বইয়ের গন্ধ বনাম ই-বুক: পাঠকের আসল প্রেম কোনটিতে
Published: 20th, September 2025 GMT
নতুন একটি বই হাতে নেওয়ার আনন্দ, পাতার গন্ধে হারিয়ে যাওয়া, আন্ডারলাইন করার নীরব অভ্যাস—এসব অনুভূতি কি কখনো কোনো স্ক্রিনে পাওয়া যায়? এক হাতে কফির কাপ, অন্য হাতে বই ধরে বসে থাকা সেই নিস্তব্ধ মুহূর্ত, যখন বাইরের জগতের কোনো শব্দই প্রবেশ করতে পারে না—এমনটা কি ই-রিডার বা ট্যাবের মাধ্যমে সম্ভব? আবার ভিন্ন দিকে, ট্রেনে বা বাসে বসে, হাতের এক ক্লিকে হাজার হাজার বই নিয়ে যাওয়া, রাতের আঁধারে আলো নিভিয়ে শুধু স্ক্রিনে পড়ার সুবিধা—এসবও কি আমরা অবহেলা করতে পারি?
আজকের পাঠকসমাজ যেন ধীরে ধীরে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল বলে কাগজের বইয়ের প্রেম চিরস্থায়ী, অপর দলের বিশ্বাস ই-বুকই আধুনিক পৃথিবীর অটুট সঙ্গী। সত্যিই কি এই দ্বন্দ্বে কোনো জয়ী বা পরাজিত আছে? আসলে বিষয়টি কিছুটা জটিল।
কাগজের বই শুধু পড়া নয়, একধরনের আবেগের প্রকাশ। পুরোনো লাইব্রেরির ধুলোমাখা শেলফ থেকে বই হাতে তুলে নেওয়ার মুহূর্ত, নতুন বইমেলায় ভিড়ের উত্তেজনা, প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ পাওয়ার আনন্দ—এসব কেবল কাগজের বইয় সম্ভব। বই মানে শুধু শব্দ নয়; বইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে গন্ধ, ছোঁয়া, স্মৃতি। একটি পাতার স্পর্শই আমাদের অতীতের কোনো মুহূর্তকে মনে করিয়ে দিতে পারে। ছোট ছোট নোট বা মার্ক করা লাইনগুলো পড়ার অভিজ্ঞতাকে আরও ব্যক্তিগত ও স্মরণীয় করে তোলে।
এ ছাড়া কাগজের বই আমাদের মনকে ধীরে ধীরে ভাবতে শেখায়। কেউ হয়তো বলেন, ‘একটি বইয়ের মধ্যে কত গল্প, কত তথ্য লুকিয়ে আছে, সবই কি একবারে মনে রাখা সম্ভব?’ কিন্তু ঠিকই তো—প্রতিটি পাতার ভাঁজ, প্রতিটি অধ্যায়ের বিরতি আমাদের ভাবনার জন্য জায়গা রাখে। সকালে কফির কাপ হাতে নিয়ে একটি অধ্যায় পড়া, কিংবা দুপুরের সূর্যের আলোয় লেপটে বসে প্রিয় কবিতার ছন্দে হারিয়ে যাওয়া—এই মুহূর্তগুলোই কাগজের বইকে বিশেষ করে।
তবে প্রযুক্তির যুগে ই-বুকের সুবিধা উপেক্ষা করা যায় না। ভ্রমণে ট্যাব বা স্মার্টফোনে হাজার হাজার বই একসঙ্গে বহন করা যায়। মুহূর্তেই বই খুঁজে পাওয়া যায় সার্চ ফিচারের মাধ্যমে। সাশ্রয়ীর দিক থেকেও ই-বুক অনেক সময় এগিয়ে। তরুণ প্রজন্মের পড়াশোনা, গবেষণা ও জ্ঞান আহরণকে ই-বুক করেছে দ্রুত, সহজ ও আধুনিক। অনেক শিক্ষার্থী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম ও রিসার্চের জন্য মূলত ই-বুকের ওপর নির্ভরশীল।
তবে সুবিধার সঙ্গে কিছু অসুবিধাও জড়িত। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে পড়ার ফলে চোখে চাপ, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি আসে। নোটিফিকেশন বারবার মনোযোগ ভেঙে দেয়। চার্জ বা ব্যাটারির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে হয়। কাগজের বইয়ের গন্ধ, ছোঁয়া বা ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা কখনো পাওয়া যায় না। সব বই ডিজিটাল আকারে পাওয়া যায় না এবং সহজে কপি বা পাইরেসির কারণে লেখক ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আসলে কাগজের বই ও ই-বুক—দুটিই পাঠকের জন্য আলাদা ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। একটি বইয়ে রয়েছে নস্টালজিয়া, স্মৃতি, স্পর্শ ও ধ্যানের আনন্দ। অন্যদিকে ই-বুক আমাদের দিয়েছে সুবিধা, দ্রুততা ও আধুনিকতা। সকালবেলা হাতে ধরা কফির সঙ্গে কাগজের বই, রাতের বেলা বালিশের নিচে লুকানো ই-রিডার—দুটিই আজ পাঠকের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী।
পাঠকের আসল প্রেম নির্ভর করে বইয়ের আকারে নয়, বরং বই পড়ার অভ্যাসে। প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি বাক্য আমাদের নতুন দিগন্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রযুক্তি ও কাগজের বই একে অপরকে বিপরীত নয়, বরং একে অপরের পরিপূরক। এমনকি অনেক পাঠক এখন হাইব্রিড পদ্ধতি ব্যবহার করছেন—দিনে ই-বুক, রাতে কাগজের বই।
সত্যিই, বইয়ের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে পড়ার অভিজ্ঞতা। এতে আছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন চিন্তাধারা, নতুন গল্প এবং কখনো কখনো নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ। তাই কাগজের বই হোক বা ই-বুক, পাঠক চিরকালই পড়ার আনন্দ খুঁজে বের করে। আসল প্রশ্ন হলো—আমরা কি পড়ছি? প্রতিটি অক্ষরই আমাদের নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেয়।
শেষমেশ পাঠকের আসল প্রেম কোনো একটি মাধ্যমের প্রতি সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি হলো বই পড়ার অভ্যাস, জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ ও নতুন কিছু শেখার তৃষ্ণা। বই মানেই শুধু শব্দ নয়, বই মানেই গন্ধ, ছোঁয়া, স্মৃতি ও অবিরাম জ্ঞান। আর এ কারণেই সময় বদলালেও বইয়ের প্রেম চিরকাল অমলিন থেকে যাবে।
তামান্না ইসলাম
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আসল প র র আনন দ আম দ র জ র বই বইয় র র আসল
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সাবেক সংসদ সদস্যদের ৩০টি গাড়ি সরকারকে দিচ্ছে এনবিআর
শেখ হাসিনা সরকারের শেষ মেয়াদে দ্বাদশ সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করা ৩০টি গাড়ি সরকারকে দেওয়া হচ্ছে। নিলামে ভালো দর না পাওয়ায় এসব গাড়ি এখন সরকারকে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর মিলনায়তনে এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান এ কথা জানান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এসব গাড়ি (সাবেক এমপিদের আনা গাড়ি) সরকারকে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার এগুলো ব্যবহার করবে। এসব গাড়ি জনপ্রশাসনের পরিবহন পুলে যাবে। সেখান থেকে সরকারের যারা ব্যবহার করার, সেখানে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এগুলো যখন নিলাম করলাম, খুবই অল্প দাম পেয়েছি। এখন নিলামের টাকাটা সরকারি কোষাগারে আসবে। আবার সরকারকেই এসব গাড়ি অনেক দাম দিয়ে কিনতে হবে। তাই জাতীয় স্বার্থ চিন্তা করে ৩০টি গাড়ি সরকারের পরিবহন পুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্যরা। সরকারের পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে এনবিআর। তাতে এই গাড়িগুলো বন্দর থেকে আর ছাড় করেননি সাবেক সংসদ সদস্যরা।
সাবেক সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৫১টি গাড়ি আমদানি করেছিলেন। এর মধ্যে সাতটি গাড়ি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে–পরে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। বাকি গাড়িগুলোর মধ্যে ২৪টি গাড়ি গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার নিলামে তোলে চট্টগ্রাম কাস্টমস। সেই নিলামে অংশ নিয়ে আগ্রহীরা গাড়িভেদে সর্বোচ্চ ১ লাখ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর দিয়েছেন এসব গাড়ির জন্য। ১০টি গাড়ির জন্য কোনো দরই জমা পড়েনি। অথচ প্রতিটি গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য ছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ফলে নিলামে যে দর উঠেছে, তাতে কোনো গাড়ি বিক্রি হয়নি। এখন সেগুলো সরকারের মালিকানায় যাচ্ছে।