তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০% ধনীর সম্পদ বেড়েছে ৫ লাখ কোটি ডলার
Published: 4th, October 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বাড়ছেই। গত বুধবার প্রকাশিত ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) নতুন তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক উত্থানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন মার্কিন বড় বিনিয়োগকারীরা। বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর সম্পদ বেড়েছে ৫ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ কোটি মার্কিন ডলার।
ফেডের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর যাঁদের নিট সম্পদ ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখ ডলারের বেশি, তাঁদের সম্পদ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক শেষে রেকর্ড ১১৩ ট্রিলিয়ন বা ১১৩ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে যার পরিমাণ ছিল ১০৮ ট্রিলিয়ন বা ১০৮ লাখ কোটি ডলার।
সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়; বরং শীর্ষ ধনীদের সম্পদ অনেক দিন ধরেই বাড়ছে। ২০২০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর সম্পদ ৪০ ট্রিলিয়ন বা ৪০ লাখ কোটি ডলারের বেশি বেড়েছে।
ফেডের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সব সম্পদশালী গোষ্ঠীর সম্পদ বাড়লেও সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে শীর্ষ পর্যায়ের ধনীদের সম্পদ। দেশটির শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ গত এক বছরে ৪ লাখ কোটি ডলার বা ৭ শতাংশ বেড়েছে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে রেকর্ড ৫২ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
এ ছাড়া শীর্ষ শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ গত এক বছরে ১০ শতাংশ বেড়েছে। মহামারির পর থেকে এই শ্রেণির ধনীদের মোট সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২৩ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
শীর্ষ ধনীদের সম্পদ সম্প্রতি দ্রুত বৃদ্ধির পরও শতাব্দীকাল ধরে উচ্চবিত্তের মোট সম্পদের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে ছিল দেশটির মোট গৃহস্থালি সম্পদের ২৯ শতাংশ। ২০০০ সালে যা ছিল ২৮ শতাংশ। একই সময়ে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর হাতে ছিল মোট গৃহস্থালির সম্পদের ৬৭ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশের হাতে ছিল ৩৩ শতাংশ সম্পদ।
মূল চালিকা শক্তি শেয়ারবাজার
গত বুধবার প্রকাশিত নতুন তথ্য অনুযায়ী, এ বছর শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি ছিল শেয়ারবাজার। গত এক বছরে শীর্ষ ১০ শতাংশের হাতে থাকা করপোরেট শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মূল্য ৩৯ লাখ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৪৪ লাখ কোটি ডলারের ওপরে উঠেছে। দেশটির মোট করপোরেট শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ৮৭ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর হাতে।
সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে অতি ধনীদের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। ধনীদের সম্পদ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান আলট্রাটার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন কোটি ডলার বা তার বেশি সম্পদ থাকা মার্কিন নাগরিকদের সংখ্যা ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর যা বেড়েছে ২১ শতাংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৯০ জন, বিশ্বের মোট অতি ধনীর ৪১ শতাংশের বসবাস এই অঞ্চলে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, শীর্ষ ধনীদের সম্পদ দ্রুত বৃদ্ধির কারণে বাজার অর্থনীতিও বিভক্ত হয়ে পড়ছে। মুডিস অ্যানালিটিকসের অর্থনীতিবিদ মার্ক জ্যান্ডি জানান, চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোক্তা খরচের ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ করেছেন দেশটির শীর্ষ ধনীরা। ১৯৮৯ সাল থেকে এই তথ্য–উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৩৬ বছরের মধ্যে ভোক্তা ব্যয়ের দিক থেকে এটিই সর্বোচ্চ হার।
আয়-ব্যয়ের ধরন অনুযায়ী অর্থনীতিতে বিভিন্ন মডেল রয়েছে। সেগুলো ইংরেজি বিভিন্ন হরফ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এখন যা হচ্ছে, তা মূলত এই কে আকৃতির অর্থনীতি (যখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বা বৃদ্ধি সমানভাবে ঘটে না)। সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষ পর্যায়ের সীমিতসংখ্যক গ্রাহকের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
মুডিস অ্যানালিটিকসের অর্থনীতিবিদ মার্ক জ্যান্ডি বলেছেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘস্থায়ী ও গভীর পতন হলে অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে অতি ধনীদের ওপর অর্থনীতির নির্ভরশীল হয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁরা শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি দেখে উচ্ছ্বসিত। এখন যদি অতিমূল্যায়িত শেয়ারবাজার কোনো কারণে হঠাৎ পড়ে যায়, তাহলে তাঁরা দ্রুতই ব্যয়ের লাগাম টানবেন। অর্থনীতি এমনিতেই দুর্বল। এ অবস্থায় শেয়ারের দাম কমে গেলে তা অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি তৈরি করতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ র ষ ১ দ শট র রব জ র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান নাম নিয়ে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বদদ্বীনি, কুফরি ও ভ্রান্ততার বিরুদ্ধে উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে যারা মুসলমান নাম নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে হেফাজত আমির এ কথা বলেন। জাতীয় উলামা কাউন্সিল বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ‘জাতীয় উলামা সম্মেলন-২০২৫’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
জাতীয় উলামা কাউন্সিলের সভাপতি ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনেক আলেম-উলামা অংশ নেবেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উলামায়ে কেরামের পরস্পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাম্য নয়।’
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ইসলামি রাজনীতিতে সব সময় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়ানো যায় না। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভূমিকা রাখতে হয়। আজ ইসলামি রাজনীতির সোনালি সময় চলছে। আমরা যদি সুযোগ কাজে না লাগাই, তাহলে সামনে বড় ধরনের ভোগান্তি তৈরি হবে।’
মুন্সিগঞ্জের জামি’আ ইসলামিয়া হালীমিয়া মাদ্রাসার প্রধান ও মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনে বাতিলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়তে লড়তে মরব, কিন্তু বিভক্ত হব না ইনশা আল্লাহ।’ তিনি বলেন, ১৬ নভেম্বরের কাদিয়ানিবিরোধী আন্দোলন শেষ হয়নি, শুরু হয়েছে মাত্র। সরকারকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, পরেরবার আর সুযোগ দেওয়া হবে না।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। যারা কাজ করতে চায়, তাদের বাধা দেব না। আমরা নিজেরা নিজেদের শত্রু হব না, ইনশা আল্লাহ।’
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ, জাতীয় উলামা কাউন্সিলের মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা সালাহুদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুশতাক আহমদ প্রমুখ।