আট দফা দাবি বাস্তবায়নে ১৫ দিনের সময় দিল সংগ্রাম কমিটি
Published: 5th, October 2025 GMT
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধ এলাকা থেকে ‘পানি সরাও, নদী বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ দাবি সামনে রেখে গণসমাবেশ হয়েছে। রোববার বিকেলে অভয়নগর উপজেলার মশিয়াহাটী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ গণসমাবেশ হয়। ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি এ গণসমাবেশের আয়োজন করে।
গণসমাবেশ থেকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার সমাধানে আট দফা দাবি জানানো হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নিলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিকেল চারটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে গণসমাবেশ শুরু হয়। এরপর ২০১৬ সালে ভবদহের পানি সরানোর দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের নির্যাতনে আহত ব্যক্তিদের উত্তরীয় পরিয়ে এবং জাতীয় পতাকা হাতে দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়।
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আবদুল হামিদ, নূরুজ্জামান সরদার, উপদেষ্টা তসলিম-উর-রহমান, সদস্যসচিব চৈতন্য কুমার পাল, সদস্য অনিল বিশ্বাস, শেখর বিশ্বাস, খুলনার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোজিত বাংলা, সিঙ্গিয়া বিল আন্দোলনের নেতা আবদুল মান্নান মোড়ল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যশোরের সদস্যসচিব আবু সাঈদ, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা আমিনুর রহমান, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন তৃষা চামেলী।
বক্তারা বলেন, ৪০ বছর ধরে ভবদহ এলাকার মানুষ পানির মধ্যে বসবাস করছেন। বিলে কোনো ফসল নেই। হামলা-মামলা নিপীড়ন–নির্যাতন উপেক্ষা করে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধ মানুষ দীর্ঘ আন্দোলন–সংগ্রাম করে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জলাবদ্ধতার সমাধানে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমডাঙ্গা খাল সংস্কার, ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার নদী খনন, ভবদহ স্লুইসগেটের ২১ ভেন্টের ১২টি গেট খুলে দেওয়া ও পর্যায়ক্রমে বিলে বিলে টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বা জোয়ারাধার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও কিছু অসংগতি প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য অর্জনে অন্তরায় সৃষ্টি করছে।
বক্তারা আরও বলেন, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নদী খনন করতে হবে, কোনো ঠিকাদার নিয়ে নয়। নদী খননের সঙ্গে সঙ্গে কোনো একটি বিলে টিআরএম চালু করতে হবে। তা না হলে নদী কেটে কোনো লাভ হবে না। দ্রুত সময়ে নদী ভরাট হয়ে যাবে।
গণসমাবেশ থেকে আট দফা প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের সব স্লুইসগেট খুলে দেওয়া এবং আমডাঙা খালের জমি অধিগ্রহণ ও গেটম্যান নিয়োগ করে গেট ওঠানামার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না হলে ২১ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
প্রস্তাবগুলো হলো ১.
২. আমডাঙা খালের স্লুইসগেটের গেটম্যান নেই। গেট ওঠানামা করানো হচ্ছে না। ফলে যে পরিমাণ পানিনিষ্কাশিত হতে পারত, তা হতে পারছে না। এ মুহূর্তে গেটম্যান নিয়োগ ও গেট ওঠা-নামানোর বন্দোবস্ত করতে হবে।
৩. ২০১২ সাল থেকে কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের চক্রান্ত ও তৎকালীন সরকারের গণবিরোধী নীতির কারণে ভবদহ স্লুইসগেটের ২১-ভেন্ট ও ৯-ভেন্ট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে রাখায় ভবদহ স্লুইসগেট থেকে বড় আউড়িয়া মোহনা পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার নদী ভরাট হয়ে গিয়েছিল এবং নদী কাটার নামে লুটপাটের কারণে জলবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। বর্তমানে ২১-ভেন্টের ১২টি গেট খুলে দেওয়ায় প্রবল পানিপ্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে এবং দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে। এ মৌসুমে বিলের উল্লেখযোগ্য অংশে ফসল করার জন্য এখনই ২১-ভেন্ট এবং ৯-ভেন্টের সব গেট খুলে দিতে হবে। টেকা ব্রিজের সংস্কারকাজে বাইপাস সড়কে সংকীর্ণ সেতু পানিপ্রবাহে প্রবল বাধার সৃষ্টি করছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা সেটি প্রশস্ত করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। অবিলম্বে এই সংকীর্ণ কাঠের সেতু অপসারণ করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. এ অঞ্চলে নদী কাটার ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাজের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার নদী খনন ঠিকাদারদের মাধ্যমে নয়, সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করার উদ্যোগ নিতে হবে। নদীর সম্পদ উদ্ধার, নদীতট আইন বাস্তবায়ন, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও খননের মাটি নদীতটের বাইরে ফেলতে হবে। সব সংস্কারকাজে স্থানীয় শ্রমশক্তিকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. নদী খননের পাশাপাশি যুগপৎ টিআরএম চালুর উদ্যোগ নিতে হবে, তা না হলে নদী খননের সুফল পাওয়া যাবে না। নদী আবার ভরাট হয়ে যাবে।
৬. এলাকার বিলে বিলে পর্যায়ক্রমে টিআরএম বাস্তবায়নের উদ্যোগকে দ্রুততর করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নে যেকোনো প্রতিকূলতা নিরসনে সরকারের কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭. মৎস্যঘের নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে, নদী-খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে এবং উজানে নদী সংযোগের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
৮. ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর ভবদহ আন্দোলনের নারী-পুরুষের ওপর নওয়াপাড়ায় হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তা এবং জলাবদ্ধতা জিইয়ে রাখার জন্য কায়েমি স্বার্থবাদী মহল ও সংশ্লিষ্টদের বিচার করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স গ র ম কম ট র উদ য গ ন স ল ইসগ ট গণসম ব শ ২১ ভ ন ট ব যবস থ ট আরএম খনন র আমড ঙ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়ন দাবিতে গণসমাবেশ
যশোরে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবিতে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৫ অক্টোবর) ভবদহ দিবসে ‘ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির’ আয়োজনে যশোরের মশিয়াহাটি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গণসমাবেশ করা হয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল, ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বাংলাদেশের আহ্বায়ক ডা. অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, সংগঠনের উপদেষ্টা তসলিম উর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শেখর বিশ্বাস ও শিবপদ বিশ্বাস।
আরো পড়ুন:
টানা বৃষ্টিতে সেন্টমার্টিনে জলাবদ্ধতা, ঘরবন্দি কয়েকশ পরিবার
টানা বৃষ্টিতে সড়কজুড়ে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী
এ সময় বক্তারা বলেন, যশোর জেলার মণিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর, সদর (আংশিক) এবং খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা (আংশিক) উপজেলার ভবদহ অঞ্চলে প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কারণে বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, শ্মশান, মসজিদ, মন্দির, খেলার মাঠ, রাস্তাঘাট, ফসলী জমি ডুবে যায়। মানুষ সৃষ্ট এই জলবদ্ধতা থেকে বাঁচার তাগিদে এলাকার মানুষ লাগাতার সংগ্রাম করে আসছে।
তারা বলেন, সরকার ভবদহ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
গণসমাবেশে ‘ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির’ পক্ষ থেকে ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো, দ্রুত আমডাঙ্গা খালের জমি অধিগ্রহণ ও সংস্কার কাজ শুরু করা; ৮১ কিলোমিটার নদী খননের কাজ শুরু করা; বিলে বিলে টিআরএম চালু; ২১ ভেন্টের সকল গেট খুলে দেওয়া; ঘের নীতিমালা—২০১৯ বাস্তবায়ন এবং ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর নওয়াপাড়ায় পুলিশের হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা।
গণসমাবেশে আরো বলা হয়, গৃহীত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জনপদের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তবে অতীতের মতো একটি বিশেষ চক্র টিআরএম বাস্তবায়নে সরকারি সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পর্যায়ক্রমে বিলে বিলে টিআরএম এবং উজানে নদী সংযোগ না হলে এ অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে স্থায়ীভাবে পানির তলে চলে যাবে। নিজেদের এবং জনপদের স্থায়ী জলবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য জমির মালিকদের বিলে বিলে টিআরএম কার্যকর করতে সহযোগিতার আহ্বান জানান হয়।
এতে আরো বলা হয়, বিলে টিআরএম হলে বিল ভরাট ও উঁচু হবে। জমি চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠবে। বিলের জমির মালিক, ঘের মালিক, বর্গাচাষি, শ্রমজীবী, মৎস্যজীবী এবং বিলের উপর নির্ভরশীল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবাই ক্ষতিপূরণের আওতাভুক্ত হবে।
গণসমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু, কপোতক্ষ নদ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু, মুক্তেশ্বরী সংস্কার আন্দোলনের নেতা আলাউদ্দিন, জুলাই অভ্যুত্থানে যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনোজিত বালা, মাসুদ শেখ, আব্দুল মান্নান মোল্লা, বাপার আবু সাঈদ প্রমুখ।
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/বকুল