হাসিনা–উত্তর বাংলাদেশে এক বছর পর উল্লাস, সামনে কঠিন পথ
Published: 10th, August 2025 GMT
এই সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ ঢাকার কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের বার্ষিকী উদ্যাপন ও দেশের নতুন ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি ঘোষণার জন্য।
মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
সারা দেশে মানুষ জাতীয় পতাকা নাড়িয়ে কনসার্ট, সমাবেশ ও বিশেষ দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। কিছু কর্মী একে বলছেন, এই মুসলিমপ্রধান ১৭ কোটি মানুষের দেশের ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’। কিন্তু এই আনন্দমুখর দৃশ্য গত ১২ মাসের পুরো গল্প নয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ সময়ে গণপিটুনিতে হত্যা, মব বা সংঘবদ্ধ জনতার সহিংসতা, প্রতিশোধমূলক হামলা ও ধর্মীয় চরমপন্থার পুনরুত্থান ঘটেছে, যা গণতন্ত্রের পথে যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এদিকে ক্ষমতা থেকে নাটকীয়ভাবে অপসারিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী ভারতে নির্বাসন জীবন যাপন করছেন। আর সেখান থেকে সব দেখছেন। প্রাণঘাতী দমন–পীড়নে তাঁর ভূমিকা অস্বীকার করছেন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগের মুখোমুখি হতে দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।
নারী অধিকারকর্মী শিরিন হক বিবিসিকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা শাসন পরিবর্তন দেখেছি, বিপ্লব নয়। নারীবিদ্বেষ আগের মতোই আছে, পুরুষের আধিপত্যও চ্যালেঞ্জহীন।’
শিরিন হক অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন। এই কমিশন গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের লক্ষ্য প্রতিফলিত করে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিল।
এ বছরের এপ্রিলে ১০ সদস্যের কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা, নারীর উত্তরাধিকার ও তালাকের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিবাহিত ধর্ষণকে অপরাধ ঘোষণা ও যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষার প্রস্তাব ছিল।
পরের মাসে হাজার হাজার কট্টরপন্থী এই সুপারিশের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। তারা বলে, এসব ইসলামবিরোধী এবং পুরুষ ও নারী কখনো সমান হতে পারে না।
হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিবাদকারীরা নারী কমিশন ভেঙে দেওয়া ও সদস্যদের শাস্তি দেওয়ার দাবি তোলে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে এই হেফাজতে ইসলামের এক প্রতিনিধিও আছেন। এরপর কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আর কোনো প্রকাশ্য আলোচনা হয়নি।
শিরিন হক বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের কাছ থেকে আমরা এত নির্যাতনের শিকার হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের যথেষ্ট সমর্থন দেয়নি।’ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দপ্তর এ অভিযোগে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
কর্মীরা বলছেন, এই প্রতিবাদ কেবল একটি উদাহরণ। হাসিনার সময় চাপে থাকা কট্টরপন্থীরা এখন সাহসী হয়ে উঠেছে। তারা কিছু এলাকায় নারীদের ফুটবল খেলার বিরোধিতা করেছে, নারী তারকাদের বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বন্ধ করতে বলেছে এবং পোশাকের কারণে জনসমক্ষে নারীদের হয়রানি করেছে।
শুধু নারীরাই নয়, গত বছরে তারা সুফি মুসলমানদের মতো সংখ্যালঘুদের অসংখ্য মাজারও ভেঙেছে। শিরিন হকের মতো অনেকেই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। তবে বাংলাদেশ এখনো অতীতের মুখোমুখি।
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনি হত্যা, গুম ও বিরোধী মত দমনে নৃশংসতা চালানোর অভিযোগে ব্যাপক ক্ষোভ আছে।
দীর্ঘদিনের বাংলাদেশ পর্যবেক্ষক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, ‘অনেক মানুষ শুধু জবাবদিহি নয়, প্রতিশোধও দেখতে চেয়েছিল।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলের অন্যায়–অবিচার বহাল রেখে সেটা অনুকরণ করা যাবে না।’
কিন্তু আওয়ামী লীগের দাবি, সেটাই হচ্ছে। তাদের মতে, গত এক বছরে কয়েক শ সমর্থককে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে, যা অন্তর্বর্তী সরকার অস্বীকার করছে।
আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সমর্থক ও সাংবাদিককে খুনের অভিযোগে মাসের পর মাস কারাগারে রাখা হয়েছে। আদালত তাঁদের জামিন বারবার খারিজ করেছেন। সমালোচকেরা বলছেন, এসব অভিযোগের কোনো সঠিক তদন্ত হয়নি এবং কেবল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার কারণে তাঁদের আটক রাখা হয়েছে।
ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম গণবিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি স্বীকার করেন, ‘একটি বড় আন্দোলনের পর স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে সময় লাগে। আমরা এখন পরিবর্তনের পর্যায়ে আছি।’
ইসলামপন্থী প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নাহিদ বলেন, এটি বহু বছরের পুরোনো সাংস্কৃতিক সংগ্রামের অংশ। তবে ইতিবাচক দিকও আছে। অনেকে মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি স্থিতিশীল রেখেছে। আশঙ্কার বিপরীতে ব্যাংক খাত টিকে গেছে।
বাংলাদেশ ঋণ শোধ করেছে, খাদ্যের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রেখেছে এবং রেমিট্যান্স ও আন্তর্জাতিক ঋণের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার বজায় রেখেছে। রপ্তানিও স্থিতিশীল আছে। এ ছাড়া এমন কিছু বিষয় আছে, যা মাপা যায় না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, হাসিনার পতনের পর ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এখন সবাই স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারছে’, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যাকাণ্ড ও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাসে গড়া দেশের জন্য উদ্যাপনের বিষয়। তবে কেউ কেউ এটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছাত্রনেতাদের প্রভাব নিয়ে সমালোচনা আছে। আজও দুই ছাত্রনেতা মন্ত্রিসভায় আছেন এবং সমালোচকদের মতে, আওয়ামী লীগকে সাময়িক নিষিদ্ধ করার মতো সিদ্ধান্ত ছাত্রদের চাপেই নেওয়া হয়েছে।
ডেভিড বার্গম্যান বলেন, ‘সরকার মাঝেমধ্যে ছাত্রদের কিছু জনপ্রিয় দাবি মেনে নিয়েছে। আশঙ্কা ছিল যে অন্যথা বড় ধরনের বিক্ষোভ হতে পারে। তবে এটা নিয়ম নয়, ব্যতিক্রম ছিল।’
এদিকে নির্বাসিত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী আরাফাত বিবিসিকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে না।’ তাঁর অভিযোগ, দলের সমর্থকদের প্রার্থী হতে দেওয়া হচ্ছে না এবং বেশির ভাগ নেতা নির্বাসনে বা কারাগারে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, গত বছরে জনতার সহিংসতা বেড়েছে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যু অব্যাহত আছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারী সরকারকে সরিয়েছি, কিন্তু যদি স্বৈরাচারী চর্চা বন্ধ না করি, তবে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।’
বাংলাদেশ এখন সড়ক বিভাজকে দাঁড়িয়ে। আগামী ছয় মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। অনেকে বলছেন, যদি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থবহ পরিবর্তন না আসে, তবে আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের ত্যাগ অর্থহীন হয়ে যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র ন হক র জন ত ক সরক র র ন তর ব আওয় ম ইসল ম বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘নাটক কম করো পিও’, তিশার উদ্দেশে শাওন
দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোঁচা দিলেন অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন।
‘মুজিব’ সিনেমায় শেখ ফজিলাতুন্নেসা চরিত্রে অভিনয় করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। তার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং শেখ হাসিনাসহ তৎকালীন সময়ের মন্ত্রীদের সঙ্গে তোলা বেশ কয়েকটি ছবি জুড়ে দিয়ে ১০ আগস্ট ফেসবুকে পোস্টটি করেন শাওন।
এই স্ট্যাটাসে অভিনেত্রী শাওন লেখেন, “এই মেয়েটাকে ছোটবেলা থেকে চিনতাম। নতুন কুঁড়িতে আমার ছোট বোনের সঙ্গে একই ব্যাচে ছিল, একই গানের শিক্ষকের কাছে তালিম নিয়েছে। আমার বোন আমাকে আপুনি ডাকে। এই চটপটে মেয়েটাও আপুনি ডাকত। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদে আমার মায়ের সহকর্মী শাহিন মনোয়ারা হক (এমপি) ওর কেমন যেন আত্মীয় ছিল (খুব সম্ভবত খালা)। তখনো প্রায়ই কমন প্ল্যাটফর্মে এই মিশুক মেয়েটার সাথে দেখা হত।”
আরো পড়ুন:
‘আমির আমাকে এক বছর ঘরে বন্দি করে রেখেছিল’
পুণ্যের জন্মদিনে মায়ের প্রার্থনা
কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করে শাওন লেখেন, “আমার পরিচালনায় ‘একলা পাখী’ ধারাবাহিকে অভিনয় করার সময় অনেকটা দিন কাছাকাছি ছিল। এফডিসির কোনো কোনো সভায় দেখতাম তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ‘ইনু মামা ইনু মামা’ ডেকে শ্রদ্ধাভরে বিভিন্ন আবদার করছে। মন্ত্রী মহোদয়ও মেয়েটাকে বেশ স্নেহ করতেন। ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি দেখা হয়নি। দেখার ইচ্ছেও নেই। বাস্তব জীবনে মেয়েটার যে অভিনয় দেখলাম! শখ মিটে গেছে।”
পোস্ট শেষে হ্যাশ ট্যাগে শাওন লিখেছেন, “নাটক কম করো পিও।”
তিশাকে নিয়ে শাওনের এই ফেসবুক পোস্টটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। তবে এ বিষয়ে নুসরাত ইমরোজ তিশা কোনো মন্তব্য করেননি।
ঢাকা/শান্ত