বাংলাদেশে রাজনীতির আলোচনায় ‘হাইপ’ (অতি উচ্ছ্বাস) তৈরি হওয়া নতুন কিছু নয়। যখন কোনো বিষয় হঠাৎ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে, তখন আমরা সবাই এ ধরনের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাই। কিন্তু উত্তেজনা কমে গেলে আমরা কয়জনই–বা ফিরে তাকাই, বাস্তবতার আলোকে বিষয়গুলো নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করি?

মনে পড়ে, গত বছর কিছু মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত হাইপ তৈরি হয়েছিল—‘ড.

ইউনূসকে আমরা পাঁচ বছর চাই।’ সে সময়কার উত্তেজনা, বিতর্ক আর রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজন কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, সেটা এখন অনেকেই নতুন করে বুঝতে পারছেন। অথচ তখন আমরা কেউই সেটাকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখিনি। এখন ফিরে তাকালে বোঝা যায়, হাইপের ঢেউ যত বড় হয়, বাস্তবতার ভিত ততটা মজবুত হয় না।

সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনকে শুধু হাইপ দিয়ে দেখলে ভুল হবে। এই নির্বাচন সত্যিই কি ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশক, নাকি এটা সাময়িক উচ্ছ্বাস, যা কিছুদিন পরই মিলিয়ে যাবে?

ট্যাগিংয়ের রাজনীতি: নাম পাল্টেছে, স্বভাব পাল্টায়নি

ছাত্র সংসদের নির্বাচনের পর শিক্ষার্থীরা এখন দাবি করছে—‘ট্যাগিং রাজনীতি আর চলবে না’। কিন্তু বাস্তবে কি আমরা ট্যাগিং বন্ধ হতে দেখছি?

শেখ হাসিনার আমলে বিরোধীদের দমনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছিল ‘রাজাকার’ ট্যাগ দেওয়া। সেই ট্যাগে জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির এবং বিএনপি সবচেয়ে বেশি ভুগেছে। তখন মনে হয়েছিল, হয়তো এ প্রবণতা একদিন শেষ হবে। কিন্তু এখন আবার নতুন আঙ্গিকে ও ভয়ংকর রূপে ফিরে এসেছে এই ট্যাগিং।

আজকে অনলাইন-অফলাইনে আমরা প্রতিদিনই শুনছি—কেউ নাস্তিক, কেউ ইসলামবিদ্বেষী, কেউ শাহবাগী; ‘শাহবাগী গোসল করে না’ এবং নারীবিদ্বেষী অনেক ধরনের মন্তব্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বট বাহিনী’ দিন-রাত এই ট্যাগগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। ট্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিল যারা, তারাই আবার ট্যাগ দেওয়ার রাজনীতি ফিরিয়ে এনেছে। অনেকটা এ রকম বলা যায়, এককালে যারা মজলুম (নিপীড়িত) ছিল, তারাই জালিম (অত্যাচারী) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

আরও পড়ুনট্যাগের মহিমা: ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’১৮ নভেম্বর ২০২৪

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, শিক্ষিত মানুষ, এমনকি আইনকানুন জানা ব্যক্তিরাও এখন ট্যাগিংয়ের ভাষায় কথা বলছেন। সম্প্রতি একটি টক শোতে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক একজন ‘ব্যারিস্টার’ যুক্তিতর্ক না দিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমানকে ‘নাস্তিক’ ও ‘ইসলামবিদ্বেষী’ বলে আক্রমণ করেছেন। ডা. জাহেদ দাবি করেছেন, এর ফলে তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এদিকে এবি পার্টির নেতা আরেক ‘ব্যারিস্টার’ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ছাত্রদলকে দেখলে মনে হয়, তারা গাঁজাখোর, চাঁদাবাজ।’ এ ধরনের মন্তব্য কি রাজনৈতিক যুক্তি, নাকি সরাসরি ট্যাগিং?

অন্ধ আত্মবিশ্বাস: ইতিহাস, বাস্তবতা ও শিক্ষা

জামায়াতে ইসলামী এখন একধরনের অন্ধ আত্মবিশ্বাসে ভুগছে বলে অনেকের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। তারা ধরে নিচ্ছে—ডাকসু বা জাকসু নির্বাচনের সাফল্য মানেই জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি জয়ের রাস্তা খুলে যাবে। কিন্তু ইতিহাস বলে, কেবল আত্মবিশ্বাস বা কয়েকটি সাময়িক সাফল্য কোনো রাজনৈতিক দলকে স্থায়ী শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে না। পুরো বিষয়টা এতটা সরলীকরণ না করে আরও গভীরে দেখা দরকার।

জামায়াত মনে করছে, তারা সমাজে অনেক ‘সেবামূলক’ কাজ করছে এবং এসব দিয়েই নির্বাচনে জয় আসবে। কিন্তু শুধু ‘সেবামূলক’ কাজ দিয়ে কি নির্বাচনে জেতা যায়? বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তেমনটা বলে না।

২০০৬ সালের সেনাশাসন-পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হলে সমাজে হঠাৎ ধারণা তৈরি হয়েছিল—জামায়াতই একমাত্র সৎ মানুষের দল। চারদলীয় জোট সরকারের অংশ হয়েও তারা দুর্নীতিতে জড়ায়নি—এমন কথা বলে একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি তৈরি করা হয়েছিল।

আরও পড়ুনশিবিরের উত্থানের রাজনীতি, বাস্তবতা ও নানা সমীকরণ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নানা ঘটনাপ্রবাহের পর জামায়াতের পরামর্শ মেনে বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। সেই নির্বাচনের ফল হলো ধারণার চেয়ে ভিন্ন। ‘সৎ মানুষের ইমেজ’ নিয়েও জামায়াত মাত্র দুটি আসন পায়। এ থেকে বোঝা যায়, মাঠের রাজনীতি কেবল সততার ইমেজ বা সমাজসেবার মতো কাজ দিয়ে হয় না, এখানে আরও জটিল হিসাব-নিকাশ ও সমীকরণ কাজ করে।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে বহু মানুষ নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে, আত্মত্যাগ করেছে। তারা ভেবেছিল, দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু হবে। কিন্তু পরে দেখা গেল, সেই আন্দোলনের কোনো কোনো নেতা-কর্মী চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এ রকম একটি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের পরও তারা কেন দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন—এ প্রশ্ন আজ অনেকেই করছেন।

*ট্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিল যারা, তারাই আবার ট্যাগ দেওয়ার রাজনীতি ফিরিয়ে এনেছে। অনেকটা এ রকম বলা যায়, এককালে যারা মজলুম (নিপীড়িত) ছিল, তারাই জালিম (অত্যাচারী) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
* পিআর পদ্ধতির ইস্যুটি এখনো সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। যারা দাবি করছে ‘৭০ শতাংশ মানুষ পিআর চায়’, তারা আসলে অসত্য তথ্য দিচ্ছে।
* বড় কোনো রাজনৈতিক সংস্কার যদি তাড়াহুড়া করে এবং যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাস্তবায়ন করা হয়, সেটা শেষ পর্যন্ত দেশকে নতুন সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়।

এর মানে কি আমরা ধরে নিয়েছিলাম, গণ-অভ্যুত্থানের পর হঠাৎ সবার মধ্য নীতিনৈতিকতার বোধ তৈরি হবে? কিন্তু বাস্তবতা বলছে, তেমনটা হয়নি। এ রকম অভিযোগও উঠেছে, কোনো কোনো খাতে আগের আমলের চেয়ে এখন দুর্নীতি আরও বেড়েছে।

ঘুষ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি—এসব আমাদের সমাজে বছরের পর বছর ধরে চলছে। এগুলোর বিস্তার এতটাই ঘটেছে যে সাধারণ মানুষ এখন এগুলোকে ‘স্বাভাবিক’ মনে করে। তাই শুধু সততার ইমেজ দিয়ে রাজনীতির মাঠে খুব সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

ভ্রান্ত পথের ঝুঁকি

জামায়াত দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে একটি দক্ষ ও ‘সুশৃঙ্খল’ কর্মিবাহিনী তৈরি করেছে। কিন্তু এখন যদি সেই কর্মীদের কেবল ‘বট বাহিনী’তে রূপান্তর করা হয় আর ‘হাই কমান্ড’ থেকে আসা মেসেজই শুধু তারা ডেলিভার করে, তাহলে ধীরে ধীরে তাদের নিজস্ব যুক্তি, চিন্তা ও রাজনৈতিক চেতনা হারিয়ে যাবে। রাজনীতি তখন আর সৃজনশীলতা বা বাস্তবতাভিত্তিক হবে না; বরং যান্ত্রিক প্রতিধ্বনিতে পরিণত হবে।

আওয়ামী লীগের উদাহরণটা এখানে খুবই শিক্ষণীয়। তারা ২০১৪ সালের পর নিজেদের সাংস্কৃতিক শক্তি ও আদর্শিক কর্মীদের হারিয়ে কেবল ‘বট বাহিনী’র ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছিল। এর ফলে তারা মানুষের আস্থা হারিয়েছিল। প্রশ্ন হলো, জামায়াত কি একই ভুল করছে?

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আগেও দেশে একাধিক সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। এসব আন্দোলনে অনলাইন নির্ভরশীলতার কিছু উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করা দরকার। কারণ, তখন সোশ্যাল মিডিয়া যেন একধরনের বিকল্প বাস্তবতা তৈরি করেছিল।

একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, ট্যাগিংয়ের রাজনীতি এবং ‘বট বাহিনী’ ব্যবহার করে অনলাইনে সাময়িকভাবে হাইপ তোলা যায়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এগুলো সমাজে বিভক্তি-বিভাজন তৈরি করে। ভারতে বিজেপিসহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এ রকম কাজ করেছে। বাংলাদেশেও একই রকম প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

’২৪ সালের শুরুতে তৎকালীন হাসিনা সরকার ডামি নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো রাজপথে আন্দোলনে নেমেছিল। সে সময় কিছু ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সার প্রতিদিন ঘোষণা দিচ্ছিল, ‘আওয়ামী লীগ কয়েক দিনের মধ্যেই পড়ে যাবে।’ তাদের এসব ভাইরাল ভিডিও অনেক মানুষ বিশ্বাসও করেছিল। কিন্তু বাস্তব কী হলো? আওয়ামী লীগ সঙ্গে সঙ্গে পড়ে গেল না; বরং আরও কয়েক মাস টিকে গেল।

এসব ঘটনাপ্রবাহের সঠিক বিশ্লেষণ করেছিলেন অল্প কয়েকজন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান তখন পরিষ্কার করে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আরও কিছুদিন টিকে থাকবে। একইভাবে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জিয়া হাসান যুক্তি দিয়েছিলেন, ঢাকায় বিএনপি লাখো মানুষ আনলেও পুলিশ ও প্রশাসন আওয়ামী লীগকে রক্ষা করবে, তাই সরকার সঙ্গে সঙ্গে পড়বে না। পরে দেখা গেল, তাদের এই পূর্বাভাসই বাস্তবতার কাছাকাছি ছিল।

আরও পড়ুনবেপরোয়া ছাত্রলীগ, হিন্দু শিক্ষার্থীকেও ‘শিবির’ ট্যাগ ও ভয়াবহ নির্যাতন০৭ জুন ২০২৪

অন্যদিকে যারা প্রতিদিন আওয়ামী লীগের পতনের কাউন্টডাউন চালাচ্ছিল, তাদের কোনো ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলো না। এমনকি, ২০২৪ সালের জুনে যখন কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, তখন এসব ইনফ্লুয়েন্সারের কেউ দাবি করছিল, ‘ছাত্র আন্দোলন আসলে ভারতের প্রজেক্ট।’ এখন জামায়াত যদি এসব ইনফ্লুয়েন্সার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মনে করে যে সোশ্যাল মিডিয়ার হাইপই তাদের জয়ের নিশ্চয়তা দেবে, তাহলে তারা ভুল করবে। বিভিন্ন কারণে জামায়াতের সমর্থন কিছুটা বাড়তে পারে, কিন্তু ইতিহাস আমাদের সতর্ক করে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি দলটি প্রথমে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। প্রথম দিকে তারা তরুণদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পরে কী হলো? তাদের জনপ্রিয়তা যে কমতে শুরু করেছে, এটা এখন অস্বীকার করার উপায় নেই। এর একটা অন্যতম কারণ হলো, যেকোনো ইস্যুতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করা বা অন্যদের উসকে দেওয়া। এ রকম কর্মকাণ্ড মানুষ কিছুদিন মেনে নিলেও শেষ পর্যন্ত এ ধরনের রাজনীতি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করে।

আরও পড়ুনশিক্ষার্থীদের পিটিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ রক্ষা হবে কি১৬ জুলাই ২০২৪

জামায়াত সম্ভবত একই রকম ভুল করছে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে তারা সংসদের উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন) পদ্ধতির দাবি নিয়ে অন্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছে। এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তাদের জন্য বড় বিপদের কারণ হতে পারে। পিআর পদ্ধতির ইস্যুটি এখনো সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। যারা দাবি করছে ‘৭০ শতাংশ মানুষ পিআর চায়’, তারা আসলে অসত্য তথ্য দিচ্ছে। এ বিষয়ে তেমন কোনো গবেষণা বা জরিপ হয়নি।

বাংলাদেশের ইতিহাস বিবেচনায় দেখা গেছে যে বড় কোনো রাজনৈতিক সংস্কার যদি তাড়াহুড়া করে এবং যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাস্তবায়ন করা হয়, সেটা শেষ পর্যন্ত দেশকে নতুন সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়। যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সাময়িক সমাধান দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা নানা জটিলতার জন্ম দিয়েছে।

কাজেই জামায়াত যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওঠা হাইপ আর নিজেদের ‘সৎ ইমেজ’ বিবেচনায় নিয়ে ভেবে থাকে যে পিআর পদ্ধতির পক্ষে আন্দোলনে জনগণ তাদের সঙ্গে থাকবে, তাহলে বুঝতে হবে, তাদের হিসাব-নিকাশে বড় ভুল আছে। পিআর নিয়ে আন্দোলনে বরং মানুষ বিরক্ত হতে পারে, যার মাশুল রাজনীতির মাঠে তাদের দিতে হবে।

আরও পড়ুনবিএনপি যখন সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের শিকার৩১ আগস্ট ২০২৫

আরব বসন্তও আমাদের প্রায় একই শিক্ষা দেয়। মিসর, তিউনিসিয়া কিংবা লিবিয়ায় প্রথমে মনে হয়েছিল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ঢেউ শাসন বদলে দেবে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে দেখা গেল, সংগঠিত রাজনৈতিক দল আর দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ছাড়া সেই পরিবর্তন স্থায়ী হয়নি। গবেষক ইভজেনি মোরোজভ সতর্ক করেছিলেন, ‘ডিজিটাল ইউটোপিয়ানিজম বিপজ্জনক; কারণ, এটি বাস্তব শক্তির কাঠামোকে আড়াল করে।’ (দ্য নেট ডিলুশন, ২০১১)

একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, ট্যাগিংয়ের রাজনীতি এবং ‘বট বাহিনী’ ব্যবহার করে অনলাইনে সাময়িকভাবে হাইপ তোলা যায়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এগুলো সমাজে বিভক্তি-বিভাজন তৈরি করে। ভারতে বিজেপিসহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এ রকম কাজ করেছে। বাংলাদেশেও একই রকম প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

মধ্যপন্থার রাজনীতি

এনসিপি প্রথমে মধ্যপন্থী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মানুষের মনে আশা জাগিয়েছিল। তাদের গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা হিসেবে ইমেজ, তারুণ্য আর নতুন ধারার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজকে আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু নানা বিভ্রান্তিকর কাজের কারণে তারা মূল সমর্থকশ্রেণিকে ইতিমধ্যেই হারিয়ে ফেলেছে।

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতা-কর্মীর অন্যান্য দলে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটাকে আমরা কীভাবে দেখব? যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি করেছে, তারাই আবার তাদের দলে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের জায়গা দিচ্ছে, এটা কি স্ববিরোধিতা হলো না?

বিএনপি ও এনসিপি যদি সত্যিই নিজেদের মধ্যপন্থী দল হিসেবে দাবি করে, তাদের কখনোই উচিত হবে না কোনো দলকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার মতো ‘চরম পথে’ যাওয়া। মধ্যপন্থার বৈশিষ্ট্যই হলো সবাইকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলা।

মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার শিক্ষক ও গবেষক, রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় র র জন ত র জন ত ক র জন ত র ব স তবত ক জ কর কর ছ ল হয় ছ ল ধরন র প রথম সরক র দরক র ইসল ম এ রকম ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বিশেষ প্রসিকিউটোরিয়াল উপদেষ্টা’ সমাজীর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ‘হ্যাকড’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বিশেষ প্রসিকিউটোরিয়াল উপদেষ্টা’ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি ‘হ্যাকড’ (বেহাত) হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি প্রতিকার চেয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় এহসানুল হক সমাজী একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান।

এসআই মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বিশেষ প্রসিকিউটোরিয়াল উপদেষ্টা’ এহসানুল হক সমাজীর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি হ্যাকড হয়েছে। হ্যাকিংয়ের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশ।

এহসানুল হক সমাজী তাঁর জিডিতে উল্লেখ করেছেন, বুধবার দুপুরে উত্তরা মডেল থানার একজন এসআই পরিচয় দিয়ে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেন। ফোনটি তিনি রিসিভ করার পর এসআই পরিচয়ধারী ব্যক্তি তাঁকে জানান, তাঁর মুঠোফোন থেকে সরকারবিরোধী তথ্য প্রচার হচ্ছে। পরে তিনি একটি লিংক তাঁর মুঠোফোনে পাঠান। পরে একটি কোড পাঠান এসআই পরিচয়ধারী সেই ব্যক্তি। এর কিছুক্ষণ পর জানতে পারেন, তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি হ্যাক করা হয়েছে। তাঁর মুঠোফোন থেকে তাঁর বিভিন্ন পরিচিতজনের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর হ্যাকিং করে যাঁরা আমার সম্মানহানি করেছেন, তাঁদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ