মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা: বর্তমান পরিস্থিতি ও সতর্কতা
Published: 22nd, September 2025 GMT
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ভারতের কেরালায় এই অ্যামিবার সংক্রমণে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক।
ফলে উষ্ণ মিঠাপানিতে বেড়ে ওঠা প্রাণঘাতী জীবাণুটি নিয়ে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
২০১৮ সালে বাংলাদেশে ‘ব্রেন ইটিং অ্যামিবা’র প্রথম স্বীকৃত রোগী হিসেবে ১৫ বছরের এক কিশোরকে শনাক্ত করা হয়েছিল।
কীভাবে ছড়ায়এই অ্যামিবা উষ্ণ পানির মাধ্যমে ছড়ালেও সরাসরি পানি পান করার ফলে বা একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে বা হাঁচি–কাশি দিয়ে ছড়ায় না। বরং নাক দিয়ে দূষিত পানি প্রবেশ করলে অ্যামিবাটি ঘ্রাণ স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়।
আরও পড়ুনফল খাওয়ার পর পানি খেলে কী হয়২৮ এপ্রিল ২০২৫লক্ষণপ্রাথমিকভাবে তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, বমি ও ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। চিকিৎসা শুরু না হলে বা অনেক ক্ষেত্রে হলেও দ্রুত অবস্থা খারাপ হয়ে খিঁচুনি, ভারসাম্যহীনতা, হ্যালুসিনেশন, ঘ্রাণ না পাওয়া, ঝাপসা দৃষ্টি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, কোমায় চলে যাওয়া, এমনকি কয়েক দিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুহার ৯৬-৯৮ শতাংশ।
চিকিৎসাসংক্রমণ অত্যন্ত মারাত্মক হলেও কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিবায়োটিকের যৌথ প্রয়োগে রোগী সুস্থ হয়। সাধারণত অ্যামফোটেরিসিন বি, মিল্টেফোসাইন, ফ্লুকোনাজোল, রিফাম্পিন ইত্যাদি ওষুধের যৌথ ব্যবহার করা হয়। তবে দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা শুরু করাই একমাত্র ভরসা।
আরও পড়ুনডাবের পানি সবার জন্য নয়, কারা এবং কেন অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন১৪ আগস্ট ২০২৫প্রতিরোধঅজানা বা অপরিষ্কার উষ্ণ পানিতে সাঁতার না কাটা।
নাক দিয়ে পানি প্রবেশ এড়াতে নাক ক্লিপ ব্যবহার বা হাত দিয়ে নাক বন্ধ করা।
নাক পরিষ্কারে ফুটানো বা ফিল্টার করা পানি ব্যবহার করা।
সুইমিংপুলে নিয়মিত পরিমাণমতো ক্লোরিন দেওয়া।
বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিবাংলাদেশের আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র এবং অনেক জায়গায় অপরিষ্কার জলাশয় বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই ঝুঁকি পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
যদিও এখনো এ সংক্রমণ খুব বিরল, তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যতে এর ঝুঁকি বাড়তে পারে। সতর্কতা অবলম্বন করলেই মারাত্মক এই সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
আরও পড়ুনঅতিরিক্ত গরমে প্লাস্টিকের বোতলে পানি বহন করা কি নিরাপদ১২ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রী সালমার স্বপ্নপূরণে ডিসি জাহিদুলের সহায়তা
বেসরকারি প্রাইম ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রী সালমা জেরিনের হাতে একটি ল্যাপটপ তুলে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাক জাহিদুল ইসলাম মিঞা
বাবাহীন এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটপূর্ণ।
তার মা জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত, আর তিন ভাইবোনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ফলে সালমার পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সালমা জানান, নিয়মিত শ্রুতিলিপি লেখা, অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য একটি ল্যাপটপ তার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্থা ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, তবে আশ্বাস ছাড়া কেউ সহযোগিতা করেননি।
জেলা প্রশাসকের মানবিক কার্যক্রমের কথা শুনে তিনি আজ বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেখা করেন। ব্যস্ত সময়সূচির মধ্যেও জেলা প্রশাসক দীর্ঘক্ষণ সময় দেন সালমাকে এবং তার পরিবারের দুরবস্থার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
এরপর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অত্যাধুনিক একটি ল্যাপটপ সালমা জেরিনের হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
ল্যাপটপ পেয়ে উচ্ছ্বসিত সালমা জেরিন বলেন,“আমাদের পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে আমার পক্ষে নিজে থেকে একটি ল্যাপটপ কেনা সম্ভব ছিল না। ডিসি স্যার ল্যাপটপ সরবরাহ করায় আমার শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের পথ সহজ হবে।”
সালমার মেধা ও অধ্যবসায়ের প্রশংসা করে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সালমা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হয়েও ইংরেজি বিষয়ের মতো কঠিন বিষয়ে পড়াশোনা করছে এবং তার ফলাফল অত্যন্ত ভালো।
সমাজে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়ানো উচিত। তারা সমাজের বোঝা নয়, বরং সম্পদ। সালমা, তুমি নিজেকে কখনো অসহায় ভাববে না—আমরা তোমার পাশে আছি।”
একই অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক স্থানীয় সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে ব্যবহারের জন্য দুইটি অত্যাধুনিক কম্পিউটার ও প্রিন্টার উপহার দেন।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “মাদকবিরোধী গণসচেতনতা তৈরি ও মাদক প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি সমাজে ঘটে যাওয়া ভালো ঘটনাগুলোও তুলে ধরতে হবে। আমরা সবাই উন্নত দেশ, শহর ও জীবন চাই, কিন্তু নাগরিক হিসেবে উন্নত মানসিকতা গড়ে তোলাও জরুরি।”
তিনি আরও বলেন,“বিদেশি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় কোনো নেতিবাচক খবর থাকে না। আমাদের দেশেও অপরাধের খবর অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে, তবে সমাজের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরলে মানুষ অনুপ্রাণিত হবে।”
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসকের ‘গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ উদ্যোগ ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণে তার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা ইসলাম এবং জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।