কুমিল্লায় চুরির অভিযোগে যুবকের ওপর কুকুর লেলিয়ে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ৩
Published: 20th, September 2025 GMT
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে চুরির অভিযোগে এক যুবকের ওপর কুকুর (জার্মান শেফার্ড) লেলিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার দেবপুর এলাকার সাকুরা স্টিল মিলে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় রাতেই র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
নির্যাতনের শিকার ওই যুবকের নাম জয় চন্দ্র সরকার (৩০)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার শীতলপুর গ্রামের বিষ্ণু চন্দ্র সরকারের ছেলে। বর্তমানে জয় বুড়িচং উপজেলার সাহেববাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থেকে ভাঙারির ব্যবসা করেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক ব্যক্তি প্রথমে জয় নামের ওই যুবকের দিকে প্রথমে একটি কুকুর লেলিয়ে দেন। এ সময় চিৎকার করে ওই যুবক নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানান। তিনি কুকুরকে বাধা দিলে ওই ব্যক্তিরা তাঁকে বারবার বলতে থাকে, ‘কুকুর ছাড়’। এরপরই আরেকটিসহ মোট দুটি কুকুর জয়ের ওপর লেলিয়ে দেওয়া হয়। কুকুরগুলো হিংস্রভাবে তাঁর শরীরে কামড়াতে থাকে। একই সময়ে কয়েকজন লাঠি হাতে তাঁকে আঘাত করতে থাকেন। কুকুরের কামড় ও লাঠির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জয় বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু তাঁকে কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল না।
ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল রাতেই র্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লা ও বুড়িচং থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী থানার মো.
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন র্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাদমান ইবনে আলম। তিনি বলেন, সাকুরা স্টিল মিলে বেশ কিছুদিন ধরে চুরির ঘটনা ঘটছিল। প্রায় দুই মাস আগে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে সেখানে নিরাপত্তার জন্য তিনটি বিদেশি (জার্মান শেফার্ড) কুকুর রাখা হয়। বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ কারখানাটি মেরামতের কাজ চলছিল। এরই মধ্যে গতকাল এমন ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের বুড়িচং থানায় হস্তান্তর করা হবে।
মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, ওই স্টিল মিলে মোট তিনটি বিদেশি কুকুর রাখা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন অতি উৎসাহী হয়ে দুটি কুকুর দিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। মিলের মালিকপক্ষ এ ঘটনা জানতেন না। জয় বর্তমানে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জয় বাদী হয়ে গতকাল রাতে মামলা করেছেন। আসামিদের হস্তান্তর করা হলে তাঁদের কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী
রাজধানীর আদাবরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে রিপন সরদার (৪২) খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিপন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইমন ওরফে ভাইগ্না ইমন ওরফে দাঁতভাঙা ইমনকে তাঁর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুটি সামুরাই উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী জানায়, গতকাল ভোরের দিকে রাজধানীর আদাবর থানার বালুর মাঠ এলাকায় বাসায় ঢুকে রিপন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর গ্যাং এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। পরে আহত অবস্থায় রিপনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।
৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকালে বালুমাঠ এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় এলেক্স সবুজ, মনির ও ইমন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নির্ণয় করে অভিযান চালিয়ে ইমন ও তাঁর দুই সহযোগীকে দুটি সামুরাইসহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালানোর কিছুক্ষণ আগে সবুজ ও মনির সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যান। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে আদাবরের ১০ নম্বরের বালুর মাঠ এলাকায় ‘বেলচা মনির’ ও ‘রাজু গ্রুপে’র মধ্যে এ মারামারি হয়। ‘বেলচা মনিরের’ লোকজন ‘রাজু গ্রুপের’ রিপনকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের মৃত্যু হয়।
আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুনআদাবরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারিতে নিহত ১১৮ ঘণ্টা আগেতবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের ছেলে ইমন সরদার গতকাল দাবি করেন, রিপন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। রিপন পেশায় চা–দোকানি। বেলচা মনিরের লোকজনের সঙ্গে দুই দিন আগে তাঁর বাবার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মা আরজু বেগমও আহত হয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, নিহত রিপন সরদার মাদক কারবারি রাজুর চাচাতো ভাই। ‘রাজু গ্রুপ’ ও ‘বেলচা মনিরের’ নেতৃত্বে আদাবরের ১০ ও ১৭ নম্বর এলাকায় মাদক ব্যবসা হয়। ওই বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। নিহত রিপনের বিরুদ্ধে ভোলায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।