ধলেশ্বরীর পোকামাকড়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক, হুমকিতে বাস্তুতন্ত্র
Published: 23rd, September 2025 GMT
সম্প্রতি এক গবেষণায় ধলেশ্বরী নদীর পানি ও তলানির পাশাপাশি নদীর ছয় প্রজাতির জলজ পোকামাকড়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক (এমপি) পাওয়া গেছে। এতে দেশের সামগ্রিক জলজ বাস্তুতন্ত্র নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব পোকামাকড়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক (এমপি) পাওয়া গেছে তারা নদীর মাছ, পাখি ও অন্যান্য প্রাণির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ খাদ্য। ফলে এসব কণা সহজেই মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করতে পারে।
গবেষণায় ধলেশ্বরী নদীর পানি ও তলানিতেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। এতে নেতৃত্ব দেন পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো.
সায়েন্টিফিক রিপোর্টস-এ প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের লিংক: Aquatic insects as mediator for microplastics pollution in a river ecosystem of Bangladesh | Scientific Reports
গবেষকদলের অন্য সদস্যরা হলেন- প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক খোন্দকার মো. জুলফিকার রহমান; একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান; পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল হক ও ওয়াহিদা আহমেদ।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “গবেষণার ফল স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এরইমধ্যে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্র পোকামাকড়ে এর উপস্থিতি প্রমাণ করছে, জলজ বাস্তুতন্ত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক স্থানান্তরে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, মানুষের খাদ্যচক্রে এগুলো প্রবেশের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তাই বিষয়টি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা জরুরি।”
তিনি আরো বলেন, “এই ধরনের গবেষণা বাংলাদেশের বৃহত্তর এলাকায় পুনরায় করা প্রয়োজন। এতে সার্বিক পরিস্থিতি বোঝা যাবে এবং নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, যে ছয় প্রজাতির জলজ পোকায় মাইক্রোপ্লাস্টিক (এমপি) পাওয়া গেছে তার মধ্যে তিনটি জলজ হেটেরোপটেরা প্রজাতি- ডিপ্লোনিকাস এনুলাটাস (Diplonychus annulatus), ডিপ্লোনিকাস রাস্টিকাস (Diplonychus rusticus) এবং রানাট্রা এসপি (Ranatra sp.) —যারা সারাজীবন পানিতে বসবাস করে।
অন্য তিনটি হলো ওডোনাটা প্রজাতি- ব্রাকিথেমিস কনটামিনাটা (Brachythemis contaminata), ক্রোকোথেমিস সারভিলিয়া (Crocothemis servilia) এবং অর্থেরাম সাবিনা (Orthetrum sabina)- যাদের শৈশবকাল পানিতে কাটলেও প্রাপ্তবয়স্করা স্থল ও আকাশে বসবাস করে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই গবেষণার মাধ্যমেই প্রথমবার বৈজ্ঞানিকভাবে বাংলাদেশে ডি. এনুলাটাস (D. annulatus) ও ডি. রাস্টিকাস (D. rusticus) প্রজাতির উপস্থিতি নিশ্চিত হলো।
গবেষকদের ভাষায়, পাঁচ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক দিন দিন বিপজ্জনক দূষক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। সমুদ্র নিয়ে বহু গবেষণা হলেও মাঠপর্যায়ে তথ্য এখনো অপ্রতুল। এ কারণেই তারা নদীর পানি, তলানি ও ছয় প্রজাতির জলজ পোকা পরীক্ষা করেছেন।
গবেষণা অনুসারে, ধলেশ্বরী নদীর পানিতে গড়ে প্রতি লিটারে ১৪৩টি এবং তলানিতে প্রতি কেজিতে ৩০ হাজার ১৫৩টি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
জলজ প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক (এমপি) পাওয়া গেছে ডি. রাস্টিকাস (D. rusticus)-এ—প্রতি গ্রামে ৫৭.৮২টি। এর পরে রয়েছে কনটামিনাটা (B. contaminata) ৩৮.৫৩, রানাট্রা এসপি. (Ranatra sp.) ৩৪.০৫, সি. সারভিলিয়া (C. servilia) ২৬.৯৯, ডি. এনুলাটাস (D. annulatus) ১৬.৪৪ এবং ও. সাবিনা O. sabina ১৪.১৩।
এছাড়া গবেষণায় নদী বাস্তুতন্ত্রে আট ধরনের প্লাস্টিক পলিমার শনাক্ত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, পোকামাকড়ে পাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক আকার, রং ও আকৃতির দিক থেকে নদীর পানি ও তলানিতে পাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকের সঙ্গে প্রায় অভিন্ন। এটি প্রমাণ করে, এরা বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক বহন করছে।
গবেষকেরা বলেন, “পোকামাকড়ের আকার-ওজন, খাদ্যাভ্যাস ও আবাসস্থল নির্ভর করে তারা কতটা মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে। পাশাপাশি, কনটামিনেশন ফ্যাক্টর, নেমেরো পলুশন ইনডেক্স, পলুশন লোড ইনডেক্স ও পলিমার হ্যাজার্ড ইনডেক্স ব্যবহার করে ধলেশ্বরী নদীতে বিভিন্ন মাত্রার পরিবেশগত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে।”
গবেষণায় মোট ১০০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় ধলেশ্বরী নদী থেকে। এর মধ্যে ছিল ৩০টি পানির নমুনা, ৩০টি তলানির নমুনা এবং ছয় প্রজাতির জলজ পোকা। নমুনা সংগ্রহ করা হয় সুচিন্তিত র্যান্ডম পদ্ধতিতে। এ সময় নগর বসতি, শিল্পবর্জ্য, আবর্জনা ফেলার জায়গা ও কৃষি নির্গমনের মতো প্রধান দূষণ উৎসে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ র প ন র রহম ন পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
ধলেশ্বরীর পোকামাকড়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক, হুমকিতে বাস্তুতন্ত্র
সম্প্রতি এক গবেষণায় ধলেশ্বরী নদীর পানি ও তলানির পাশাপাশি নদীর ছয় প্রজাতির জলজ পোকামাকড়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক (এমপি) পাওয়া গেছে। এতে দেশের সামগ্রিক জলজ বাস্তুতন্ত্র নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব পোকামাকড়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক (এমপি) পাওয়া গেছে তারা নদীর মাছ, পাখি ও অন্যান্য প্রাণির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ খাদ্য। ফলে এসব কণা সহজেই মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করতে পারে।
গবেষণায় ধলেশ্বরী নদীর পানি ও তলানিতেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। এতে নেতৃত্ব দেন পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টস-এ গত ৫ মে প্রকাশিত এই গবেষণাকে বাংলাদেশ থেকে এ ধরনের প্রথম কাজ বলে দাবি করা হয়েছে।
সায়েন্টিফিক রিপোর্টস-এ প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের লিংক: Aquatic insects as mediator for microplastics pollution in a river ecosystem of Bangladesh | Scientific Reports
গবেষকদলের অন্য সদস্যরা হলেন- প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক খোন্দকার মো. জুলফিকার রহমান; একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান; পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল হক ও ওয়াহিদা আহমেদ।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “গবেষণার ফল স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এরইমধ্যে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্র পোকামাকড়ে এর উপস্থিতি প্রমাণ করছে, জলজ বাস্তুতন্ত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক স্থানান্তরে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, মানুষের খাদ্যচক্রে এগুলো প্রবেশের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তাই বিষয়টি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা জরুরি।”
তিনি আরো বলেন, “এই ধরনের গবেষণা বাংলাদেশের বৃহত্তর এলাকায় পুনরায় করা প্রয়োজন। এতে সার্বিক পরিস্থিতি বোঝা যাবে এবং নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, যে ছয় প্রজাতির জলজ পোকায় মাইক্রোপ্লাস্টিক (এমপি) পাওয়া গেছে তার মধ্যে তিনটি জলজ হেটেরোপটেরা প্রজাতি- ডিপ্লোনিকাস এনুলাটাস (Diplonychus annulatus), ডিপ্লোনিকাস রাস্টিকাস (Diplonychus rusticus) এবং রানাট্রা এসপি (Ranatra sp.) —যারা সারাজীবন পানিতে বসবাস করে।
অন্য তিনটি হলো ওডোনাটা প্রজাতি- ব্রাকিথেমিস কনটামিনাটা (Brachythemis contaminata), ক্রোকোথেমিস সারভিলিয়া (Crocothemis servilia) এবং অর্থেরাম সাবিনা (Orthetrum sabina)- যাদের শৈশবকাল পানিতে কাটলেও প্রাপ্তবয়স্করা স্থল ও আকাশে বসবাস করে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই গবেষণার মাধ্যমেই প্রথমবার বৈজ্ঞানিকভাবে বাংলাদেশে ডি. এনুলাটাস (D. annulatus) ও ডি. রাস্টিকাস (D. rusticus) প্রজাতির উপস্থিতি নিশ্চিত হলো।
গবেষকদের ভাষায়, পাঁচ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক দিন দিন বিপজ্জনক দূষক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। সমুদ্র নিয়ে বহু গবেষণা হলেও মাঠপর্যায়ে তথ্য এখনো অপ্রতুল। এ কারণেই তারা নদীর পানি, তলানি ও ছয় প্রজাতির জলজ পোকা পরীক্ষা করেছেন।
গবেষণা অনুসারে, ধলেশ্বরী নদীর পানিতে গড়ে প্রতি লিটারে ১৪৩টি এবং তলানিতে প্রতি কেজিতে ৩০ হাজার ১৫৩টি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
জলজ প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক (এমপি) পাওয়া গেছে ডি. রাস্টিকাস (D. rusticus)-এ—প্রতি গ্রামে ৫৭.৮২টি। এর পরে রয়েছে কনটামিনাটা (B. contaminata) ৩৮.৫৩, রানাট্রা এসপি. (Ranatra sp.) ৩৪.০৫, সি. সারভিলিয়া (C. servilia) ২৬.৯৯, ডি. এনুলাটাস (D. annulatus) ১৬.৪৪ এবং ও. সাবিনা O. sabina ১৪.১৩।
এছাড়া গবেষণায় নদী বাস্তুতন্ত্রে আট ধরনের প্লাস্টিক পলিমার শনাক্ত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, পোকামাকড়ে পাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক আকার, রং ও আকৃতির দিক থেকে নদীর পানি ও তলানিতে পাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকের সঙ্গে প্রায় অভিন্ন। এটি প্রমাণ করে, এরা বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক বহন করছে।
গবেষকেরা বলেন, “পোকামাকড়ের আকার-ওজন, খাদ্যাভ্যাস ও আবাসস্থল নির্ভর করে তারা কতটা মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে। পাশাপাশি, কনটামিনেশন ফ্যাক্টর, নেমেরো পলুশন ইনডেক্স, পলুশন লোড ইনডেক্স ও পলিমার হ্যাজার্ড ইনডেক্স ব্যবহার করে ধলেশ্বরী নদীতে বিভিন্ন মাত্রার পরিবেশগত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে।”
গবেষণায় মোট ১০০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় ধলেশ্বরী নদী থেকে। এর মধ্যে ছিল ৩০টি পানির নমুনা, ৩০টি তলানির নমুনা এবং ছয় প্রজাতির জলজ পোকা। নমুনা সংগ্রহ করা হয় সুচিন্তিত র্যান্ডম পদ্ধতিতে। এ সময় নগর বসতি, শিল্পবর্জ্য, আবর্জনা ফেলার জায়গা ও কৃষি নির্গমনের মতো প্রধান দূষণ উৎসে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ঢাকা/এস