স্বামী-স্ত্রী দুইজনই চাকরিজীবী হলে কিংবা সন্তান লালন পালনে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করলে-  সংসার আর দাম্পত্য সম্পর্ক দুইটা বিষয়কে একসঙ্গে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। অফিসের হাজারো কাজের চাপ সামলে সঙ্গীর জন্য সময় বের করা আর দুজন একসঙ্গে সময় কাটানো অনেক সময়ই অসম্ভব মনে হয়। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে অনেকে ‘মাইক্রো ডেটিং’ এ মনোযোগী হচ্ছেন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যস্ত জীবনে বিশাল এক পরিবর্তন আনতে পারে। কাজের মাঝে ছোট ছোট বিরতিগুলোকে অর্থবহ করে তোলাই মূলত মাইক্রো-ডেটিংয়ের আসল উদ্দেশ্য।

নতুন ডেটিং পদ্ধতির কল্যাণে দিনের ফাঁকা ছোট মুহূর্তগুলো কাজে লাগানো হয়ে থাকে। ধরুন আপনার হাতে মাত্র দশ মিনিট বা আধা ঘণ্টা সময় আছে। মাইক্রো ডেটিংয়ের জন্য এটুকু সময়ও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেন।

আরো পড়ুন:

লিভার ডিটক্সিফিকেশনের জন্য সাপ্লিমেন্ট খাওয়া কী জরুরি?

মেটার রোবট দেখতে হবে মানুষের মতো

শুরুতে এই ট্রেন্ড সম্পর্কে জেনে অবাক লাগতে পারে। কোনো জমকালো ডিনার নাইট বা নিখুঁত আউটিং পরিকল্পনা করার চাপ না নিয়ে এই অল্প সময়গুলো আপনাকে সঙ্গীর সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দেবে মাইক্রো-ডেটিং। কীভাবে সঙ্গীর সঙ্গে এই সংযোগ তৈরি করবেন, সেটি সম্পূর্ণ আপনার ওপর নির্ভর করছে। যেমন, ধরুন আপনি হয়তো একা একাই দিন শুরু করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু মাইক্রো-ডেটিংয়ের মাধ্যমে বরং সেদিন প্রিয়জনকে নিয়ে একসঙ্গে সকালের শুরুটা করতে পারেন।

একে অপরকে দিনের প্রস্তুতিতে সাহায্য করতে পারেন, সঙ্গে রাখতে পারেন এক কাপ কফি—এটাই হতে পারে আপনার দিনের সবচেয়ে সুন্দর মূহুর্ত।

কাজের ফাঁকে একটু বিরতি পেলে ফোনকলেই তৈরি করে নিতে পারেন সুন্দর মুহূর্ত। সন্ধ্যায় একটু ফ্রি সময় পেলে তখন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে ১৫ মিনিটের হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এ ধরনের ক্ষুদ্র সময়গুলো  অবহেলা করলে সম্পর্ক  প্রাণ হারাতে পারে। 

ভীষণ কাজের চাপে যারা দম ফেলার ফুরসত পান না কিংবা যারা বাচ্চার যত্নে সারাদিন ব্যস্ত থাকেন, তাদের জন্য মাইক্রো-ডেটিং হতে পারে সম্পর্ককে আরও সুন্দর করার দুর্দান্ত উপায়। জমকালো কোনো রেস্টুরেন্টে ব্যয়বহুল রিজার্ভেশন ছাড়াই সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে চাইলে মাইক্রো-ডেটিং হতে পারে একেবারে সঠিক সমাধান।

জড়িয়ে ধরা কিংবা হঠাৎ কোনো মজার আলাপচারিতায় প্রাণখোলা হাসি—প্রিয় মানুষের সঙ্গে এমন ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্ত খুঁজে নিয়ে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলা যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভালোবাসার মানুষটিকে সময় দেওয়ার জন্য মাইক্রো-ডেটিং খুব ভালো একটি উপায়।

যেকোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ধৈর্য আর অঙ্গীকার দুটোই খুব জরুরি। ব্যস্ত জীবনে ভিড়ের মাঝে একটি সহজ, ছোট্ট রুটিনই হতে পারে সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখার মূলমন্ত্র। তাই যদি আপনার হাতে সময় কম থাকে, কিন্তু এই ব্যস্ত জীবনের মাঝেই প্রিয়জনের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করতে চান, তবে মাইক্রো-ডেটিংয়ের সাহায্য নিন! সঙ্গীর সঙ্গে একান্তে একটি সংক্ষিপ্ত লাঞ্চ—হয়তো এটাই হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে চমৎকার ডেট।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দর র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

একটি আপেল যেভাবে বদলে দিয়েছে মহাবিশ্বের ধারণা

বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ বলকে স্থান–কালের বক্রতা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছিল। এর মাধ্যমে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে যায়। যখনই আপনি একটি কাপ ফেলে দেন বা নদীতে জোয়ার আসতে দেখেন, তখনই মহাকর্ষের প্রমাণ পাওয়া যায়। আবার আপনার ওজন মাটির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে অনুভব করার বিষয়টি মহাকর্ষের অভিজ্ঞতা বলা যায়। প্রাকৃতিক বিভিন্ন বলের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলেও মহাকর্ষ বলকে সবচেয়ে রহস্যময় বলা হয়। এই বল আমাদের পৃথিবীর কক্ষপথে ধরে রাখে। বলা যায়, মহাবিশ্বের সব গ্যালাক্সির ভাগ্য নির্ধারণ করে এই বল।

প্রকৌশলীরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, কক্ষপথের অবস্থান মঙ্গলে মিশন পরিকল্পনার সময় মহাকর্ষ বলের ওপর নির্ভর করেন। মাটির নিচের পানির ভান্ডার বা হিমবাহের বরফ গলে যাওয়া শনাক্ত করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে মহাকর্ষ বলের তথ্য। অনেক আগে এই মহাকর্ষ বল সম্পর্কে মানুষের তেমন ধারণা ছিল না। আইজ্যাক নিউটন বিজ্ঞানের অন্যতম গভীর এই বল সম্পর্কে বেশ বিস্তারিত ধারণা প্রবর্তন করেন। তিনিই প্রথম প্রশ্ন করেন, কোন বলের কারণে গাছের আপেল মাটিতে পড়ে? কোন শক্তির জোরে চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে অবস্থান করছে?

বিজ্ঞানী নিউটন ও আপেলগাছ নিয়ে বেশ জনপ্রিয় গল্প প্রচলিত আছে। ১৬৬৬ সালের দিকে নিউটন লিংকনশায়ারে তাঁর পারিবারিক বাড়ির বাগানে অবস্থানের সময় স্বাভাবিক এক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। একটি আপেলকে গাছ থেকে পড়তে দেখেন তিনি। সেই ঘটনা নিউটনকে নতুন ভাবনার সুযোগ করে দেয়। তিনি ভাবতে থাকেন, একটি আপেল যদি মাটিতে পড়ে তাহলে চাঁদও কি পড়ে যাচ্ছে? সেই চিন্তা থেকেই মহাকর্ষ বলের সর্বজনীন সূত্র আবিষ্কার করেন নিউটন। তাঁর ভাষ্যে, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু অন্য প্রতিটি বস্তুকে এমন একটি বল দিয়ে আকর্ষণ করে যা তাদের ভরের সমানুপাতিক ও তাদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। বিজ্ঞানী নিউটন পৃথিবী ও মহাবিশ্বের গতি ব্যাখ্যা করেন এই সূত্রের মাধ্যমে।

আরও পড়ুনপৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় বলে প্রমাণিত হয় যে ছবির কারণে০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৯১৫ সালে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা দেন। তিনি যুক্তি দেন যে মহাকর্ষ বস্তুকে একসঙ্গে টেনে আনা কোনো বল নয়, বরং ভর ও শক্তি দ্বারা স্থান–কালের নিজস্ব বাঁক বা বক্রতা। বিভিন্ন গ্রহ চলছে মহাজাগতিক কাঠামোর বক্রতা অনুসরণ করে। এটি বোঝার একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে স্থান–কালকে একটি টান টান কাপড়ের মতো কল্পনা করা। এর ওপর একটি ভারী টেনিস বল রাখলে কাপড়টি কিছুটা দেবে যায়। তখন কাছাকাছি থাকা সব ছোট বস্তুকে সেই দেবে যাওয়া অবস্থানের দিকে নেমে যাবে। ঠিক একইভাবে তারা ও গ্রহের মতো বিশাল বস্তুকে স্থান–কাল বাঁকিয়ে দেয়। এতে চারপাশের সবকিছু চলতে থাকে।

রহস্যময় মহাকর্ষ বল বেশ দুর্বলতম বল। এই বল সব পদার্থের ওপর, সব রকম দূরত্বজুড়ে কাজ করে। কখনোই বন্ধ হয় না। মহাজগৎকে শাসন করলেও মহাকর্ষ বল প্রকৃতির অন্যান্য বলের তুলনায় আশ্চর্যজনকভাবে দুর্বল। একটি প্রোটন ও একটি ইলেকট্রনের মধ্যেকার তড়িৎচৌম্বকীয় আকর্ষণ মহাকর্ষ বলের চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৩৬ গুণ শক্তিশালী। এ কারণেই পরমাণু, অণু ও তাদের রসায়ন তড়িৎচৌম্বকত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

আরও পড়ুনমহাবিশ্ব দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা১৩ জুলাই ২০২৫

নিউটনের সেই আপেলবাগান থেকে পাওয়া প্রশ্ন ও আইনস্টাইনের বক্র স্থান–কাল ধারণার মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা বদলে গেছে। মহাকর্ষ বল দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে চরম মহাজাগতিক ঘটনা পর্যন্ত সবকিছু শাসন করে। এই বল গ্রহকে আকার দেয়। ধূমকেতুকে পরিচালনা করে। বিভিন্ন গ্যালাক্সিকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে। মহাজগতের সবচেয়ে ঘন কোণে এই বল নিউট্রন তারা ও ব্ল্যাকহোলের মতো বহিরাগত বস্তু তৈরি করে। আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনেক আগেই এসব বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে একসঙ্গে পাঁচ সন্তান প্রসব প্রসূতির
  • একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দিলেন রেশমা
  • বিশ্বব্যবস্থা: যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে বাকি পশ্চিমাদের এগিয়ে আসতে হবে
  • একটি আপেল যেভাবে বদলে দিয়েছে মহাবিশ্বের ধারণা