ভাগ্য যাচাই করতে ছয় মাস আগে লটারির টিকিট কিনেছিলেন জার্মানির এক ব্যক্তি। তখন মার্চ মাস। জার্মানির আবহাওয়া তখনো বেশ ঠান্ডা। বাইরে বের হলে কোট পরতে হয়। ফ্রাঙ্কফুর্টের ওই বাসিন্দা লটারির টিকিট কিনে সেটি সযতনে রেখে দেন কোটের পকেটে।

মার্চ পেরিয়ে এপ্রিল আসে, তারপর জুন-জুলাই। জার্মানিতে বসন্ত পেরিয়ে গ্রীষ্ম আসে। মার্চের পর সেই কোট আর পরেননি ওই ব্যক্তি।

এদিকে লটারি কোম্পানি নির্দিষ্ট সময়ে লটারি বিজয়ী টিকিটের নম্বর ঘোষণা করে। পুরস্কারের অঙ্ক বিশাল—১ কোটি ৫৩ লাখ ইউরোর বেশি (২১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা প্রায়)।

এক দিন যায়, দুই দিন যায়, তিন দিন যায়—কেউ টিকিট হাতে পুরস্কার দাবি করতে আসে না। লটারি কোম্পানি রীতিমতো হতবাক। লটারি কোম্পানি থেকে পুরস্কার বিজয়ীর খোঁজ শুরু হয়; পত্রিকায়, রেডিওতে বিজ্ঞাপন দিয়ে চলে বিজয়ী টিকিটের খোঁজ, ছাপানো হয় পোস্টার।

বসন্ত পেরিয়ে গ্রীষ্ম আসে, পুরস্কার বিজয়ীর খোঁজ মেলে না। টিকিট যে পড়ে আছে কোটের পকেটে। টিকিটের মালিক তা বেমালুম ভুলে বসে আছেন।

একদিন রেডিওতে সৌভাগ্যবান লটারি বিজয়ীকে খোঁজার খবর শুনতে পান ওই ব্যক্তি।

লটারি কোম্পানিকে সেই ব্যক্তি বলেন, ‘এ সপ্তাহান্তে আমি টিকিটটি খুঁজে পেয়েছি। তার আগপর্যন্ত সেটি আমার কোটের পকেটে ভাঁজ করা অবস্থায় পড়ে ছিল।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘যখন আমি ফোনে নম্বরগুলো মিলিয়ে দেখি এবং পুরস্কারের অঙ্ক দেখি, আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্য ভালো, সে সময় আমি বসে ছিলাম, না হলে হাঁটু ভেঙে পড়ে যেতাম।’

ওই ব্যক্তি নিজের নাম সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে চান না। তিনি বলেন, ‘রেডিওতে যখন শুনছিলাম লটারি বিজয়ীর খোঁজ চলছে, তখন মনে মনে ভেবেছিলাম, লটারিতে পুরস্কার জেতার পরও তা আনতে যান না, এমন বোকা কে হতে পারে? তবে কখনো মনে হয়নি, তারা যাঁকে খুঁজছিল, সে ব্যক্তিটি আমিই হতে পারি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্ঘটনায় মা হারানো শিশুটির কান্না থামছে না

‘রাতে হঠাৎ ঘুমঘুম চোখে কান্না শুরু করে। একবার কান্না শুরু হলে তা আর থামতেই চায় না। তখন মাঝরাতে তাকে বাইরে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘুমায়, ততক্ষণ নিজের সঙ্গে রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে কোনোরকমে মাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করি। তবে কান্না থামাতে পারছি না।’

কথাগুলো বলছিলেন এক বছরের শিশু সাফওয়ান ইসলামের বাবা মো. ইমন ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মৌলভীপাড়া এলাকায় রেললাইনে বিকল হয়ে পড়া একটি সিএনজি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রেন। এ সময় শিশু সাফওয়ানের মা সানজিদা সুলতানা (২৫) ও নানি মাহমুদা বেগমের (৪৫) মৃত্যু হয়। এর পর থেকে সাফওয়ানকে সারাক্ষণ নিজের কাছে রাখছেন তার বাবা ইমন।

ইমনের বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ঘাটগড় এলাকায়। তিনি একটি রড তৈরির কারখানায় ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত। যে জায়গাটিতে দুর্ঘটনা হয়েছিল তা ইমনের শ্বশুরবাড়ি থেকে মাত্র চার শ গজ দূরে। পুলিশ জানায়, রেলক্রসিংটি অবৈধ। ঘটনার দিন সেখানে কোনো গেটম্যানও ছিল না।

আমরা কত আনন্দ করে ছেলের জন্মদিন পালন করেছি।  অথচ এক মাস না যেতেই আমার ছেলেটি তার মাকে হারাল। গোছানো সংসারটা যেন তছনছ হয়ে গেল।শিশু মো. ইমন ইসলামের বাবা।

গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ইমনের বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। এক পাশে ছেলে সাফওয়ানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন তিনি। অনেকেই ছেলের এ অবস্থা দেখে ইমনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন। সাফওয়ান চোখ মেলে আশপাশে তাকিয়ে দেখছে। আর কিছুক্ষণ পরপরই কান্না করছে।

ইমন প্রথম আলোকে বলেন, মা মারা যাওয়ার দিন বাড়িতে অনেক লোকের ভিড় থাকায় সাফওয়ান তেমন কান্না করেনি। তবে রাত হতেই মাকে না পেয়ে কান্না শুরু করে। এর পর থেকে প্রতি রাতেই কান্না করে। দিনের বেলায় বাড়িতে মানুষের ভিড় থাকায় তেমন কান্না করে না। তবে যখন বুকের দুধ খাওয়ার সময় হয়, তখন আর কান্না থামিয়ে রাখা যায় না।

ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মৌলভী পাড়া এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ