দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি, মৃত্যু ১৭ জনের
Published: 5th, October 2025 GMT
প্রবল বর্ষণে পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি জনপদ দার্জিলিং ও এর কাছের এলাকাগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাহাড়ের অন্তত ৭টি জায়গায় ধস নেমেছে। আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে আশঙ্কা করা হয়েছে। জানা গেছে, মিরিকে লোহার সেতু ভেঙে অন্তত নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। সুখিয়ায় মারা গেছেন সাতজন। এ ছাড়া বিজনবাড়িতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আগামীকাল সোমবারই সেখানে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত কলকাতায় প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্নের কন্ট্রোল রুমে রয়েছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘১২ ঘণ্টা ধরে টানা তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। মোট সাতটি জায়গায় ধস নেমেছে। আমি পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘ভুটানে প্রবল বর্ষণের কারণে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এই বিপর্যয় দুর্ভাগ্যজনক। দুর্যোগ তো আমাদের কারও হাতে নেই। আমরা মর্মাহত।’
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, একাধিক রাস্তায় ধস নেমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আটকে পড়েছেন পর্যটকেরা। সিকিম ও কালিম্পংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। বিভিন্ন অবরুদ্ধ জায়গা থেকে পর্যটকদের উদ্ধারকাজ চলছে।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে। তাতেই বিধ্বস্ত পাহাড়ের বহু জায়গা। বহু জায়গায় ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা হয়েছে মিরিক অঞ্চলে। রাতের টানা বৃষ্টিতে দুধিয়া ও মিরিকের মাঝামাঝি একটি লোহার সেতু ভেঙে পড়ে নদীতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তখনই সেতুর ওপর দিয়ে কিছু মানুষ চলাচল করছিলেন। মিরিকে প্রবল স্রোতে ভেসে যায় অন্তত ৯ জনেরও বেশি। তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও কয়েকজন নিখোঁজ, তাঁদের সন্ধানে চলছে তল্লাশি অভিযান।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে উঠে এসেছে জাতীয় সড়কে। তিস্তাবাজারের কাছে ২৯ মাইল ভালুখোলায় তিস্তার পানি উঠে বন্ধ হয়ে গেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এ ছাড়া রাতে মিরিক ও দুধিয়ার মাঝের লোহার সেতুর একাংশ বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে। ফলে শিলিগুড়ি থেকে মিরিকের যোগাযোগ বন্ধ। এমনকি দার্জিলিং শহরের সঙ্গেও যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, দিলারামের কাছে রাস্তায় ধস নেমেছে। দার্জিলিংয়ে যাতায়াতের প্রধান সড়ক সে কারণে অবরুদ্ধ। এ ছাড়া কালিম্পং ও সিকিমের দিকে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্যোগে দিশাহারা বন্য প্রাণীরাও। জঙ্গল থেকে গ্রামের দিকে চলে আসছে তারা। দুটি হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। একাধিক নদী বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে।
এদিকে দার্জিলিংয়ের বিপর্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ রোববার নিজের এক্স হ্যান্ডলে এ বিষয়ে পোস্ট করেছেন তিনি। দার্জিলিংয়ে মৃতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন মোদি। যাঁরা আহত, তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। জানিয়েছেন, দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতির দিকে কেন্দ্র সব সময় নজর রাখছে। সব রকম সাহায্যের জন্য প্রস্তুত কেন্দ্র।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত য় ধস ন ম কর ছ ন প রবল
এছাড়াও পড়ুন:
চালকের আসনে সরকার, সিদ্ধান্তও তাদের দিতে হবে
অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারকাজে হাত দিয়েছিল, সেই সংস্কার বিষয়ে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা ছিল না। এটা আইনের সংস্কার, সার্বিকভাবে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার। এই সংস্কারপ্রক্রিয়ায় অনেক আইনি বিষয়েও আগে থেকে অনেকের ধারণা ছিল না। সে কারণে আলোচনা যত এগোচ্ছে, ততই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।
এই সরকারকে অনেকে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত সরকার বলছে। অনেকে বলছে বিপ্লবের পরে পরিবর্তনের অভিপ্রায়ে গঠিত সরকার। সংবিধান রক্ষা করার অঙ্গীকার করে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সংবিধানের বৃত্তের মধ্যে থেকে অনেক পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।
ঐকমত্য কমিশন গঠন ও পরবর্তী সময়ে সরকার ছিল অনুঘটকের ভূমিকায়। কিন্তু পরে দেখা গেল, সরকার হাত গুটিয়ে নিল। ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলো। তবে অনেক প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া হয়। যারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে তারা বলেছিল, সরকার গঠনের পরে তারা জনগণের কাছে যাবে এবং জনগণের রায় অনুযায়ী সেটি তারা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সরকার নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে দিল। এই নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হলো। ভিন্নমত তুলে দিয়ে সরকার রাজনীতি দলগুলোকে মুখোমুখি করে দিল।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জট খোলার চেষ্টায় সরকার ২ ঘণ্টা আগেজুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার রায় ঠিকই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দিল। সরকার ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আট মাস ধরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। কিন্তু এখন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিবে। এটি সরকারের একধরনের বাতুলতা। এভাবে কোনো সমাধান হবে না। যে কারণে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে।
সরকার এটি কোনো অভিমান থেকে বলেছে কি না, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোকে মুখোমুখি করা হলো। এর আগে সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছে, তা সব দল মানেনি। এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি যে সবাই মানবে, সেই ভরসা করা উচিত নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন কীভাবে করা যায়, সেটি সরকারকে চিন্তা করতে হবে।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে দ্রুত সব দলের অভিন্ন মত চায় সরকার ০৩ নভেম্বর ২০২৫দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে কথা বলতে হবে সরকারকে। এর মধ্য থেকে পথ বের করে আনতে হবে। নইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, বিতর্ক বাড়বে। এখন সব দায়িত্ব সরকারের। সরকার এখন চালকের আসনে, অনুঘটকের আসনে নয়। নির্বাচন এবং ট্রানজিশনের এই সময়ে সরকারকে নেতৃত্ব দিতে হবে। আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। দেশের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো আগেও ছাড় দিয়েছে, এখনো ছাড় দেবে বলে আশা করা যায়।
মাহমুদুর রহমান মান্না: সভাপতি, নাগরিক ঐক্য।