৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন।

এটা খুব সময়োপযোগী ও মানুষের হৃদয়ে স্পর্শ করা একটি তারিখে করা হয়েছে। কারণ, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছিলেন।

জুলাই ঘোষণাপত্রে খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে মহান স্বাধীনতা, বাকশাল-পরবর্তী ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান, এরশাদের দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে সংসদীয় সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন, এক–এগারো সরকারের অপতৎপরতা, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের অপশাসন, হত্যাযজ্ঞ, দুর্নীতি, গুম, খুনের কথা উল্লেখ আছে।

জুলাইয়ের ‘৩৬ দিনে’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা, অগণিত মানুষকে পঙ্গু ও দৃষ্টিহীন করে দেওয়া, আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের এবং আন্দোলনের অপরাপর রাজনৈতিক দলসহ সবার নিরাপত্তা বিধান করা, তাদের অবদানকে পরবর্তী সংসদে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে যৌক্তিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনএই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ লইয়া আমরা কী করিব  ০৯ আগস্ট ২০২৫

এ ঘোষণাপত্রের সবচেয়ে ইউনিক দিক হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ২৩ বছর পাকিস্তান দ্বারা শোষিত ছিল, তা উল্লেখ করা হয়েছে। আবার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক অর্জনকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

একই দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচন নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে একটি চিঠি দিয়ে ২০২৬ সালে রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করার জন্য বলা হবে (এরই মধ্যে চিঠি গত ৭ আগস্ট পাঠানো হয়েছে)।

নির্বাচন নিয়ে যে অস্থিরতা বা অবিশ্বাস ছিল এবং নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে কি না, এ নিয়ে যে দোলাচল চলছিল, তা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে দূরীভূত হয়েছে বলে মনে করি।

২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করে আওয়ামী লীগ। এতে তারা বিচারপতি খায়রুল হক ও আদালতকে ব্যবহার করে।

এর মাধ্যমেই কলুষিত নির্বাচন করার সব বন্দোবস্ত ও ক্ষমতাকে আজীবন কুক্ষিগত করে রাখার পথ উন্মোচিত হয়।

আরও পড়ুনজুলাই ঘোষণাপত্র: জন-আকাঙ্ক্ষা এবং রাষ্ট্রের অভিপ্রায়০৮ আগস্ট ২০২৫

বিএনপিসহ অপরাপর সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের বিপক্ষে ছিল এবং এর মাধ্যমে একটি দীর্ঘস্থায়ী সংকট ও বিভাজন তৈরি হবে, এটা প্রতিনিয়ত তারা বলে আসছিল।

দেশ যখন প্রত্যাশিত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সব রাজনৈতিক দলকে সহনশীল আচরণ করা উচিত। নিজেদের অনৈক্যে পরাজিতদের আস্ফালন বেড়ে যাবে। তারা নানা ফাঁকফোকর দিয়ে স্যাবোটাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

নতুন দল হিসেবে এনসিপিকে শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাস্তবতাকে ধারণ করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত হতে হবে এবং রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীকেও নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে হবে। যে বিষয়গুলোয় দ্বিমত বা ভিন্নমত আছে, সেগুলোকে নিজেদের মধ্যে বসে সমাধান করাটাই বাঞ্ছনীয়।

আরও পড়ুনজুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের তরুণদের কী চাওয়া০৫ আগস্ট ২০২৫

রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোয় মেঠো বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষেত্রেও নান্দনিকতা বা রুচিশীলতা আনাটা জরুরি সব দলের।

বাংলাদেশে হাসিনা শাসনের ১৫ বছরে সুশাসনের ঘাটতি, সমাজের স্তরে স্তরে দুর্নীতি, অপশাসন ও মানুষের নৈতিক অবক্ষয় দেশকে একটি বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।

যে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন হয়েছিল, সে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে এবং সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ে তুলতে হবে।

সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। ঐকমত্য কমিশন যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করেছে এবং যেগুলো নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো নিয়ে জুলাই সনদ তৈরি হবে।

এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী একই স্বরে কথা বলছে। দল দুটিকে দেশের বাস্তবিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে হবে, সংস্কারগুলো তার আপন গতিতে সম্পাদন হবে এবং ঐকমত্য কমিশনও সনদে একটা অনুচ্ছেদ রাখছে, যেন নির্বাচিত সরকার দুই বছরের মধ্যে সনদ অনুযায়ী সব সংস্কার সম্পন্ন করবে।

বেশি দিন অনির্বাচিত সরকার থাকলে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে, তার সুযোগ নেবে পতিত ফ্যাসিস্ট। তাই সব দলের সার্বিক সহযোগিতায় দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সৌন্দর্য অনুযায়ী সব দল নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। সব রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সহযোগিতা করে ত্রয়োদশ সংসদীয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর, বর্ণাঢ্য এবং দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

একটি আলোচনায় সব প্রস্তাবে কখনোই ঐকমত্য হয় না। প্রত্যেককেই কিছু না কিছু ছাড় দিতে হয়। বিএনপি তাদের ৩১ দফার বাইরেও অনেক প্রস্তাবে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।

গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে মতপার্থক্যের মধ্যেও থাকবে রাজনৈতিক সম্মিলন। মতের, পথের পার্থক্য থাকবে; কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের সুষম উন্নতি-অগ্রগতির স্বার্থে, বিদেশি দেশগুলোর সঙ্গে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলোচনার ক্ষেত্রে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে একবিন্দুতে মিলিত হবে সব রাজনৈতিক দল।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে যে ঐকমত্য হয়েছে, তা ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক পথযাত্রায় ব্যাপক অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস। বিশেষ করে বিচার বিভাগ সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রায় সব দলই প্রস্তাবগুলোয় একমত পোষণ করেছে দু-একটা পয়েন্ট ছাড়া। নির্বাচন কমিশন সংস্কারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

সংবিধান বিষয়ের দ্বিমতগুলোয় নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর ফ্যাসিস্টের বিচারের ক্ষেত্রেও একটি সর্বদলীয় কঠোর ঐক্য বজায় আছে। নির্বাচনের আগে বিচারের রায় হবে—এ রকম জনপ্রত্যাশা ব্যাপক।

একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন এসব সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বেশি দিন অনির্বাচিত সরকার থাকলে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে, তার সুযোগ নেবে পতিত ফ্যাসিস্ট। তাই সব দলের সার্বিক সহযোগিতায় দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সৌন্দর্য অনুযায়ী সব দল নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে।

সব রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সহযোগিতা করে ত্রয়োদশ সংসদীয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর, বর্ণাঢ্য এবং দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

দেশের প্রায় চার কোটি তরুণ ভোটার, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ভোট দিতে পারেন না, তাঁরা প্রথম তাঁদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। গণতান্ত্রিক এ অভিযাত্রায় বাংলাদেশের মানুষের আনন্দে ফ্যাসিস্টের কবর রচিত হবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ রায়হান প্রকৌশলী ও লেখক
[email protected]

* মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব চ ত সরক র গণত ন ত র ক প রস ত ব সহয গ ত সরক র র ব যবস থ ঐকমত য স ন দর র জন য আগস ট সব দল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট

জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এই ভাষণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঠেলে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) একমত হওয়াকেই যদি সবার ঐকমত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তা এত দিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠককেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’

বাম জোটের নেতারা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেও একই কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত উঠে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের যে ন্যূনতম সংস্কারটুকু করার সুযোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তা–ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮০ দিন জাতীয় সংসদ দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলবে অর্থাৎ একই সঙ্গে সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার যে কথা বলা হয়েছে; এটাও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো ঐকমত্য হয়নি।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়ে যে কথা প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন, তা একদেশদর্শী ও সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানে আদেশ জারি বা গণভোটের কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি কেবল অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে।

বাম জোটের নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গণভোট ও আদেশ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের (দ্বিমতের) উল্লেখ থাকছে না। ঐকমত্য কমিশনে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টিতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন—এ তথ্যও সঠিক নয়। ৩০টি প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, এ রকম প্রস্তাব ১১টির বেশি নয়।

এ ছাড়া বিবৃতিতে লালদিয়ার চরে ডেনমার্কের কোম্পানিকে বন্দর নির্মাণ এবং পানগাঁও টার্মিনাল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তড়িঘড়ি করে কেন সরকার একের পর এক আমাদের লাভজনক বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে, তা দেশবাসীর মনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এ ধরনের প্রকল্পে ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নানা ঝুঁকি থাকে। দেশের নানা মহল থেকে বারবার সেই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত না করে আগের স্বৈরাচার সরকারের বন্দর ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।’

বাম জোটের নেতাদের বিবৃতিতে উঠে আসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি। তাঁরা বলেন, মব সন্ত্রাস লাগামছাড়া, নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে, দিনদুপুরে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার উপায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আর এই সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের গুপ্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে জনজীবনে এক চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকারের গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডই এই পতিত শক্তিকে জনপরিসরে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ বাম জোটের নেতাদের।

গণভোট ও উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে বাম জোটের নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদেরই। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করুন। দেশের বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো প্রতিকারে উদ্যোগ নিন।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলীর পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সফল নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণের অর্ধেকপথ পার করা সম্ভব হবে: মান্না
  • কী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়
  • প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
  • ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে: সেলিম
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে কোন দলের দাবি কতটা রাখা হলো