কখনো কখনো আমাদের দুঃখ-কষ্টগুলো এত বড় মনে হয় যে সবরের সীমানা যেন তার প্রাচীর ছুঁয়ে ফেলে। অজান্তেই মনের গভীর থেকে বেরিয়ে আসে, ‘আর কত সবর করব?’
এমন মুহূর্তে নিজেকে অপরাধী বা গুনাহগার মনে হয়। বারবার প্রশ্ন জাগে, ‘আমি কি আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য হতে পেরেছি? আমি কি তাঁর প্রিয় বান্দা হতে পেরেছি?’
মনে হয়, আল্লাহ কেবল তাঁর প্রিয় বান্দাদেরই পরীক্ষা নেন। তবে অন্তরের গভীরে এই সত্য জানা থাকে যে, আল্লাহ দয়াময়, তিনি তাঁর বান্দাকে মায়ের চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসেন। মা সন্তানের প্রতি ভুল করতে পারে, কিন্তু দয়ালু রব কখনো তাঁর বান্দার অকল্যাণ চান না।
যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৫১৬তবু কখনো কখনো পাহাড়সম কষ্টের মুহূর্তে মনে হয়, হয়তো গুনাহের কারণেই আল্লাহ এই শাস্তি দিচ্ছেন। মনে হয়, এটি গুনাহের কাফফারা। অথচ আমরা জানি না, আল্লাহ আসলে কী করছেন। কষ্টের সময়ে মন কিছুই মানতে চায় না।
তাই বিপদ ও কষ্টের মুহূর্তে আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলকে শক্তভাবে ধরে রাখতে হয়।
বিপদে তাওয়াক্কুলের গুরুত্বতাওয়াক্কুল মানে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। বিপদে ভীত বা দিশাহারা হয়ে আল্লাহর প্রতি আশা ও ভালোবাসা হারানো ঠিক নয়। এ সময়ে সবর, সালাত এবং দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া জরুরি।
আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
আরও পড়ুনকুনুতে নাজেলা: বিপদে আল্লাহর কাছে আশ্রয়ের দোয়া০৮ জুলাই ২০২৫তিনিই সর্বোত্তম সাহায্যকারী ও পরিত্রাণদাতা। তাওয়াক্কুল, অর্থাৎ আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা, বিপদের সময় আমাদের সবরের প্রধান হাতিয়ার।
রাসুল (সা.
তাওয়াক্কুলের অর্থ হলো আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরতা ও বিশ্বাস রাখা যে তিনি আমাদের জন্য সর্বোত্তম ফলাফল নির্ধারণ করবেন।
সদকা বিপদ থেকে মুক্তি দেয় এবং ইস্তিগফার গুনাহ ক্ষমার পথ খুলে দেয়।সবর ও দোয়ার মাধ্যমে তাওয়াক্কুলকষ্টের সময়ে সবর করা কঠিন, কিন্তু এর কোনো বিকল্প নেই। সবর মানে বিপদকে তাকদির হিসেবে মেনে নিয়ে ধৈর্য ধরা। এ সময় সদকা ও ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা করা) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইস্তিগফারের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি পায় এবং দুঃখ-কষ্ট দূর হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৮১৯)
সদকা বিপদ থেকে মুক্তি দেয় এবং ইস্তিগফার গুনাহ ক্ষমার পথ খুলে দেয়।
আল্লাহর কাছে দোয়া করা তাওয়াক্কুলের একটি অপরিহার্য অংশ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া হলো ইবাদতের মূল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭১)
বিপদের সময় আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু ফলাফলের ওপর অতিরিক্ত উদ্বেগ না করে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে।
আরও পড়ুনধর্মে পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণের বিপদ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫বিপদকে দোয়া ও ক্ষমায় রূপান্তরআল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিপদ ও কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করেন, যাতে তাঁদের গুনাহ ক্ষমা করা যায় এবং তাঁদের ইমানের শক্তি পরীক্ষা করা যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের ওপর এমন কোনো বিপদ আসে না, এমনকি একটি কাঁটার আঘাতও, যার দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করেন না।’ (বুখারি, সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৪১)
তাই বিপদকে শাস্তি হিসেবে না দেখে এটিকে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
তাওয়াক্কুলের শক্তিশালী ছায়াতলে সবর ও দোয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের দুঃখ-কষ্টগুলোকে আল্লাহর দয়ায় রূপান্তর করতে পারি। ইস্তেগফারের মাধ্যমে গুনাহ ক্ষমা হয় এবং দোয়ার মাধ্যমে বিপদ থেকে মুক্তির পথ খোলে।
বিপদে তাওয়াক্কুল একজন মুমিনের ইমানের শক্তির পরিচায়ক। কষ্টের সময় সবর, সালাত, দোয়া, সাদাকা এবং ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখলে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার পথ প্রশস্ত হবে। আল্লাহর ওপর ভরসার মন্ত্রবিপদ, দুঃখ-কষ্টে আমাদের একমাত্র অভিভাবক আল্লাহ। তাই সর্বাবস্থায় আমাদের উচিত এই দোয়া পড়া: হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল। (আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম সাহায্যকারী, কার্যসম্পাদনকারী)। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩)
বিপদে তাওয়াক্কুল একজন মুমিনের ইমানের শক্তির পরিচায়ক। কষ্টের সময় সবর, সালাত, দোয়া, সাদাকা এবং ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখলে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার পথ প্রশস্ত হবে।
আল্লাহ আমাদের যাকে বেশি ভালোবাসেন, তাকে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, যাতে তিনি তাকে গুনাহমুক্ত করেন এবং তাঁর নৈকট্যে আনেন। তাই বিপদকে ভয় না করে তাওয়াক্কুলের ছায়াতলে আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার আশায় এগিয়ে যেতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিপদে সবর ও তাওয়াক্কুলের তৌফিক দান করুন।
আরও পড়ুনআল্লাহর ওপর ভরসা রাখার ৪ উপায়০৪ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ণ ভরস আম দ র দ পর ক ষ বল ছ ন আল ল হ র জন য র ভরস র ওপর ব পদক
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান নাম নিয়ে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বদদ্বীনি, কুফরি ও ভ্রান্ততার বিরুদ্ধে উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে যারা মুসলমান নাম নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে হেফাজত আমির এ কথা বলেন। জাতীয় উলামা কাউন্সিল বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ‘জাতীয় উলামা সম্মেলন-২০২৫’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
জাতীয় উলামা কাউন্সিলের সভাপতি ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনেক আলেম-উলামা অংশ নেবেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উলামায়ে কেরামের পরস্পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাম্য নয়।’
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ইসলামি রাজনীতিতে সব সময় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়ানো যায় না। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভূমিকা রাখতে হয়। আজ ইসলামি রাজনীতির সোনালি সময় চলছে। আমরা যদি সুযোগ কাজে না লাগাই, তাহলে সামনে বড় ধরনের ভোগান্তি তৈরি হবে।’
মুন্সিগঞ্জের জামি’আ ইসলামিয়া হালীমিয়া মাদ্রাসার প্রধান ও মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনে বাতিলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়তে লড়তে মরব, কিন্তু বিভক্ত হব না ইনশা আল্লাহ।’ তিনি বলেন, ১৬ নভেম্বরের কাদিয়ানিবিরোধী আন্দোলন শেষ হয়নি, শুরু হয়েছে মাত্র। সরকারকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, পরেরবার আর সুযোগ দেওয়া হবে না।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। যারা কাজ করতে চায়, তাদের বাধা দেব না। আমরা নিজেরা নিজেদের শত্রু হব না, ইনশা আল্লাহ।’
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ, জাতীয় উলামা কাউন্সিলের মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা সালাহুদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুশতাক আহমদ প্রমুখ।