উপহার দেওয়া এবং গ্রহণ করা ইসলামে অত্যন্ত প্রশংসিত এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহের অংশ। এই নিবন্ধে আমরা ইসলামে উপহার দেওয়ার নীতি, এর তাৎপর্য এবং প্রয়োগের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
কোরআনে উপহার দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গিকোরআনে উপহারকে সরাসরি ‘হাদিয়া’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আমাদের জীবনের সবকিছু—সম্পদ, পরিবার, ইমান—আল্লাহর উপহার। এই উপহারগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ কিছু চান না, তবে তাঁর আদেশ ও নিষেধ পালন আমাদের জন্য আরেকটি উপহার, কারণ এগুলো আমাদের জান্নাতের পথে নিয়ে যায়।
নবীজি উপহার গ্রহণ করতেন এবং তার বিনিময়ে কিছু দিতেন।সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৫৩৬কোরআনে বিশেষ করে নবীদের জন্য দেওয়া ‘জ্ঞানের উপহার’ (ইলম) এবং ধার্মিকদের জন্য জান্নাতের নিয়ামতের কথা উল্লেখ আছে। কোরআনে আটটি স্থানে নবী বা জ্ঞানী ব্যক্তিদের জ্ঞান ‘আল্লাহ–প্রদত্ত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৪, সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৯)
এ ছাড়া জান্নাতের পুরস্কারগুলোকে ‘নিয়ামত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা সফফাত, আয়াত: ৪০-৪৮)
আরও পড়ুনবিবাহে মহর, যৌতুক ও উপহার০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮হাদিসে উপহার দেওয়ার বিধানরাসুল (সা.
ইসলামে উপহার দেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন নেই, যেমন জন্মদিন বা বিশেষ উৎসব, যা পশ্চিমা ঐতিহ্য থেকে আলাদা।
প্রস্তাবিত উপহার কী কী?ইসলামে উপহার ব্যবহারিক, উপকারী এবং গ্রহীতার জন্য মূল্যবান হওয়া উচিত। হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো উপহারের সুপারিশ নেই, তবে সুগন্ধি এবং খাবার জনপ্রিয় ছিল। নবীজিকে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি কখনো প্রত্যাখ্যান করেননি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৫৮২)
হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো উপহারের সুপারিশ নেই, তবে সুগন্ধি এবং খাবার জনপ্রিয় ছিল। নবীজিকে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি কখনো প্রত্যাখ্যান করেননি।সুগন্ধি জুমার দিন ও নামাজের আগে ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খাবার উপহার হিসেবে এলে রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করতেন, ‘এটি সদকা না উপহার?’ যদি উপহার হতো, তিনি তা গ্রহণ করতেন; সদকা হলে তা খেতেন না। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৬৫৬)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে মুসলিম নারীরা, তোমরা কেউ যেন প্রতিবেশীকে দেওয়া উপহারকে তুচ্ছ মনে না করো, এমনকি তা যদি ভেড়ার পায়ের মাংসও হয়।’ (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস: ৩০৪)
বোঝা যায় যে উপহারের মূল্য নয়, নিয়ত ও ভালোবাসাই গুরুত্বপূর্ণ।
উপহার দেওয়ার প্রভাব কী?উপহার দেওয়া হৃদয়ের মধ্যে মালিন্য দূর করে এবং সম্পর্ককে দৃঢ় করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন আরেকজনকে উপহার দাও, উপহার হৃদয়ের মধ্যে মালিন্য দূর করে।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২১৩০)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একজন আরেকজনের সঙ্গে উপহার বিনিময় করো, এটি হৃদয়ের ক্রোধ দূর করে।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২১৩০)
উপহার শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা বহন করে, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যেও।
আরও পড়ুনরাসুল (সা.) তাঁকে চাদর উপহার দিলেন০৬ এপ্রিল ২০২৫উপহার দিতে না পারলে কী করবেন?যদি কেউ আর্থিক বা অন্য কারণে উপহার দিতে না পারেন, তবে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি উপহার পায় এবং তার কাছে কিছু ফেরত দেওয়ার থাকে, তবে তা দিক। যদি কিছু না থাকে, তবে তার প্রশংসা করুক এবং তার পক্ষে ভালো কথা বলুক। যে তা করে, সে কৃতজ্ঞতার দায়িত্ব পালন করে। আর যে কৃতজ্ঞতা গোপন করে, সে অকৃতজ্ঞ। আর যে এমন গুণ প্রকাশ করে যা তার নেই, সে দ্বিমুখী প্রতারণার পোশাক পরিধানকারীর মতো।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২০১৬)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে উপহারের মূল উদ্দেশ্য পূরণ করা যায়।
কীভাবে শুরু করবেনউপহার দেওয়া একটি সুন্নত। এই সুন্নতের চর্চার মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দূর করতে এগিয়ে আসতে পারি। আসুন দেখা যাক, কীভাবে উপহার দেওয়ার সুন্নতটি অভ্যাসে পরিণত করতে পারি:
হে মুসলিম নারীরা, তোমরা কেউ যেন প্রতিবেশীকে দেওয়া উপহারকে তুচ্ছ মনে না করো, এমনকি তা যদি ভেড়ার পায়ের মাংসও হয়।রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস: ৩০৪১. ছোট উপহার দিয়ে শুরু করুন: যেমন একটি বই, সুগন্ধি বা খাবার উপহার দিন। এমনকি একটি হাসিও উপহার হতে পারে।
২. নিয়মিত উপহার দিন: বিশেষ দিনের অপেক্ষা না করে প্রতিবেশী, বন্ধু বা আত্মীয়দের ছোট উপহার দিন।
৩. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন: উপহার পেলে ধন্যবাদ জানান এবং গ্রহীতার জন্য দোয়া করুন।
৪. নিয়ত সঠিক রাখুন: উপহার দেওয়ার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সম্পর্ক উন্নতির নিয়ত করুন।
৫. অমুসলিমদের উপহার দেওয়া: অমুসলিম বন্ধুদের উৎসবের সময় উপহার দেওয়া জায়েজ, যদি তা তাদের ধর্মীয় আচারের সমর্থন না করে। এটি সম্পর্ক জোরদার ও দাওয়াহর মাধ্যম হতে পারে।
উপহার দেওয়া ও গ্রহণ করা ভালোবাসা ও ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যম। কোরআন ও হাদিস আমাদের উপহারের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও সম্পর্ক গড়ার গুরুত্ব শেখায়। উপহারের মূল্য নয়, বরং নিয়ত ও ভালোবাসাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও কৃতজ্ঞতা ও ভালো কথার মাধ্যমে উপহারের উদ্দেশ্য পূরণ করা যায়।
আরও পড়ুনপ্রতিবেশীর অধিকার ইমানের মানদণ্ড১৪ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ রহণ করত ন উপহ র র ম উপহ র দ ও গ রহণ কর উপহ র হ র উপহ র আল ল হ র জন য দ র কর আম দ র ইসল ম ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।
পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি এখন সারানো হয়েছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।
ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’
ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’
ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে