যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি কর্মী (দক্ষ কর্মী) ভিসার ওপর বছরে এক লাখ ডলার নতুন ফি আরোপে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছে ভারত। দেশটির আশঙ্কা, এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ‘বড় বিপর্যয়ের’ মুখে পড়তে পারে।

আজ শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ভিসা-সংক্রান্ত নতুন এ নীতিমালায় সই করেন। আগামীকাল রোববার ২১ সেপ্টেম্বর থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লি আশা করে, যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিপর্যয় ‘যথাযথভাবে মোকাবিলা’ করতে পারবে। মার্কিন সরকারের এই নীতির প্রভাব কেমন হতে পারে, তা খতিয়ে দেখছে ভারত।

যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো এইচ-১বি ভিসার আওতায় বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, কম্পিউটার প্রোগ্রামারসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের কাজের জন্য দেশে আনতে পারে। এই ভিসা প্রথমে তিন বছরের জন্য দেওয়া হয়। তবে তা ছয় বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়।
গত বছর এইচ-১বি ভিসায় সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশ ছিল ভারত। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে এই ভিসায় যত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেটার ৭১ শতাংশই ভারতের নাগরিক।

আজ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির আগে দেশটির শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন সফটওয়্যার ও সেবা সংস্থাগুলোর জাতীয় সংস্থা (নাসকম) বলেছিল, এইচ-১বি ভিসা ফি কার্যকর করার জন্য এক দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি ‘উদ্বেগজনক’।

নাসকম প্রায় ২৮৩ বিলিয়ন ডলারের (২৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের) আইটি ও বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে। সংস্থাটি বলেছে, এমন নীতির হঠাৎ প্রয়োগ ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পাশাপাশি দেশের প্রযুক্তি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান অন–শোর (যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভারতীয় কোম্পানি) প্রকল্পের ধারাবাহিকতাকে বিঘ্নিত করবে।

নাসকমের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এক দিনের সময়সীমা ব্যবসা, পেশাজীবী এবং ছাত্রদের জন্য ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।’

নতুন এইচ-১বি নীতি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  
নাসকম জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবনের সামগ্রিক পরিবেশ (ইকোসিস্টেম) এবং বৈশ্বিক কর্মসংস্থানে ‘প্রভাব ফেলতে’ পারে। এই পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলোর ‘অতিরিক্ত ব্যয় সামঞ্জস্যের প্রয়োজন হতে পারে।’
নাসকম আরও বলেছে, এ ধরনের বড় নীতিগত পরিবর্তন ‘যথেষ্ট সময় নিয়ে করলে’ সবচেয়ে ভালো হয়। যাতে করে সংশ্লিষ্ট ‘প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে এবং বিপর্যয় কমিয়ে আনতে পারে।’

শুক্রবার মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এইচ-১বি নীতির পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এটা নিশ্চিত করা হবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো কেবল বিরল দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মীদের দেশে আনবে।

আরও পড়ুনকর্মী ভিসায় ট্রাম্পের ফি আরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোন দেশ৬ ঘণ্টা আগে

এইচ-১বি কর্মসূচির সমর্থকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে সেরা ও প্রতিভাবান কর্মীদের নিয়ে আসা হয়। ফলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুবিধা পায় যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছেন, কোম্পানিগুলো কর্মসূচিটির অপপ্রয়োগ করছে। কম মজুরিতে বিদেশি কর্মী আনছে এবং কর্মী সুরক্ষার সঙ্গে আপস করছে।

ট্রাম্পের স্বল্পকালীন সহযোগী ও বিখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কসহ আরও অনেকে এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীদের নিশানা করার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি খাতের চাকরির শূন্যস্থান পূরণ করতে যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট নিজস্ব দক্ষ জনবল নেই।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ‘সব বড় কোম্পানি এটিকে (নতুন এইচ-১বি নীতি) সমর্থন করছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবার (ইউএসসিআইএস) তথ্য অনুযায়ী, ক্যালিফোর্নিয়ায় এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

কিছু বিশ্লেষকের আশঙ্কা, নতুন ফির কারণে অনেক কোম্পানি উচ্চমূল্যের কিছু কাজ বিদেশে স্থানান্তর করতে বাধ্য করতে পারে। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের পর এইচ-১বি ভিসাধারী সবচেয়ে বেশি চীনের। বর্তমানে এই ভিসাধারী চীনা নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ভারতের তুলনায় অনেক কম।

হোয়াইট হাউসের ঘোষণার পর মাইক্রোসফট, জেপি মর্গান ও আমাজনের মতো বড় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে। এসব কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ই-মেইলের তথ্য পর্যালোচনা করে এই খবর জানতে পেরেছে রয়টার্স।

আরও পড়ুনদক্ষ কর্মী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গেলে বছরে ১ লাখ ডলার ফি দিতে হবে১০ ঘণ্টা আগে

নতুন এইচ-১বি নীতি দেশটির অস্থায়ী কর্মী ভিসা–ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প অনেকগুলো আলোচিত নীতি গ্রহণ করেছেন। এসবের মধ্যে অভিবাসন নীতিমালা কঠোর করা অন্যতম। তাঁর প্রশাসন নথিপত্রবিহীন অভিবাসীদের ব্যাপক হারে ধরপাকড় করছে।

এদিকে আজ দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক [দক্ষিণ কোরিয়ার] কোম্পানি ও দক্ষ পেশাজীবী প্রবেশে এসব পদক্ষেপ কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা তারা ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি হুন্দাই-এলজি ব্যাটারি কারখানায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েক শ নাগরিক আটক করেছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র কর ম দ র ত র পর র জন য সবচ য় ন সকম

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস

পুঁজিবাজারে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস লিমিটেডের পরিচালনার পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

বুধবার (৫ নভেম্বর) ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সভায় সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তথ্য মতে, লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ৩০ ডিসেম্বর হাইব্রড সিস্টেমে অনুষ্ঠিত হবে। আর এ জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ ডিসেম্বর।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০৩ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৭৮ টাকা।

এদিকে কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে (৪৩.৪৪) টাকা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল (১৪.৫০) টাকা।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩.২৭ টাকায়।

এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্য সীমা থাকবে না।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ