বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে। এর ফলাফল সবাইকে সম্মান করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ সফর শেষ করার আগে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথাগুলো বলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মৌনির সাতৌরি।

এই সফরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন ইসাবেল উইসেলার-লিমা, আরকাদিউস মুলারচিক, উরমাস পায়েত এবং ক্যাটারিনা ভিয়েরা।

সাতৌরি বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন কেবল একটি ধাপ মাত্র। সব রাজনৈতিক অংশীদারেরা যেন ঐকমত্য তৈরি হওয়া সংস্কারগুলোকে সমর্থন করে। সেই সঙ্গে সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো–অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্টে (পিসিএ) মানবাধিকার অঙ্গীকারের মান নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে।

সাতৌরি আরও বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তবে মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নই হবে সহযোগিতা গভীর করার প্রধান মাপকাঠি।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক জোরদারের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের সুশাসন, মানবাধিকার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম মান বাস্তবায়নের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং এসব বিষয়ে ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করা।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, অতীতের দিকে ফিরে তাকানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতীতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে সম্মান করা হয়নি, বিচারব্যবস্থা স্বাধীন ছিল না, নাগরিক সমাজ বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও ছিল না। অথচ এসব বিষয় একটি সুস্থ গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার অপরিহার্য নিশ্চয়তা।’

সাতৌরি আশা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের পর নতুনভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল যা–ই হোক না কেন, ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে, স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থার জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য।’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধি জানান, প্রতিবছর তাঁরা (ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটি) বিভিন্ন দেশে একাধিক সফর থাকেন এবং কোন দেশ সফর করবেন, তা নিজেরাই নির্বাচন করেন।

সাতৌরি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এই সময়ে বেছে নিয়েছি দুটি কারণে—দেশটি একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এই পরিবর্তন প্রায় শেষের দিকে। এটি বাংলাদেশ ও এর গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’

এ ছাড়া আগামী কয়েক মাসে ইইউ বাংলাদেশ সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা আরও জোরদার করবে বলেও উল্লেখ করেন সাতৌরি। তিনি বলেন, ইইউ যখনই কোনো তৃতীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে বা সম্পর্ক গভীর করে, তখন মানবাধিকার উপকমিটি সে দেশে ভ্রমণ করে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকারের গুরুত্ব পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ, এসব বিষয়ই ইইউর সঙ্গে কোনো দেশের চুক্তির প্রধান দিক।

গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলটি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউর প য় ইউর প য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মাথা ও শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন।

ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অনশনের সময় তাঁর পেছনে রাখা ব্যানারে লেখা ছিল—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’।

আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটাকে নির্মূল করার জন্যই আমার এ কর্মসূচি। জুলাই আন্দোলনে যে কোটার বিরুদ্ধে এত রক্তপাত, এত মৃত্যু, স্বৈরশাসকের পতন হলো, সেই কোটা আবার ফিরেছে। আমি কোটার পক্ষে নই। যদি কোটা দেওয়া হয়, সেটা কৃষক-শ্রমিক-মজুরের সন্তানদের দেওয়া হোক। এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমার অনশন চলবে। আমি কোনো খাবার-পানি খাব না। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আসেনি। রাতে এখানেই অবস্থান করব।’

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। এটি অন্যায্য ও অযৌক্তিক একটি কোটা। তাঁরা প্রয়োজনে রক্ত দেবেন, তবু ক্যাম্পাসে এ কোটা ফিরতে দেবেন না। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে যখন ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখন এ সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে তাঁরা জানান।

কোটা পুনর্বহালের বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত ২১ সেপ্টেম্বরের রাকসু নির্বাচনে শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। এ জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের ভর্তি উপকমিটি এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যা চান, সেটাই হবে। কারণ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় চান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী
  • পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ