নতুন একটি বই হাতে নেওয়ার আনন্দ, পাতার গন্ধে হারিয়ে যাওয়া, আন্ডারলাইন করার নীরব অভ্যাস—এসব অনুভূতি কি কখনো কোনো স্ক্রিনে পাওয়া যায়? এক হাতে কফির কাপ, অন্য হাতে বই ধরে বসে থাকা সেই নিস্তব্ধ মুহূর্ত, যখন বাইরের জগতের কোনো শব্দই প্রবেশ করতে পারে না—এমনটা কি ই-রিডার বা ট্যাবের মাধ্যমে সম্ভব? আবার ভিন্ন দিকে, ট্রেনে বা বাসে বসে, হাতের এক ক্লিকে হাজার হাজার বই নিয়ে যাওয়া, রাতের আঁধারে আলো নিভিয়ে শুধু স্ক্রিনে পড়ার সুবিধা—এসবও কি আমরা অবহেলা করতে পারি?

আজকের পাঠকসমাজ যেন ধীরে ধীরে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল বলে কাগজের বইয়ের প্রেম চিরস্থায়ী, অপর দলের বিশ্বাস ই-বুকই আধুনিক পৃথিবীর অটুট সঙ্গী। সত্যিই কি এই দ্বন্দ্বে কোনো জয়ী বা পরাজিত আছে? আসলে বিষয়টি কিছুটা জটিল।

কাগজের বই শুধু পড়া নয়, একধরনের আবেগের প্রকাশ। পুরোনো লাইব্রেরির ধুলোমাখা শেলফ থেকে বই হাতে তুলে নেওয়ার মুহূর্ত, নতুন বইমেলায় ভিড়ের উত্তেজনা, প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ পাওয়ার আনন্দ—এসব কেবল কাগজের বইয় সম্ভব। বই মানে শুধু শব্দ নয়; বইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে গন্ধ, ছোঁয়া, স্মৃতি। একটি পাতার স্পর্শই আমাদের অতীতের কোনো মুহূর্তকে মনে করিয়ে দিতে পারে। ছোট ছোট নোট বা মার্ক করা লাইনগুলো পড়ার অভিজ্ঞতাকে আরও ব্যক্তিগত ও স্মরণীয় করে তোলে।

এ ছাড়া কাগজের বই আমাদের মনকে ধীরে ধীরে ভাবতে শেখায়। কেউ হয়তো বলেন, ‘একটি বইয়ের মধ্যে কত গল্প, কত তথ্য লুকিয়ে আছে, সবই কি একবারে মনে রাখা সম্ভব?’ কিন্তু ঠিকই তো—প্রতিটি পাতার ভাঁজ, প্রতিটি অধ্যায়ের বিরতি আমাদের ভাবনার জন্য জায়গা রাখে। সকালে কফির কাপ হাতে নিয়ে একটি অধ্যায় পড়া, কিংবা দুপুরের সূর্যের আলোয় লেপটে বসে প্রিয় কবিতার ছন্দে হারিয়ে যাওয়া—এই মুহূর্তগুলোই কাগজের বইকে বিশেষ করে।

তবে প্রযুক্তির যুগে ই-বুকের সুবিধা উপেক্ষা করা যায় না। ভ্রমণে ট্যাব বা স্মার্টফোনে হাজার হাজার বই একসঙ্গে বহন করা যায়। মুহূর্তেই বই খুঁজে পাওয়া যায় সার্চ ফিচারের মাধ্যমে। সাশ্রয়ীর দিক থেকেও ই-বুক অনেক সময় এগিয়ে। তরুণ প্রজন্মের পড়াশোনা, গবেষণা ও জ্ঞান আহরণকে ই-বুক করেছে দ্রুত, সহজ ও আধুনিক। অনেক শিক্ষার্থী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম ও রিসার্চের জন্য মূলত ই-বুকের ওপর নির্ভরশীল।

তবে সুবিধার সঙ্গে কিছু অসুবিধাও জড়িত। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে পড়ার ফলে চোখে চাপ, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি আসে। নোটিফিকেশন বারবার মনোযোগ ভেঙে দেয়। চার্জ বা ব্যাটারির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে হয়। কাগজের বইয়ের গন্ধ, ছোঁয়া বা ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা কখনো পাওয়া যায় না। সব বই ডিজিটাল আকারে পাওয়া যায় না এবং সহজে কপি বা পাইরেসির কারণে লেখক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

আসলে কাগজের বই ও ই-বুক—দুটিই পাঠকের জন্য আলাদা ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। একটি বইয়ে রয়েছে নস্টালজিয়া, স্মৃতি, স্পর্শ ও ধ্যানের আনন্দ। অন্যদিকে ই-বুক আমাদের দিয়েছে সুবিধা, দ্রুততা ও আধুনিকতা। সকালবেলা হাতে ধরা কফির সঙ্গে কাগজের বই, রাতের বেলা বালিশের নিচে লুকানো ই-রিডার—দুটিই আজ পাঠকের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী।

পাঠকের আসল প্রেম নির্ভর করে বইয়ের আকারে নয়, বরং বই পড়ার অভ্যাসে। প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি বাক্য আমাদের নতুন দিগন্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রযুক্তি ও কাগজের বই একে অপরকে বিপরীত নয়, বরং একে অপরের পরিপূরক। এমনকি অনেক পাঠক এখন হাইব্রিড পদ্ধতি ব্যবহার করছেন—দিনে ই-বুক, রাতে কাগজের বই।

সত্যিই, বইয়ের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে পড়ার অভিজ্ঞতা। এতে আছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন চিন্তাধারা, নতুন গল্প এবং কখনো কখনো নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ। তাই কাগজের বই হোক বা ই-বুক, পাঠক চিরকালই পড়ার আনন্দ খুঁজে বের করে। আসল প্রশ্ন হলো—আমরা কি পড়ছি? প্রতিটি অক্ষরই আমাদের নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেয়।

শেষমেশ পাঠকের আসল প্রেম কোনো একটি মাধ্যমের প্রতি সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি হলো বই পড়ার অভ্যাস, জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ ও নতুন কিছু শেখার তৃষ্ণা। বই মানেই শুধু শব্দ নয়, বই মানেই গন্ধ, ছোঁয়া, স্মৃতি ও অবিরাম জ্ঞান। আর এ কারণেই সময় বদলালেও বইয়ের প্রেম চিরকাল অমলিন থেকে যাবে।

তামান্না ইসলাম

শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আসল প র র আনন দ আম দ র জ র বই বইয় র র আসল

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস

পুঁজিবাজারে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস লিমিটেডের পরিচালনার পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

বুধবার (৫ নভেম্বর) ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সভায় সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তথ্য মতে, লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ৩০ ডিসেম্বর হাইব্রড সিস্টেমে অনুষ্ঠিত হবে। আর এ জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ ডিসেম্বর।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০৩ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৭৮ টাকা।

এদিকে কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে (৪৩.৪৪) টাকা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল (১৪.৫০) টাকা।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩.২৭ টাকায়।

এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্য সীমা থাকবে না।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ