চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ১০১তম জন্মদিন আজ
Published: 10th, August 2025 GMT
বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ১০১ তম জন্মদিন আজ। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার ডাক নাম ছিলো ‘লাল মিয়া’।
দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা এস এম সুলতান ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন তিনি। মাঝে মাঝে ছবি আঁকতেন। ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায়ই জমিদার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন। তার এই কীর্তিতে মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রসাদসহ নড়াইলের তৎকালীন জমিদাররা।
১৯৩৮ সালে এস এম সুলতান চলে যান কলকাতায়। সেখানে চিত্রসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। একাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বে সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ১৯৪৩ মতান্তরে ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মিরের পাহাড়ে উপ-জাতিদের সঙ্গে বসবাস করেন। তিনি তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন।
১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোরেও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ। ১৯৫০ সালে চিত্র শিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে
পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যান এস এম সুলতান।
এরপর ইউরোপে কয়েকটি একক ও যৌথ প্রর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এ সময় পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লিসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের ছবির পাশে এস এম সুলতানের ছবি স্থান পায়।
১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন এস এম সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দ্যা ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’। অবশ্য অনেক আগেই স্বপ্নের শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি এবং সুরযন্ত্র বাজাতেও পটু ছিলেন তিনি।
এস এম সুলতান বিষধর সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি পুষতেন।
নিজের কর্মের মূল্যায়ন হিসেবে ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’, ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউ ইয়র্কের
বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার’ লাভ করেন।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান এস এম সুলতান। ‘মাটি ও মানুষের চিত্রশিল্পী’ এস এম সুলতানকে জন্মভূমি নড়াইল শহরের কুড়িগ্রাম এলাকায় সংগ্রহশালা চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এস এম সুলতানের ১০১তম জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার (১০ আগস্ট) পবিত্র কোরআন খতম, শিল্পীর কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/শরিফুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইচ্ছা নেই: মাসুদ পেজেশকিয়ান
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেছেন।
মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, “আমি এই পরিষদের সামনে আবারো ঘোষণা করছি যে ইরান কখনো পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চায়নি এবং কখনো চেষ্টা করবে না। আমরা পারমাণবিক অস্ত্র চাই না।”
২৮শে আগস্ট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য ৩০ দিনের একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ২৭শে সেপ্টেম্বর এই প্রক্রিয়া শেষ হবে। এই তিনটি দেশ তেহরানকে ২০১৫ সালে বিশ্বশক্তিগুলোর সাথে একটি চুক্তি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনেছে যার লক্ষ্য ছিল পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা।
ইরান যদি জাতিসংঘের পারমাণবিক পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার পুনরায় অনুমোদন করে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ নিয়ে উদ্বেগ দূর করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় অংশ নেয় তবে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য জায়গা করে দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় শক্তিগুলো নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল ছয় মাস পর্যন্ত বিলম্বিত করার প্রস্তাব দিয়েছে।
পেজেশকিয়ান ইউরোপীয় শক্তিগুলোর এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে’ করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার ইউরোপীয় মিত্র এবং ইসরায়েল তেহরানকে অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা বিকাশের প্রচেষ্টার আবরণ হিসেবে তার পারমাণবিক কর্মসূচি ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে। ইরান দাবি করেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে।
পেজেশকিয়ান বলেছেন, “এটি করে তারা সৎ বিশ্বাসকে একপাশে রেখে গেছে। তারা আইনি বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে গেছে। তারা ইরানের আইনসম্মত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাগুলোকে ... গুরুতর লঙ্ঘন হিসাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে।”
ঢাকা/শাহেদ