যুক্তরাজ্যে রাতের বেলায় মসজিদে ঢুকে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা
Published: 5th, October 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের পূর্ব সাসেক্সের পিসহ্যাভেন শহরে অবস্থিত একটি মসজিদে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভেতরে দুজন লোক থাকা অবস্থায় আগুন দেওয়ার এই ঘটনাটি ঘৃণামূলক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে দেশটির পুলিশ।
সিএনএন জানিয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ উপকূলে ব্রাইটনের কাছে পিসহেভেনের মসজিদে আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে যান জরুরিকর্মীরা।
আরো পড়ুন:
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি: প্রতিশোধ না নিতে ইসরায়েলকে সতর্ক করল যুক্তরাজ্য
ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে যুক্তরাজ্যে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মসজিদের এক স্বেচ্ছাসেবক সিএনএনকে বলেন, শনিবার রাতে দুজন মুখোশধারী জোর করে মসজিদের দরজা খোলার চেষ্টা করে। এরপর তারা সিঁড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মসজিদের ব্যবস্থাপকের জানান, মসজিদের চেয়ারম্যান এবং একজন মুসল্লি ভেতরে চা খাচ্ছিলেন- দুজনেই ষাটোর্ধ্ব। ঠিক তখনই তারা বাইরে থেকে একটি বিকট শব্দ শুনতে পান এবং আগুনের শিখা প্রধান প্রবেশপথজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তারা মসজিদ থেকে বের হয়ে যান।
মসজিদের ব্যবস্থাপকের মতে, ভেতরে থাকা লোকেরা সহজেই মারা যেতে পারত। দুর্বৃত্তরা সর্বাধিক ক্ষতি করার পূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল।
রবিবার সাসেক্স পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই অগ্নিকাণ্ডে কেউ আহত না হলেও, মসজিদের সামনের প্রবেশপথ এবং বাইরে পার্ক করা একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডিটেকটিভ সুপারিনটেনডেন্ট ক্যারি বোহনা বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি এই ঘটনার জেরে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর কী প্রভাব পড়বে।”
তিনি আরো বলেন, “ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এটিকে ঘৃণামূলক অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।”
প্রায় চার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ছোট এই মসজিদটিতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন নিয়মিত নামাজ পড়তেন।
লুইস জেলার লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি জেমস ম্যাকক্লেরি এক্স-পোস্টে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “পিসহ্যাভেনের মসজিদে আগুন লাগার খবরটি ভয়াবহ। এটি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দারা ব্যবহার করেন এবং এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
ম্যানচেস্টার শহরে ইহুদি উপাসনালয় সিনাগগে প্রাণঘাতী হামলার কয়েক দিন পর সাসেক্সের মসজিদে আগুন লাগানোর এই ঘটনা ঘটলো।
স্থানীয় অলাভজনক সংস্থা ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ মুসলিম ফোরামের চেয়ারম্যান তারিক জং দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, তিনি ম্যানচেস্টারে উপাসকদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার পর ছুরি হামলায় দু’জনের প্রাণহানি এবং শনিবার মসজিদে সন্দেহজনক অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হতবাক।
তিনি বলেন, মানুষ কখনোই এই ভেবে উপাসনালয়ে যায় না যে, তারা আক্রান্ত হতে পারেন। তারা সেখানে প্রায়শ্চিত্ত, ক্ষমা প্রার্থনা, নিজেদের এবং পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করতে যান। সেখানে কেউ তাদের খুন, গুলিবর্ষণ, ছুরিকাঘাত কিংবা আগুন ধরিয়ে দিতে চাইতে পারেন, এমন চিন্তা কখনোই তাদের মনে আসে না।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামাসের হামলা এবং পরবর্তীতে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর থেকে ব্রিটেনে ইহুদি-বিদ্বেষ এবং মুসলিম-বিদ্বেষ উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর জ য য ক তর জ য র মসজ দ মসজ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বেবি শার্ক গান বানিয়ে কোম্পানির বাজার মূলধন প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা
যাদের বাসায় এখন ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তাঁরা জানেন, গত এক দশকে সেই শিশুরা কোন কোন ছড়া/গান শুনেছে। এ প্রজন্ম ইউটিউব ভিডিওর সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। ফলে এই বয়সী শিশুদের জন্য কনটেন্ট বানিয়ে অনেকেই বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন।
বিষয়টি হলো ‘বেবি শার্ক’ নামের ৯০ সেকেন্ডের এক শিশুতোষ গানের ভিডিও এখন ইউটিউবের সর্বাধিক দেখা কনটেন্ট, ভিউ ছাড়িয়েছে ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি। ২০২০ সালেই এটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও কনটেন্টের স্বীকৃতি পায়। এরপর তা থেমে থাকেনি—অগ্রগতি চলছেই।
ফলে এই ভিডিও যারা বানিয়েছে, অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পিংকফংয়ের বাজার মূলধন ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৯০৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারে পিংকফংয়ের লেনদেন শুরু হয়। প্রথম দিনেই শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এর মূল কারণ যে এই বেবি শার্ক ডু ডু ডু, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না। খবর বিবিসি।
এর জনপ্রিয়তা কেমন, সে বিষয়ক এক বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যাক। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক মা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর পর বা অনেক ক্ষেত্রে কাজের সময় তাঁর কানে যেন এক শিশুতোষ ছড়াগান বাজতে থাকে। সেটি হলো, বেবি শার্ক ডু ডু ডু, বেবি শার্ক। যাদের বাড়িতে ইন্টারনেট এবং ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তাঁদের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন, যিনি এই গান শোনেননি। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, যাদের বাড়িতে ইন্টারনেট আছে, সেই বাড়ির ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা এই গান শোনেনি, এমন নজির খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এই ভিডিও দুনিয়াজোড়া ঠিক কেমন আলোড়ন তুলবে, সেটি নিশ্চিতভাবেই কেউ আগে ভাবেননি। ২০১৬ সালের জুনে ভিডিওটি প্রকাশের অনুমতি দেন পিংকফংয়ের প্রধান নির্বাহী কিম মিন-সিওক। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবিনি, এটি অন্য কনটেন্ট থেকে আলাদা কিছু হবে। পরে বুঝেছি, এটি আমাদের বৈশ্বিক যাত্রাপথের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
২০১০ সালে ‘স্মার্টস্টাডি’ নামে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি মূলত ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করত। মাত্র তিনজন কর্মচারী নিয়ে শুরু করে পরবর্তীকালে ছোট শিশুদের দিকে মনোযোগ দিয়ে কনটেন্টে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। একপর্যায়ে কর্মীর সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছায়। এরপর তারা সহজ, শিক্ষাভিত্তিক গেম ও কনটেন্টকে অগ্রাধিকার দেয় এবং তখনই বেবি শার্কের বাজার মাত করে।
ব্রিটিশ মিডিয়া বিশ্লেষক কেভিন চিউর মতে, বেবি শার্ক গানটি ‘শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়, যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সম্ভবত বিরক্তিকর। তবে কিম মিন-সিওকও এই গানে আসক্তি ধরানোর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, ‘এটি কে-পপ গানের মতো—খুব দ্রুতলয়ের ও ছন্দময়। ফলে আসক্তি তৈরি করতে পারে।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শিশুদের মধে৵ এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। অনলাইনে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বেবি শার্ক গানটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিওর স্বীকৃতি অর্জন করে। এমনও হয়েছে, ভিডিওটি প্রকাশের পর প্রথম দিকে এই কোম্পানি যত আয় করেছে, তার প্রায় অর্ধেক এসেছে এই গান থেকে। সেই সঙ্গে নিত্যনতুন কনটেন্ট তো তারা বানিয়েছে।
একটি গাননির্ভর নয়২০২২ সাল থেকে পিংকফং কোম্পানির অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি যেমন বেবেফিন ও সিলুকেরও দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে কোরিয়া ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মিন জাং কিম বলেন, কোম্পানিকে প্রমাণ করতে হবে, এই সফলতা শুধু বেবি শার্কের ওপর নির্ভরশীল নয়।
কিম মিন-সিওকের জোর দাবি, বেবি শার্ক ছাড়া অন্যান্য কনটেন্ট থেকেও তাদের ব্যবসা বাড়ছে। বর্তমানে পিংকফংয়ের আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসছে বেবি শার্ক থেকে। বেবেফিন থেকে আসছে কোম্পানির আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ।
স্টক মার্কেটে অভিষেক থেকে প্রায় ৫২ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ২০ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে পিংকফং। কিম জানান, এই অর্থ কনটেন্ট ও চরিত্রের উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে।
উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকতে চায় না তারা। মানুষের পছন্দ কী, সে বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে প্রযুক্তিভিত্তিক কনটেন্ট বানাতে চায় তারা। কিম বলেন, অনেক নির্মাতা সারা জীবন ধরে যে স্বপ্ন দেখেন, পিংকফং এরই মধ্যে তা অর্জন করে ফেলেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে হবে, তারা কেবল একটি হিট গান–নির্ভর কোম্পানি নয়।
আইনি চ্যালেঞ্জপিংকফংয়ের যাত্রাপথ একেবারে কণ্টকমুক্ত ছিল না। ২০১৯ সালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগ—এক মার্কিন সংগীতজ্ঞের সুর তারা নকল করেছে; কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। আদালত বলেন, জনপরিসরে প্রচলিত লোকগান থেকে তারা সুর নিয়েছে।
আদালতের এই রায়ে তারা জোর পায়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলো।