মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা খাল ভরাট করে নির্মাণ করছে নালা
Published: 20th, September 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত শতবর্ষী একটি খাল ভরাট করে নালা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে খালটি একটি অংশ অস্তিত্ব হারিয়েছে। অবশিষ্ট অংশও দখল হওয়ার পথে।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খালটি মুন্সিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের সড়ক ঘেঁষে শুরু হয়েছে। খালটি পাঁচঘরিয়াকান্দি ও মুন্সিরহাট দিয়ে রজতরেখা নদীতে মিশেছে। খালটি দৈর্ঘ্যে ৬০০ মিটারের বেশি। স্থানভেদে চওড়া ৩০-৪০ ফুট।
অভিযোগ উঠেছে, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান খালের একটি অংশ দখল করে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সে বাড়িটি রক্ষা করতেই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ খালটি ভরাট করে নালা নির্মাণ করে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে খালের অংশ মাটি দিয়ে ৪-৫ বছর আগে পূর্ব পাড়ের লোকজন ভরাট করেছে। সেখান থেকে প্রায় দুই শ ফুট দক্ষিণে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসানের বাড়ি। সে অংশ থেকে বছরখানেক আগে খালের মধ্যখানে ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি আরসিসি নালা নির্মাণ করা হয়েছে। নালার দুই পাশে খালের যে অংশ ছিল তাতে মাটি ও ময়লা–আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এতে নালা নির্মাণ করা অংশে খালটির সম্পূর্ণ অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে।
গত সরকারের আমলে পৌরসভার সভায় সবার সিদ্ধান্তে খালের ওপর নালা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আমার কাজ হচ্ছে পৌরসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। মোশাররফ হোসেন, সহকারী প্রকৌশলী, মুন্সিগঞ্জ পৌরসভাখালপাড়ের বাসিন্দা পাঁচঘরিয়াকান্দি এলাকার অন্তত ৮-১০ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, খালটি শত বছরের পুরোনো। একসময় বড় বড় নৌকা চলত। চরকেওয়ার, আধারা, বাংলাবাজার ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মানুষ এ খাল পাড়ি দিয়ে শহরে আসত। খালের পানি গোসল, রান্নাবান্নাসহ গৃহস্থালির সব ধরনের কাজে ব্যবহৃত হতো। খালটি দিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর ও কলেজপাড়া এলাকার বন্যা–বৃষ্টির পানি নামত। খাল ঘেঁষে সড়ক নির্মাণের পর নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে শুরু হয় দখল–দূষণ। ফলে খালের পানি গৃহস্থালির ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। তবে অন্যান্য কাজে ব্যবহার হতো। দুই বছর আগেও বর্ষায় কাদাযুক্ত ঘোলা জোয়ারে পানি ঢুকত খালটিতে। তবে খালের উৎসমুখসহ বিভিন্ন স্থান দখলে খালটি এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে। যে যার মতো ভরাট ও দখল করেছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৪০ টাকা ব্যয়ে খালটির ওপর ১৫০ মিটার আরসিসি নালা নির্মাণ করা শুরু হয়। নালাটি নাজমুল হাসানের বাড়ি থেকে শুরু হয়ে আইনজীবী সুমনের বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
এটি অত্যন্ত অপরিকল্পিত, আত্মঘাতী, ভয়ংকর রকমের পরিবেশবিরোধী। খালকে প্রাকৃতিক নিষ্কাশন হিসেবে ব্যববহার করা দরকার। মজিবুর রহমান, সভাপতি, পরিবেশ আন্দোলন, মুন্সিগঞ্জনাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার এক কর্মী বলেন, কয়েক বছর আগে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাজমুল হাসানের বহুতল বাড়ি নির্মাণ করতে খালটির পূর্ব পাশ ভরাট করে। খালের পশ্চিম পাশে শহরে প্রবেশের মূল সড়ক। নাজমুল হাসান সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ ফয়সালের ঘনিষ্ঠ হিসবে পরিচিত ছিলেন। মূলত নাজমুল হাসানের বাড়িটি রক্ষায় এবং বাড়ি থেকে সরাসরি সড়কে ওঠার ব্যবস্থা করতেই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণের প্রকল্প নেয়।
স্থানীয় এজাল হক নামে (৮০) এক ব্যক্তি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় তাঁর লোকজন খাল দখল করে স্থাপনা ও নালার নির্মাণকাজ শুরু করেছিল। গত বছর তারা পালিয়ে যাওয়ার পর ভেবেছিলাম খালটি দখলমুক্ত হবে, ড্রেন নির্মাণ বন্ধ হবে। বাস্তবতা হলো পৌরসভার লোকজন শেষ পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ করে খালটি শেষ করে দিল।’
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে পৌরসভার সভায় সবার সিদ্ধান্তে খালের ওপর নালা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আমার কাজ হচ্ছে পৌরসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। সে ক্ষেত্রে আমি তদারকি করেছি।’
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী মাহবুব গত ৩১ জুলাই বলেছিলেন, তিনি খালের ওপর নালা নির্মাণের কাজের ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কোনো নির্দেশনা দেননি। পৌরসভার সব চলমান কাজ শেষ করতে বলেছিলেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো এবং মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এখনো বাস্তবে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। উল্টো ভরাট কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়েছে। ড্রেনের শেষ প্রান্তে মাটি ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
এক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই শহরে প্রধান সড়কজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। শহরের সুপারমার্কেট, ফার্নিচার পট্টি, বাজার, হাসপাতাল ও থানা সড়ক জমে থাকছে হাঁটুসমান পানি। শহর এবং শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো ভরাটের ফলে এসব জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি হরগঙ্গা কলেজের পেছনে খালটি ভরাট করে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত অপরিকল্পিত, আত্মঘাতী, ভয়ংকর রকমের পরিবেশবিরোধী। খালকে প্রাকৃতিক নিষ্কাশন হিসেবে ব্যববহার করা দরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর প রসভ র স ভর ট ক পর ব শ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস
পুঁজিবাজারে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস লিমিটেডের পরিচালনার পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সভায় সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তথ্য মতে, লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ৩০ ডিসেম্বর হাইব্রড সিস্টেমে অনুষ্ঠিত হবে। আর এ জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ ডিসেম্বর।
২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০৩ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৭৮ টাকা।
এদিকে কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে (৪৩.৪৪) টাকা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল (১৪.৫০) টাকা।
আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩.২৭ টাকায়।
এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্য সীমা থাকবে না।
ঢাকা/এনটি/ইভা