সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বৈধতা চেয়ে মিছিল-সমাবেশ করার এক ঘণ্টার মধ্যেই প্রধান দুই সংগঠককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বাসদ সিলেটের আহ্বায়ক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেটের সভাপতি আবু জাফর এবং বাসদ সিলেটের সদস্যসচিব ও ব্যাটারিচালিত রিকশা ভ্যান ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ সিলেট মহানগরের সভাপতি প্রণব জ্যোতি পাল। তাঁদের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের দাবিতে আন্দোলন পরিচালিত হয়ে আসছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বৈধতা চেয়ে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সিলেট নগরে চালকেরা কর্মসূচি করেছেন। এসব কর্মসূচি থেকে সিএনজি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস ভাঙচুরসহ সহিংসতা হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটো মামলায় আবু জাফর ও প্রণব জ্যোতি পালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক-মালিকদের সহিংসতার ঘটনায় মো.

আবুল কালাম ও মো. রুবেল নামের দুই ব্যক্তি বাদী হয়ে সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন। এসব মামলায় আবু জাফর ও প্রণব জ্যোতি পালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাঁরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নন। পুলিশ তদন্তকালে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে গ্রেপ্তার করেছে।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে অভিন্ন ও সমন্বিত নীতিমালা চুড়ান্ত করে ব্যাটারিচালিত যানের নিবন্ধন ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানসহ আট দফা দাবিতে মিছিল হয়। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট এবং রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত এ মিছিল শেষ হয় নগরের চৌহাট্টা এলাকায়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। বেলা দেড়টার দিকে কর্মসূচি শেষ হয়।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেটের সভাপতি আবু জাফরের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ব্যাটারিচালিত রিকশা ভ্যান ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ সিলেট মহানগরের সভাপতি প্রণব জ্যোতি পাল। বক্তারা বলেন, ব্যাটারিচালিত যানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনলে ৫০ ভাগ সমস্যা শুরুতেই দূর হয়ে যাবে। কর্মসূচি শেষে বেলা সোয়া দুইটার দিকে প্রণব জ্যোতি পাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার তাঁদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। এ বিষয়ে তাঁরা অবগত নন। তবে তাঁরা জেনেছেন, ওই দুই দিন সিলেট ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মসূচি হয়েছে।

এদিকে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্টে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সমাবেশ হয়। ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধ এবং গত বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব যানের চালকদের দ্বারা সিএনজি অটোরিকশা, ট্রাক, লেগুনার ওপর হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি থেকে হামলাকারী এবং তাদের ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। এ দাবি জানানোর তিন ঘণ্টার মধ্যেই প্রধান দুই সংগঠককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে মহানগর পুলিশের উদ্যোগে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। এতে কয়েক শতাধিক অবৈধ যানবাহন আটকের পাশাপাশি মামলা করা হয়। অভিযানের অংশ হিসেবে গত বুধবার নগরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার চার্জিং পয়েন্টেও অভিযান চালিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

অভিযানের প্রতিবাদে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে নগরে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ চালক। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশাসহ যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাটারিচালিত যানের চালকেরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় তাঁদের যান চলাচলে বৈধতার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর প রণব জ য ত

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালে নিরাপত্তা জোরদার, আছে সেনাবাহিনী-র‍্যাব-পুলিশ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে দেখা যায়, ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), বিশেষায়িত ইউনিট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনী সাঁজোয়া যান নিয়ে উপস্থিত রয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় পথচারীদের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এলাকার প্রত্যেক ফটকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় হতে যাচ্ছে আজ সোমবার।

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার অন্য দুই আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। দুজনই এখন ভারতে অবস্থান করছেন।

এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন।

আরও পড়ুনজুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় আজ৪৫ মিনিট আগে

এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে প্রসিকিউশন। একই সঙ্গে তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জুলাইয়ে শহীদ হওয়া পরিবারগুলোর পাশাপাশি আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে হস্তান্তর করতে প্রসিকিউশন আবেদন জানিয়েছে। এ ছাড়া প্রসিকিউশন মনে করে, সাবেক আইজিপি মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবে ঘটনার পূর্ণ সত্য প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল যথাযথ আদেশ দেবেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের খালাস চেয়েছেন তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে যে পাঁচ অভিযোগ১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ