সুপারিগাছের খোলের সম্ভাবনা কাজে লাগান
Published: 22nd, September 2025 GMT
প্লাস্টিক ও পলিথিনের ওপর মানুষ দিন দিন এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে তা থেকে মুক্তি পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন প্লাস্টিকের মহামারিতে ডুবে যাচ্ছি আমরা। প্লাস্টিক পণ্যের নানা বিকল্পের কথা বলা হলেও পরিকল্পনা, বিনিয়োগ ও নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের অভাবে কোনোভাবেই তা কার্যকর হচ্ছে না। পাটজাতীয় পণ্যের পর প্লাস্টিকের আরেকটি বিকল্প হিসেবে সুপারিগাছের খোলের পণ্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প হিসেবে এটি খুবই কার্যকর হতে পারে।
সুপারিগাছের খোল দিয়ে তৈরি পণ্যের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার নাঙ্গুলি গ্রাম। সাধারণত ফেলনা হিসেবে গণ্য হওয়া একটি বস্তু যে কতটা সম্ভাবনাময় হতে পারে, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গ্রামটি। যেখানে একসময় সুপারিগাছের খোল পোড়ানো হতো, আজ সেখানেই গড়ে উঠেছে একটি ছোট কারখানা। গ্রামের গৃহবধূ নিলুফা ইয়াসমিন ও তাঁর মামা ফরিদুল ইসলামের যৌথ উদ্যোগে এ কারখানা গড়ে উঠেছে। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্পই হাজির করছে না, গ্রামীণ কর্মসংস্থান তৈরির উদাহরণও তৈরি করছে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থালা, বাটি, পিরিচ, চামচসহ অন্যান্য পণ্য পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এমন পরিস্থিতিতে সুপারিগাছের খোল থেকে তৈরি পরিবেশবান্ধব পণ্য সেই সমস্যার এক টেকসই সমাধান দিতে পারে। নাঙ্গুলি গ্রামের এ উদ্যোগ প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে যেমন সাহায্য করছে, তেমনি স্থানীয় সুপারিবাগানের মালিকদের জন্য একটি নতুন আয়ের উৎস তৈরি করেছে। প্রতি মাসে ২০ হাজার সুপারির খোল স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হচ্ছে, যা শুধু ফেলনা বস্তুটিকে কাজে লাগাচ্ছে না, বরং গ্রামের অর্থনীতির চাকাকে সচল করছে।
এ উদ্যোগের শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। উদ্যোক্তারা ভারতের একটি যন্ত্রের আদলে দেশেই তা তৈরি করেছেন, যাতে তাঁদের অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ ঘটেছে। কারখানার শুরুতে স্থানীয় বাজারে চাহিদা না থাকায় প্রায় এক বছর লোকসান গুনতে হয়েছে। কিন্তু তাঁরা হাল ছাড়েননি। অনলাইনে বাজার খোঁজা এবং একজন অনলাইন উদ্যোক্তার মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করার পর থেকেই তাঁদের পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। বর্তমানে তাঁদের কারখানাটি প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার থালা, বাটি ও অন্যান্য সামগ্রী উৎপাদনে সক্ষম।
শুধু পিরোজপুরের নাঙ্গুলি গ্রামে নয়, দেশের আরও নানা জায়গায় সুপারিগাছের খোলসহ অন্যান্য বস্তু থেকে প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য তৈরির উদ্যোগ দেখা গেছে। তবে এ উদ্যোগগুলোর পরিসর ছোট। পরিবেশবান্ধব ও কর্মসংস্থানমুখী এসব উদ্যোগের সরকারি–বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। প্লাস্টিকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেতে এসব উদ্যোগকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ভোক্তাদের মধ্যেও এসব বিকল্প পণ্য ব্যবহারের প্রতি উৎসাহী করে তুলতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ উদ য গ ব কল প
এছাড়াও পড়ুন:
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রী সালমার স্বপ্নপূরণে ডিসি জাহিদুলের সহায়তা
বেসরকারি প্রাইম ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রী সালমা জেরিনের হাতে একটি ল্যাপটপ তুলে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাক জাহিদুল ইসলাম মিঞা
বাবাহীন এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটপূর্ণ।
তার মা জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত, আর তিন ভাইবোনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ফলে সালমার পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সালমা জানান, নিয়মিত শ্রুতিলিপি লেখা, অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য একটি ল্যাপটপ তার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্থা ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, তবে আশ্বাস ছাড়া কেউ সহযোগিতা করেননি।
জেলা প্রশাসকের মানবিক কার্যক্রমের কথা শুনে তিনি আজ বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেখা করেন। ব্যস্ত সময়সূচির মধ্যেও জেলা প্রশাসক দীর্ঘক্ষণ সময় দেন সালমাকে এবং তার পরিবারের দুরবস্থার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
এরপর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অত্যাধুনিক একটি ল্যাপটপ সালমা জেরিনের হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
ল্যাপটপ পেয়ে উচ্ছ্বসিত সালমা জেরিন বলেন,“আমাদের পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে আমার পক্ষে নিজে থেকে একটি ল্যাপটপ কেনা সম্ভব ছিল না। ডিসি স্যার ল্যাপটপ সরবরাহ করায় আমার শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের পথ সহজ হবে।”
সালমার মেধা ও অধ্যবসায়ের প্রশংসা করে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সালমা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হয়েও ইংরেজি বিষয়ের মতো কঠিন বিষয়ে পড়াশোনা করছে এবং তার ফলাফল অত্যন্ত ভালো।
সমাজে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়ানো উচিত। তারা সমাজের বোঝা নয়, বরং সম্পদ। সালমা, তুমি নিজেকে কখনো অসহায় ভাববে না—আমরা তোমার পাশে আছি।”
একই অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক স্থানীয় সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে ব্যবহারের জন্য দুইটি অত্যাধুনিক কম্পিউটার ও প্রিন্টার উপহার দেন।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “মাদকবিরোধী গণসচেতনতা তৈরি ও মাদক প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি সমাজে ঘটে যাওয়া ভালো ঘটনাগুলোও তুলে ধরতে হবে। আমরা সবাই উন্নত দেশ, শহর ও জীবন চাই, কিন্তু নাগরিক হিসেবে উন্নত মানসিকতা গড়ে তোলাও জরুরি।”
তিনি আরও বলেন,“বিদেশি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় কোনো নেতিবাচক খবর থাকে না। আমাদের দেশেও অপরাধের খবর অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে, তবে সমাজের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরলে মানুষ অনুপ্রাণিত হবে।”
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসকের ‘গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ উদ্যোগ ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণে তার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা ইসলাম এবং জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।