সাগরে ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিপণন ও মজুদে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। যা আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এ নিষেধাজ্ঞায় ২২ দিনের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়া খুলনার প্রায় তিন হাজার জেলের জন্য সরকারিভাবে ৭৩.৪০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। জনপ্রতি ২৫ কেজি করে এ চাল জেলেদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

এর আগে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে শনিবার (৪ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে ইলিশ মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। 

প্রতি বছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এসময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ দেশের নদ-নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। খুলনায় ইলিশ আহরণকারী ২ হাজার ৯৩৬ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। 

মৎস্য বিভাগ বলছে, মা ইলিশ রক্ষায় এবার কঠোর অভিযান পরিচালিত হবে এবং কার্ডধারী জেলেদের মাথাপিছু ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।

জেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, খুলনার ২০টি নদ-নদীতে ইলিশ আহরণ হয়। এর মধ্যে পশুর, শিবসা, ভদ্রা, ঢাকী, চুনকুড়ি, ঝপঝপিয়া, কাজীবাছা, শৈলমারী, গেংরাইল, হরি নদী, ভদ্রা নদী, দেলুটি, হাবরখানা, ভৈরব, রূপসা, আতাই, মজুদখালী, কপোতাক্ষ, কয়রা ও শেখের বাড়িয়া নদীতে জেলেরা ইলিশ আহরণ করেন। এসব নদীতে ৩ হাজার ৬০১ জন জেলে শুধু ইলিশ আহরণ করে থাকেন।

এদিকে খুলনা জেলা প্রশাসক মো.

তৌফিকুর রহমান এক দাপ্তরিক নির্দেশনায় উল্লেখ করেছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঞ্জুরী করা ভিজিএফ (চাল) ইলিশের প্রধান মৌসুমে প্রজননক্ষম ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলে পরিবারের মধ্যে মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০১২-২০১৩ অনুযায়ী আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে উত্তোলন, বিতরণ/বণ্টন সম্পন্ন করবেন। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপ-বরাদ্দ প্রাপ্তির দুই কর্মদিবসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অনুকূলে ডিও (ছাড়পত্র) প্রদান ও বিতরণ সূচি প্রদান করবেন। ভিজিএফ চাল বিতরণকালে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধি এবং ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। কার্ডধারী জেলে ছাড়া অন্য কাউকে এ ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা যাবে না।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, “জেলার দিঘলিয়া, তেরখাদা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৩ হাজার ৬০১ জন ইলিশ আহরণকারী জেলে রয়েছে। তবে এবার ডুমুরিয়া বাদে বাকী ৬ উপজেলার ২ হাজার ৯৩৬ জন ইলিশ আহরণকারী জেলের জন্য বরাদ্দ এসেছে ৭৩.৪০ মেট্রিকটন ভিজিএফ (চাল)। বিগত বছরে ডুমুরিয়া উপজেলার জেলেদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণে বিলম্ব হওয়ার কারণে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে পরবর্তীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। ইলিশ আহরণকারী প্রতিটি জেলের জন্য ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ রয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ করার কথা রয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন তারা ইলিশ মাছ ধরতে পারবে না। এই সময়ে আহরণ, পরিবহন, বিপণন এবং মজুদেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।”

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অফ স র ভ জ এফ র জন য বর দ দ উপজ ল মৎস য ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

মৌসুম শেষে খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা

মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা।

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে সাগর। ফলে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকেল থেকে একে একে ফিশিং ট্রলারগুলো কূলে ফিরতে শুরু করেছে।

আরো পড়ুন:

পটুয়াখালীতে ৫ কেজির পোয়া মাছ ৮০ হাজারে বিক্রি

পদ্মায় জেলের জালে ধরা পড়ল ১১ কেজির কাতল

ঘাটে ফেরা জেলেরা জানান, সপ্তাহখানেক আগে তারা শেষ ট্রিপে সাগরে গিয়েছিলেন। প্রথম দিকে জাল ফেলতে পারলেও বুধবার থেকে প্রবল বাতাস শুরু হয়। এতে বাধ্য হয়ে দ্রুত জাল গুটিয়ে ঘাটে ফিরতে হয়েছে। পর্যাপ্ত মাছ ধরা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ ট্রলারই খালি হাতে ফিরে এসেছে।

শরণখোলা মৎস্য আড়ৎদার মো. কবির হাওলাদার বলেন, “বড় ট্রলারগুলো এবার বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রতিটি ট্রলারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হলেও একটিতেও আশানুরূপ মাছ উঠেনি। তবে ছোট ট্রলারগুলোতে অল্প পরিমাণে ইলিশ পাওয়া গেছে।”

শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, “এবার এমনিতেই ইলিশ তেমন পাওয়া যায়নি। আশা ছিল, নিষেধাজ্ঞার আগের শেষ ট্রিপে কিছুটা ক্ষতি পোষানো যাবে। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ায় বড় ট্রলারগুলো প্রায় শূন্য হাতে ফিরেছে। এতে ট্রলার মালিক ও জেলেরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।”

শরণখোলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন সরকার বলেন, “মা ইলিশ রক্ষায় ৪ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। মৌসুম শেষ হওয়ার আগে বৈরি আবহাওয়ার কারণে জেলেরা আশানুরূপ মাছ আহরণ করতে পারেননি। ইতোমধ্যে অনেক ট্রলার সাগর থেকে ফিরে এসেছে।”

তিনি আরো বলেন, “নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ ও বিপণন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। আইন অমান্য করলে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেককে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/শহিদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইলিশের আহরণ কমায় জেলেদের হতাশা, ক্রেতার অতৃপ্তি
  • মৌসুম শেষে খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা
  • মা ইলিশ রক্ষায় বিমান বাহিনী ড্রোন দিয়ে কাজ করবে: উপদেষ্টা