চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন হাবিবুর
Published: 23rd, September 2025 GMT
ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যদের চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান। পুলিশের নিজস্ব ওয়্যারলেসে (বেতারবার্তা) এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ দেওয়া জবানবন্দিতে এ বিষয় উল্লেখ করেছেন ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের ওয়্যারলেস অপারেটর মো.
গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৫০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন কামরুল।
গত বছরের ১৭ জুলাই ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন কামরুল। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি জবানবন্দিতে বলেন, সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তাঁর ডিউটি (দায়িত্ব) ছিল। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ওয়্যারলেসে (কল সাইন ভিক্টর মাইক ওয়ান–১) সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন হাবিবুর রহমান। তখন চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। বার্তাবাহক হিসেবে তিনি (কামরুল) ও তাঁর দল ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটে ওই বার্তা পৌঁছে দেন।
হাবিবুর রহমানের সেই ওয়্যারলেস বার্তার অডিও রেকর্ড জবানবন্দি দেওয়ার শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনালে সেই অডিওটি দুবার শোনানো হয়।
সাক্ষী কামরুল হাসান জবানবন্দি দেওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তাঁকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অডিও বার্তা যেটা শুনলাম, সেখানে উনি (হাবিবুর রহমান) বলেছেন যে জানমাল রক্ষায়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায়, হাঁটু গেড়ে কোমরের নিচে গুলি করতে। বিষয়টিকে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) কীভাবে ব্যাখ্যা করছে?’
জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, এটি মামলার আর্গুমেন্টের (যুক্তিতর্ক) জায়গা। গত বছরের ১৭ জুলাই সরকারি ছুটি ছিল। সেদিন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কেন জনগণের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেবেন। সেদিন এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, যাতে গুলি করতে হবে। কোমরের নিচে না ওপরে, সেটা অবান্তর।
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সাক্ষী বলেছেন ডিএমপি কমিশনার চায়নিজ রাইফেল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অডিওতে এ রকম কিছু পাওয়া যায়নি।
এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, চায়নিজ রাইফেলের কথাটা উনি বলেছেন বা বলেননি, এ বিষয়টি ম্যাটার অব আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্কের বিষয়)। উনি বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা যখন আর্গুমেন্ট করবেন, তখন বিষয়টা ফেস (মোকাবিলা) করবেন।
এ মামলায় গতকাল আরও দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তাঁরা হলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার এসআই (উপপরিদর্শক) কামরুল হোসাইন ও মো. আনিসুর রহমান। এ ছাড়া সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের এসআই মো. শাহেদ জোবায়েরের পুনঃ জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিলেন।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আজ সাক্ষ্য দেবেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা, হবে সরাসরি সম্প্রচারট্রাইব্যুনালে কর্মরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গতকাল রাতে এক ভিডিও বার্তায় প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা এ মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা বুধবার (আজ) সাক্ষ্য দেবেন। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলা তদন্তের সময় শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি ফোনালাপ জব্দ করেছেন, সেই ফোনালাপের রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনানো হবে।
উত্তরা ও সিলেটের মামলায় প্রতিবেদন
দাখিলের সময় বাড়লগণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর উত্তরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২২ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল–১। এই মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ১০ আসামিকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এ ছাড়া গণ–অভ্যুত্থানের সময় সিলেটে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর মামলায় গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২–এ দুজন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর র ন র দ শ দ হ ব ব র রহম ন ল ইসল ম র সময় অপর ধ গতক ল তদন ত ড এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের পর ৪৫ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঝটিকা মিছিলের পর ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার তাঁদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ (ডিবি) থানা-পুলিশের সদস্যরা তাঁদের গ্রেপ্তার করেন। শনিবার দুপুরে জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
গতকাল বেলা দেড়টার দিকে বুড়িচং উপজেলার কালাকচুয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঝটিকা মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বিকেলে ঝটিকা মিছিলের ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে ওই ঝটিকা মিছিল করতে দেখা যায়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পাপন লাল, বুড়িচং উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর নুর তুষার, কুমিল্লা উত্তর জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শের এ আলম, দাউদকান্দি উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহাগ মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মুকবিল হোসেন, মুরাদনগরের পূর্ব ধইর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা শরিফ উদ্দিন, মুরাদনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. সম্রাট, লাকসামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কাজী ইয়াছিন, নাঙ্গলকোটের একটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মশিউর রহমান ভূঁইয়া, পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাব্বি মজুমদার, কুমিল্লা নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. আব্দুল হালিম, লালমাইয়ের বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অভি আহমেদ, বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, একই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন, দেবীদ্বারের জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লিয়ন ও বরকান্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মকবুলসহ ৪৫ জন।
জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার বুড়িচংয়ের কালাকচুয়া এলাকায় বেলা ১টা ৩০ মিনিট থেকে ৩১ মিনিট পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সমর্থনে একটি ঝটিকা মিছিল হয়। ওই ঘটনার পরপরই জেলা ডিবি ও থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযুক্তদের আটক করেছে।
গ্রেপ্তার কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বিদেশে পলাতক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ কিছু নেতা গোপনে অর্থ পাঠিয়ে সরকারবিরোধী কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করছেন। তাঁদের অর্থায়নেই কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকার বিনিময়ে লোক ভাড়া করে এনে স্বল্প সময়ের ঝটিকা মিছিল করা হয়। মিছিলের বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী মুখ ঢেকে রেখেছিলেন, যাতে তাঁদের পরিচয় গোপন থাকে। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
জেলা ডিবির ওসি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে তাঁদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।