প্লাস্টিক ও পলিথিনের ওপর মানুষ দিন দিন এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে তা থেকে মুক্তি পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন প্লাস্টিকের মহামারিতে ডুবে যাচ্ছি আমরা। প্লাস্টিক পণ্যের নানা বিকল্পের কথা বলা হলেও পরিকল্পনা, বিনিয়োগ ও নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের অভাবে কোনোভাবেই তা কার্যকর হচ্ছে না। পাটজাতীয় পণ্যের পর প্লাস্টিকের আরেকটি বিকল্প হিসেবে সুপারিগাছের খোলের পণ্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প হিসেবে এটি খুবই কার্যকর হতে পারে।   

সুপারিগাছের খোল দিয়ে তৈরি পণ্যের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার নাঙ্গুলি গ্রাম। সাধারণত ফেলনা হিসেবে গণ্য হওয়া একটি বস্তু যে কতটা সম্ভাবনাময় হতে পারে, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গ্রামটি। যেখানে একসময় সুপারিগাছের খোল পোড়ানো হতো, আজ সেখানেই গড়ে উঠেছে একটি ছোট কারখানা। গ্রামের গৃহবধূ নিলুফা ইয়াসমিন ও তাঁর মামা ফরিদুল ইসলামের যৌথ উদ্যোগে এ কারখানা গড়ে উঠেছে। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্পই হাজির করছে না, গ্রামীণ কর্মসংস্থান তৈরির উদাহরণও তৈরি করছে। 

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থালা, বাটি, পিরিচ, চামচসহ অন্যান্য পণ্য পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এমন পরিস্থিতিতে সুপারিগাছের খোল থেকে তৈরি পরিবেশবান্ধব পণ্য সেই সমস্যার এক টেকসই সমাধান দিতে পারে। নাঙ্গুলি গ্রামের এ উদ্যোগ প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে যেমন সাহায্য করছে, তেমনি স্থানীয় সুপারিবাগানের মালিকদের জন্য একটি নতুন আয়ের উৎস তৈরি করেছে। প্রতি মাসে ২০ হাজার সুপারির খোল স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হচ্ছে, যা শুধু ফেলনা বস্তুটিকে কাজে লাগাচ্ছে না, বরং গ্রামের অর্থনীতির চাকাকে সচল করছে।

এ উদ্যোগের শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। উদ্যোক্তারা ভারতের একটি যন্ত্রের আদলে দেশেই তা তৈরি করেছেন, যাতে তাঁদের অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ ঘটেছে। কারখানার শুরুতে স্থানীয় বাজারে চাহিদা না থাকায় প্রায় এক বছর লোকসান গুনতে হয়েছে। কিন্তু তাঁরা হাল ছাড়েননি। অনলাইনে বাজার খোঁজা এবং একজন অনলাইন উদ্যোক্তার মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করার পর থেকেই তাঁদের পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। বর্তমানে তাঁদের কারখানাটি প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার থালা, বাটি ও অন্যান্য সামগ্রী উৎপাদনে সক্ষম।

শুধু পিরোজপুরের নাঙ্গুলি গ্রামে নয়, দেশের আরও নানা জায়গায় সুপারিগাছের খোলসহ অন্যান্য বস্তু থেকে প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য তৈরির উদ্যোগ দেখা গেছে। তবে এ উদ্যোগগুলোর পরিসর ছোট। পরিবেশবান্ধব ও কর্মসংস্থানমুখী এসব উদ্যোগের সরকারি–বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। প্লাস্টিকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেতে এসব উদ্যোগকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ভোক্তাদের মধ্যেও এসব বিকল্প পণ্য ব্যবহারের প্রতি উৎসাহী করে তুলতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ উদ য গ ব কল প

এছাড়াও পড়ুন:

বিরল রোগ: চোখের সামনে সন্তান অচল হয়ে পড়লেও কিছু করার থাকে না মা–বাবার

মাথাভর্তি চুল। মুখে কথা লেগে আছে। সারাক্ষণ কিছু না কিছু বলছে। বাবাকেও প্রশ্ন করে চলেছে। গান গাইছে একটার পর একটা। বাবার কোলে থাকা শিশুটি সবই করছে ঠিকঠাক। মনে প্রশ্ন জাগে, ও পারে না কী?

পারে না শুধু দাঁড়াতে, হাঁটতে। সোজা হয়ে বসতে পারে না। বসলে মাথা ঢলে পড়ে। এই বয়সী শিশুর পেশিতে যে শক্তি থাকা দরকার, তা ওর নেই। শিশুটি বংশগত রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগটির নাম স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ)।

তখন করোনা শেষ হয়নি, বিদেশ যাতায়াত কঠিন ছিল। আমরা অক্টোবরে (২০২১) ভারতের চেন্নাই গিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে মেয়েকে দেখাই। চেন্নাই থেকে রক্তের নমুনা পাঠানো হয় বেঙ্গালুরুতে। নভেম্বরে আমাদের জানানো হয় মেয়ের এসএমএ। শাহাদাৎ হোসেন, অলিভিয়া সঞ্চারী নবনীর বাবা

শাহিন আক্তার ও শাহাদাৎ হোসেন দম্পতির একমাত্র সন্তান এই শিশু। নাম অলিভিয়া সঞ্চারী নবনী, বয়স চার বছর দুই মাস। রাজধানীর মগবাজারে তাঁদের বাসা। সন্তানের এসএমএ আছে জানার মুহূর্ত থেকে এই দম্পতির কাছে দুনিয়ার সবকিছু যেন ধূসর হয়ে গেছে। তাঁদের মেয়ে বিরল রোগে ভুগছে। এমন রোগ কম দেখা যায়। এসএমএ একটি বিরল রোগ।

পারে না শুধু দাঁড়াতে, হাঁটতে। সোজা হয়ে বসতে পারে না। বসলে মাথা ঢলে পড়ে। এই বয়সী শিশুর পেশিতে যে শক্তি থাকা দরকার, তা ওর নেই। শিশুটি বংশগত রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগটির নাম স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ)।

২৩ আগস্ট ওই দম্পতির বাসায় তাঁদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বাসা ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে কথা হয় শিশুটির সঙ্গে। শিশুর মা শাহিন আক্তার বলেন, ২০২১ সালের ২০ জুন নবনীর জন্ম। ঠিক সময়ে জন্ম হয়েছিল, জন্মের সময় ওজন ৩ কিলোগ্রামের বেশি ছিল। হাত–পা নড়াচড়াতেও সমস্যা ছিল না। জন্মের ২৫–২৬ দিন পর প্রথম চোখে পড়ল, মেয়ের পা দুটোর নড়াচড়া কমে গেছে। স্বামী–স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে শিশু স্নায়ুরোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মিজানুর রহমানের শরণাপন্ন হন। ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন, যে পরীক্ষার ব্যবস্থা দেশে ছিল না।

শিশুর বাবা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘তখন করোনা শেষ হয়নি, বিদেশ যাতায়াত কঠিন ছিল। আমরা অক্টোবরে (২০২১) ভারতের চেন্নাই গিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে মেয়েকে দেখাই। চেন্নাই থেকে রক্তের নমুনা পাঠানো হয় বেঙ্গালুরুতে। নভেম্বরে আমাদের জানানো হয় মেয়ের এসএমএ।’

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে

সম্পর্কিত নিবন্ধ