে এবং কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধের সঙ্গে যুক্ত সাতজন পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

এই খতিয়ান গোপনীয়তায় ঢাকা একটি কনটেন্ট অপসারণব্যবস্থাকে উন্মোচিত করেছে। এক্সে ‘বেআইনি’ সাব্যস্ত কিছু বিষয় এবং পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সেন্সর করা কনটেন্টের বিস্তৃত ক্ষেত্র সম্পর্কে ভারতীয় কয়েকজন কর্মকর্তার ক্ষোভের হদিস মিলেছে।

নথিপত্র দেখাচ্ছে, পোস্ট সরিয়ে ফেলার আদেশগুলোর মধ্যে ভুল তথ্য ঠেকানোর উদ্যোগও ছিল। কিন্তু মোদি সরকারের নির্দেশে একটি ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনার খবরও মুছে ফেলা হয়েছে। রাজ্য পুলিশ এমন কিছু কার্টুনও মুছে ফেলতে বলেছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে নেতিবাচকভাবে আঁকা হয়েছে অথবা স্থানীয় নেতাদের ব্যঙ্গ করা হয়েছে।

মামলার বিষয়ে এক্স কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকার কারণে তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলবে না। মোদির কার্যালয় এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।

মাস্ক আর মোদির ব্যক্তিগত সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার মতো কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি। প্রকাশ্যে তাঁদের সম্পর্ক বরাবরই উষ্ণ। কিন্তু মুখোমুখি আইনি যুদ্ধ এমন এক সময়ে এল, যখন মাস্ক ভারতে তাঁর মালিকানাধীন কোম্পানি টেসলার তৈরি গাড়ি আর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট–‍সেবা স্টারলিংকের ব্যবসা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

মোদির দল বিজেপির সমর্থকেরাও পুলিশের নজরে এসেছেন। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষমতা প্রয়োগের অনুমতি পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের বার্তা চালাচালি খতিয়ে দেখছেন।

বহু বছর ধরে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ই কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার আদেশ দিতে পারত। কিন্তু সেটা শুধু দেশের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জনশৃঙ্খলা বা দেশের সম্পর্কের জন্য হুমকি থাকলে। ৯৯ জনের মতো কর্মকর্তা কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করতে পারতেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নেওয়াটা মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকত।

বিজেপির নেতা কৌস্তভ বাগচি গত মার্চে এক্সে একটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নভোচারীর পোশাকে দেখানো হয়েছে। এটাকে জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে রাজ্যের পুলিশ এটা সরিয়ে ফেলতে বলেছে।

তবে পোস্টটি এখনো বহাল আছে। বাগচি রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি মজা করে এটা পোস্ট করেছিলেন। তিনি বলছেন, পোস্টটি সরিয়ে ফেলার আদেশের কথা জানেন না। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ও রাজ্য পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে সাড়া পায়নি রয়টার্স।

প্রতিবেদনের শুরুতে ২০২৩ সালের যে পোস্টের কথা বলা হয়েছে, সেটি সরিয়ে ফেলার আদেশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সাতারা পুলিশ কর্মকর্তা জিতেন্দ্র শাহানে রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি ওই পোস্টের অপসারণ আদেশের কথা মনে করতে পারছেন না। তবে তিনি বলেছেন, কখনো কখনো পুলিশ আগেভাগেই প্ল্যাটফর্মগুলোকে আপত্তিকর বা ভাইরাল কনটেন্ট ব্লক করতে বলে রাখে।

ইলন মাস্ক ও নরেন্দ্র মোদি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ কর মকর ত ইলন ম স ক ২০২৩ স ল রয়ট র স ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

আদালতে বাদীকে মারপিট করায় ২ আসামির কারাদণ্ড

মামলায় জামিন পাওয়ার পর মুন্সীগঞ্জের আদালত প্রাঙ্গণে ওই মামলার বাদী জাকিয়া আক্তারকে মারপিট করেছেন আসামি রাইসুল ইসলাম ও শাকিলা আক্তার। পরে রাইসুল ইসলামকে তিন দিনের এবং শাকিলা আক্তারকে দুই দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশীকুর রহমান তাদেরকে এ দণ্ড দেন।

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় আদালত চত্বর থেকে পালানো আসামি গ্রেপ্তার

বগুড়ায় আদালত চত্বর থেকে জোড়া খুনের আসামির পলায়ন

সাজাপ্রাপ্ত রাইসুল ইসলাম (৩০) মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বড় রায়পাড়া গ্রামের ইসমাইলের ছেলে এবং শাকিলা আক্তার (৩২) একই উপজেলার বালুয়াকান্দি গ্রামের ইন্দিরা আলীর মেয়ে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গজারিয়া উপজেলার বড় রায়পাড়া গ্রামের জগির মিয়ার মেয়ে জাকিয়া আক্তার (২৯) বাদী হয়ে শাকিলা আক্তারসহ পাঁচজনের নামে গজারিয়া আমলি আদালতে মামলা করেন (সিআর মামলা নং ১১৩/২৫)। ওই মামলায় আসামিরা সমন পেয়ে মঙ্গলবার স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে শুনানি শেষে তাদেরকে জামিন দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাদী জাকিয়া আক্তার আদালত প্রাঙ্গণে গেলে সেখানে আসামি শাকিলা ও রাইসুল ইসলাম তাকে মারপিট করেন। আদালতে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যরা এসে বাদীকে উদ্ধার করেন। শাকিলা ও রাইসুলকে ফের আদালতে নিলে বিচারক মো. আশীকুর রহমান তাদেরকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী রাজিব বর্মন সাংবাদিকদেরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা/রতন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ