‘গণহত্যার বিচার না হলে আবারও ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে’
Published: 9th, August 2025 GMT
শহীদদের হত্যার বিচার না হলে পরবর্তী সময়ে নতুন সরকারকেও ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হবে। এ সরকার আসলে বুঝতে পারেনি—পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ কত ভারী। ‘জুলাই জাগরণী’ সমাবেশে কথাগুলো বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সারা দেশে জুলাই গণহত্যার বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবি সামনে রেখে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার সমাপনী সমাবেশ ‘জুলাই জাগরণী’ আয়োজন করা হয়।
বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত হয় এ সমাবেশ। এতে উপস্থিত হন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা–কর্মী ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও এতে অংশ নেন।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নানা ধরনের বিপদে আছে। আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে এক বছর পরও শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা হয়নি। শহীদ ও আহতদের পরিবার অবহেলিত হচ্ছে। অথচ সরকারের দায়িত্ব ছিল পরিবারগুলোর যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা।
যে বৈষম্যের জন্য আমাদের সন্তানেরা জীবনটা দিল, তার কি নিরসন হয়েছে? যাঁরা ক্ষমতায় বসেছেন, তাঁদের উচিত ছিল, হত্যাকাণ্ডের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া। —শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবাআনু মুহাম্মদ বলেন, যেসব মামলা দায়ের হয়েছে, সেখানে ত্রুটি থাকছে। সরাসরি যাঁরা হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এ সরকার আসার পর দেশ থেকে পালিয়েছেন। পাইকারি মামলা করায় মামলা আরও দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড় পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষায় আন্দোলন হয়েছিল, তার বাস্তবায়িত হয়নি।
সমাবেশে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘যে বৈষম্যের জন্য আমাদের সন্তানেরা জীবনটা দিল, তার কি নিরসন হয়েছে? যাঁরা ক্ষমতায় বসেছেন, তাঁদের উচিত ছিল, হত্যাকাণ্ডের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া।’
শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য আমার ছেলে জীবন দিয়েছে। অথচ সরকারের সেদিকে (ফ্যাসিবাদের অবসান) যাত্রা দেখছি না।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেত্রী দীপা মজুমদার বলেন, আন্দোলনে নিহত শ্রমিক ও নারীদের খবর রাখা হয় না। বিচারপ্রক্রিয়ার ভেতরে রয়েছে ফাঁক। তিনি আরও বলেন, যতবার ফ্যাসিবাদ আসবে, ততবারই এ দেশের মানুষ জেগে উঠবে। প্রয়োজনে প্রাণ দেবে।
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ‘অভ্যুত্থানে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। কিন্তু এখন নারীবিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, নারী নিপীড়ন চলছে। নারীদের যথাযথ সুযোগ ও মর্যাদা না দিয়ে বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদের বিলোপ সম্ভব নয়।’
আলোচনা শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর দ্বিতীয় পর্বে। শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানসহ একক সংগীত পরিবেশন করেন কয়েকজন শিল্পী।
শহীদদের বাবা–মায়ের হাতে স্মারক তুলে দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা সালমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আয়োজিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান।
আয়োজনের শুরুতেই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই গণ পর ব র হত য র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ ৩৭ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘গাজায় গণহত্যার’ অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্ক।
শনিবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আরো পড়ুন:
আরো ৩ ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিল হামাস
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় হামলা, ৭৫ শতাংশ ত্রাণ প্রবেশে বাধা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই খবর জানানো হয়।
এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তালিকায় মোট ৩৭ জন সন্দেহভাজন রয়েছেন। যদিও ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের বিবৃতিতে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি, তবে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির এবং সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির।
তুরস্ক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ করার অভিযোগ এনেছে, যা ইসরায়েল ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ‘পরিকল্পিতভাবে’ চালিয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েল তুরস্কের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের ‘রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ বা পিআর কৌশল’।
তিনি বলেন, “ইসরায়েল অত্যাচারী এরদোগানের সর্বশেষ জনসংযোগ স্টান্টকে ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছে।”
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস তুরস্কের পদক্ষেপকে ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। হামাস এক বিবৃতিতে “এটিকে তুর্কি জনগণ এবং তাদের নেতাদের আন্তরিক অবস্থানের (প্রশংসনীয়) পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে, যারা ন্যায়বিচার, মানবতা এবং ভ্রাতৃত্বের মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা তাদেরকে আমাদের নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে আবদ্ধ করে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় ‘যুদ্ধাপরাধ’-এর অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার প্রায় এক বছর পর তুরস্কের এই ঘোষণা এসেছে।
গত বছর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলায় তুরস্কও যোগ দিয়েছে।
গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৬৮ হাজার ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ