ঢাকা আজ বায়ুদূষণে বিশ্বে পঞ্চম, নগরীর ৩ স্থানে দূষণ অনেক বেশি
Published: 24th, September 2025 GMT
দুই দিন বৃষ্টি থাকায় ঢাকার বায়ুমানের হাল ফিরেছিল। গতকাল মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বায়ুদূষণ আবার বেড়েছে। রাজধানীতে আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে আইকিউএয়ারের ঢাকার গড় বায়ুমান ১৫৭। এই মান অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আজ বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৭টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান পঞ্চম। বায়ুদূষণে আজ শীর্ষ স্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর, স্কোর ১৯০।
বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
বর্ষাকালে সাধারণত বায়ুদূষণ কম থাকে মূলত বৃষ্টির কারণে। মোটামুটি মে মাসের শেষ থেকেই কমে আসতে থাকে দূষণ। কারণ, এ সময় থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। প্রাকৃতিক এ ঘটনা ছাড়া দূষণ রোধে আর কোনো ব্যবস্থাই আসলে কার্যকর নেই বলেই মনে করেন দূষণ বিশেষজ্ঞরা। সরকারি নানা উদ্যোগ ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। বৃষ্টি হলে নগরীর দূষণ কমে কয়েক দিন, তারপর আবার বাড়ে। জুলাই সবচেয়ে কম দূষণের মাস।
নগরীর তিন স্থানে দূষণ পরিস্থিতি বেশ খারাপ। এর মধ্যে আছে মাদানী এভিনিউয়ের বেইস এজ ওয়াটার, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি। এসব এলাকার বায়ুর স্কোর যথাক্রমে ১৬৫, ১৬২ ও ১৫৮। এ মান অস্বাস্থ্যকর।
নগরবাসীর জন্য পরামর্শ
আজ ঢাকার যে বায়ুমান, তার পরিপ্রেক্ষিতে নগরবাসীর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এর মধ্যে আছে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে, জানালা বন্ধ রাখতে হবে, ঘরের বাইরে ব্যায়াম করা এড়িয়ে যেতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
অভিযোগ ফেসবুকে নয়, সরাসরি জানান: চট্টগ্রামের মেয়র
গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহে বাড়তি ফি নিলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে না দিয়ে সরাসরি অভিযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শাহাদাত হোসেন এই অনুরোধ করেন। নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে আগামী এক বছরের কাজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র।
চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সামাজিক সংগঠন ডাকবাক্স ফাউন্ডেশনের হয়ে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কথা বলেন ব্যাচেলর পয়েন্ট খ্যাত অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। তিনি জানান, ডাকবাক্স কিশোর অপরাধ দূর করতে ও নারীদের সমস্যা নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করবে।
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরে দৈনিক সৃষ্ট সব আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারলে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। বর্জ্য যাতে বাইরে পড়ে না থাকে সে জন্য বাসাবাড়ি ও দোকানপাট থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ জন্য বাসাবাড়ি থেকে ফি নিতে পারবে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। কিন্তু নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ হয়তো বেশি নিচ্ছে। এ বিষয়ে ফেসবুকে দিলে হয়তো ভিউ পাওয়া যাবে, তবে কাজের কাজ হবে না। সিটি করপোরেশনকে সরাসরি অভিযোগ দিলে যারা বেশি নিচ্ছে তাদের বাদ দেওয়া হবে।
নগরে সৃষ্ট সব বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারলে চট্টগ্রামে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন নগরে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করতে পারে ২ হাজার ২০০ টন। কারণ, বাকি বর্জ্য নগরবাসী ডাস্টবিনে না ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন। চলতি পথে গাড়ি থেকে বাইরে থেকে ফেলে দেন। তবে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালুর পর বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। বায়োগ্যাস উৎপন্ন হলে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য নগরবাসীকে এখন যে টাকা দিতে হচ্ছে তা হয়তো আর দিতে হবে না। তবে এ জন্য একটু সময় দিতে হবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন দাবি করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখন নগরের মানুষকে পানির মধ্যে বাস করতে হচ্ছে না। আগের মেয়রের ঘরেও পানি ঢুকে যেত, বাসা থেকে বের হতে পারত না। বহদ্দারহাট, মুরাদপুরে পানি জমে থাকত। এ নিয়ে মানুষ নানা কৌতুক করতেন। এবার টানা ৫ মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তবু জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে না।’
আগামী এক বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এবার বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে নগরবাসীকে প্রত্যাশা অনুযায়ী রাস্তা উপহার দিতে পারেননি। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি বড় সড়ক উপহার দেবেন। সিটি করপোরেশনের ১০টি সেবা নিয়ে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপ চালু করা হবে আগামী ডিসেম্বরে। ময়লা, আলো, রাস্তা, মশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা নিয়ে নগরবাসী তাঁদের মতামত খুব সহজে জানাতে পারবেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য কাজ করেছেন বলে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে শক্ত অবস্থানে আছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে ছাড় দিচ্ছেন না। ২০০ কোটি টাকার মতো গৃহকর যাতে আদায় করতে পারেন সে চেষ্টা করছেন। বন্দরের গাড়ির কারণে নগরের রাস্তাঘাট দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তাই বন্দরের প্রতি এটি সিটি করপোরেশনের হক।
নগরে কিশোর গ্যাং বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করতে না পারলে নতুন বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়বে। তারা যাতে সন্ত্রাস–মাদকের পথে না যায় সে উদ্দেশ্যে অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশের টিম (ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। বাইরের কিশোর–তরুণদের সঙ্গেও কাজ করবে।
মেয়র আরও বলেন, নাগরিকদের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাইমারি হেলথকেয়ার সিস্টেম চালু করবেন আরবান হেলথকেয়ার সেন্টারগুলোতে। সিটি করপোরেশন হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে কিডনির রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হবে। অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র নগরের ৫টি জোনে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার করার ঘোষণা দেন। ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। আগামী মাস থেকে এসব সেন্টার চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখায় মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।
মেয়রের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সিটি করপোরেশন উন্নয়ন প্রতিবেদন ও তথ্যচিত্র প্রকাশ করে।