বাক্‌শক্তিহীন ব্যক্তিদের মনের ভাবনা অন্যকে জানানোর সুযোগ দিতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন ব্রেন ইমপ্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠান নিউরালিঙ্ক। নতুন এ উদ্যোগের আওতায় বাক্‌শক্তিহীনদের মস্তিষ্কে নিজেদের তৈরি ব্রেন চিপ বসাবে প্রতিষ্ঠানটি। চিপটি মস্তিষ্ক থেকে সরাসরি ভাবনা সংগ্রহ করে সেটিকে লেখায় রূপান্তর করবে। আগামী অক্টোবর মাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিউরালিঙ্কের প্রেসিডেন্ট দংজিন ডি জে সিও এ বিষয়ে বলেন, ‘যাঁরা কথা বলতে পারেন না, তাঁদের জন্য আমাদের লক্ষ্য হলো মস্তিষ্ক থেকে সরাসরি কণ্ঠস্বর বের করা। এমনকি কোনো কি–বোর্ড ব্যবহার ছাড়াই। কেউ যদি মনে মনে কোনো কথা বলার কল্পনা করেন, আমরা সেটি শনাক্ত করে তুলে আনতে পারব।’

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ইতিমধ্যে নিউরালিঙ্কের ব্রেন চিপকে ‘ব্রেকথ্রু ডিভাইস’ বা যুগান্তকারী প্রযুক্তির স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২২ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণে এফডিএর অনুমোদন না পেলেও পরবর্তী সময়ে সেই ত্রুটি সংশোধন করে ২০২৪ সালে মানবদেহে প্রথমবারের মতো ইমপ্ল্যান্ট বসানোর পরীক্ষা চালায় নিউরালিঙ্ক। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১২ জন মানুষের শরীরে এই চিপ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং তাঁরা মিলে ১৫ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করেছেন।

প্রসঙ্গত, মাথায় নিউরালিঙ্কের চিপ বসানো প্রথম ব্যক্তি এরই মধ্যে মনে মনে ভেবেই ভিডিও গেম খেলার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্রাউজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করাসহ ল্যাপটপে কারসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। ব্রেন চিপটি মূলত মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া বা গুরুতর শারীরিক অক্ষমতায় ভোগা মানুষদের সহায়তার জন্যই এই প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে। শুধু নিউরালিঙ্ক নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান সিঙ্ক্রন ইনকরপোরেটেডও একই ধরনের ইমপ্ল্যান্ট প্রযুক্তির পরীক্ষা চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য হলো মোটর-সংক্রান্ত অক্ষমতায় ভোগা মানুষদের কম্পিউটারে টাইপ করার সুযোগ করে দেওয়া।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উর ল ঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রী সালমার স্বপ্নপূরণে ডিসি জাহিদুলের সহায়তা

বেসরকারি প্রাইম ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রী সালমা জেরিনের হাতে একটি ল্যাপটপ তুলে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাক জাহিদুল ইসলাম মিঞা
বাবাহীন এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটপূর্ণ।

তার মা জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত, আর তিন ভাইবোনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ফলে সালমার পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।

নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সালমা জানান, নিয়মিত শ্রুতিলিপি লেখা, অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য একটি ল্যাপটপ তার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্থা ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, তবে আশ্বাস ছাড়া কেউ সহযোগিতা করেননি।

জেলা প্রশাসকের মানবিক কার্যক্রমের কথা শুনে তিনি আজ বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেখা করেন। ব্যস্ত সময়সূচির মধ্যেও জেলা প্রশাসক দীর্ঘক্ষণ সময় দেন সালমাকে এবং তার পরিবারের দুরবস্থার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

এরপর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অত্যাধুনিক একটি ল্যাপটপ সালমা জেরিনের হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

ল্যাপটপ পেয়ে উচ্ছ্বসিত সালমা জেরিন বলেন,“আমাদের পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে আমার পক্ষে নিজে থেকে একটি ল্যাপটপ কেনা সম্ভব ছিল না। ডিসি স্যার ল্যাপটপ সরবরাহ করায় আমার শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের পথ সহজ হবে।”

সালমার মেধা ও অধ্যবসায়ের প্রশংসা করে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সালমা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হয়েও ইংরেজি বিষয়ের মতো কঠিন বিষয়ে পড়াশোনা করছে এবং তার ফলাফল অত্যন্ত ভালো।

সমাজে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়ানো উচিত। তারা সমাজের বোঝা নয়, বরং সম্পদ। সালমা, তুমি নিজেকে কখনো অসহায় ভাববে না—আমরা তোমার পাশে আছি।”

একই অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক স্থানীয় সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে ব্যবহারের জন্য দুইটি অত্যাধুনিক কম্পিউটার ও প্রিন্টার উপহার দেন।

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “মাদকবিরোধী গণসচেতনতা তৈরি ও মাদক প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি সমাজে ঘটে যাওয়া ভালো ঘটনাগুলোও তুলে ধরতে হবে। আমরা সবাই উন্নত দেশ, শহর ও জীবন চাই, কিন্তু নাগরিক হিসেবে উন্নত মানসিকতা গড়ে তোলাও জরুরি।”

তিনি আরও বলেন,“বিদেশি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় কোনো নেতিবাচক খবর থাকে না। আমাদের দেশেও অপরাধের খবর অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে, তবে সমাজের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরলে মানুষ অনুপ্রাণিত হবে।”

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসকের ‘গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ উদ্যোগ ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণে তার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা ইসলাম এবং জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ