ইসলামের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানবজীবনের সময়বিন্যাসের এক অনন্য প্রতীক। প্রতিটি নামাজের সময় নির্ধারণে যেমন নির্ভুলতা আছে, তেমনি আছে গভীর আধ্যাত্মিক অর্থ।

এর মধ্যে মাগরিবের নামাজ সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের নামাজ। কারণ এটি সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই সময়টা ঠিক কতক্ষণ?

এই বিষয়ে কোরআন, হাদিস, এবং চার মাজহাবের ফিকহ বিশ্লেষণ স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।

মাগরিব নামাজের সময়ের সূচনা

মাগরিব নামাজের সময় সূর্য সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়ার পরপরই শুরু হয়। রাসুল (সা.

) বলেছেন, “যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন মাগরিবের সময় শুরু হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬১৩)

এ থেকে বোঝা যায়, সূর্যের একটি অংশও দিগন্তে থাকলে নামাজ আদায় করা বৈধ নয়। সূর্য সম্পূর্ণরূপে দিগন্তের নিচে চলে গেলে সময় শুরু হয়।

আরও পড়ুনতাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন হয়০৪ অক্টোবর ২০২৫মাগরিব নামাজের শেষ সময়

রাসুল (সা.) অন্য এক হাদিসে বলেছেন, “মাগরিবের সময় থাকে যতক্ষণ না আকাশের লাল আভা (শাফাক আহমার) অদৃশ্য হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬১২)

অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর আকাশে যে লালচে আভা দেখা যায়, তা মুছে গিয়ে আকাশ অন্ধকার হয়ে গেলে মাগরিবের সময় শেষ হয়ে যায়। তখনই ইশার নামাজের সময় শুরু হয়।

মাগরিবের সময় কতক্ষণ থাকে

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সাধারণত মাগরিবের নামাজের সময় থাকে প্রায় ৪৫ থেকে ৭০ মিনিট পর্যন্ত।

গ্রীষ্মকালে: সূর্যাস্তের পরে প্রায় ৬৫–৭০ মিনিট পর্যন্ত সময় থাকে।

শীতকালে: সময় কিছুটা কমে প্রায় ৪৫–৫০ মিনিট হয়।

এই ব্যবধান ভৌগোলিক অবস্থান, ঋতু ও সূর্যাস্তের সময়ের পার্থক্যের কারণে পরিবর্তিত হয়।

আরও পড়ুনজোহরের নামাজের শেষ সময় কখন০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী ব্যাখ্যা

চার মাজহাবের আলেমগণ একমত যে, “মাগরিবের সময় শুরু হয় সূর্যাস্তের সঙ্গে এবং শেষ হয় লাল আভা মিলিয়ে গেলে।”

তবে হানাফি মাযহাব অনুযায়ী, মাগরিবের নামাজ দ্রুত আদায় করা উত্তম। ইমাম কাসানি (রহ.) লিখেছেন, “মাগরিব নামাজে বিলম্ব করা মাকরূহ, কারণ এর সময় সীমিত এবং বিলম্বে কাযা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।” (আল–বদায়েউস সানায়ি, ১/১২৬, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ২০০৩)

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, “মাগরিব নামাজ সূর্যাস্তের পরপরই আদায় করাই সুন্নত, কারণ নবী (সা.) সর্বদা এমনটাই করতেন।” (আল-উম্ম, ১/৭৪, দারুল মাআরিফ, কায়রো, ১৯৯০)

ইমাম নববী (রহ.) বলেন, “মাগরিব নামাজের সময় সংক্ষিপ্ত, তাই বিলম্ব করা মাকরূহ, বিশেষ প্রয়োজনে কিছুটা দেরি করা বৈধ।” (শারহ সহিহ মুসলিম, ৫/১১৮, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

ইবন কুদামাহ (রহ.) বলেন, “মাগরিব নামাজ ইশার সময় শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত বৈধ, তবে বিলম্ব না করাই সুন্নত।” (আল-মুগনি, ১/৩৬৭, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ২০০৪)

রাসুল (সা.)-এর আমল

আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, “রাসুল (সা.) সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাগরিব নামাজ আদায় করতেন এবং কখনো বিলম্ব করতেন না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬০)

এ থেকে বোঝা যায়, তাড়াতাড়ি নামাজ আদায় করা শুধু অনুমোদিত নয়, বরং সুন্নতও বটে।

মাগরিব হলো দিনের সমাপ্তির নামাজ। সূর্যাস্তের মুহূর্তে মানুষ প্রকৃতির পরিবর্তন দেখে, যা মৃত্যুর স্মারক। তাই এই সময় নামাজ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়—একদিন সূর্যাস্তের মতোই জীবনের আলো নিভে যাবে, তখন নামাজই হবে আত্মার আলো।

মাগরিবের নামাজ ইসলামের সময়ানুবর্তিতা ও আনুগত্যের প্রতীক। সূর্যাস্তের পর অল্প সময়ের এই নামাজ আমাদের শেখায়—সময় সীমিত, তাই দেরি না করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হবে। মাগরিবের নামাজ তাড়াতাড়ি আদায় করা শুধু সুন্নত নয়, বরং একপ্রকার আত্মিক শুদ্ধির অনুশীলন।

আরও পড়ুননামাজের শুরু ও শেষ সময়২৮ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র য স ত র পর ন ম জ র সময় র সময় শ র স ন নত সময় র সময় স সময় ক

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান নাম নিয়ে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বদদ্বীনি, কুফরি ও ভ্রান্ততার বিরুদ্ধে উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে যারা মুসলমান নাম নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে হেফাজত আমির এ কথা বলেন। জাতীয় উলামা কাউন্সিল বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ‘জাতীয় উলামা সম্মেলন-২০২৫’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।

জাতীয় উলামা কাউন্সিলের সভাপতি ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনেক আলেম-উলামা অংশ নেবেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উলামায়ে কেরামের পরস্পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাম্য নয়।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ইসলামি রাজনীতিতে সব সময় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়ানো যায় না। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভূমিকা রাখতে হয়। আজ ইসলামি রাজনীতির সোনালি সময় চলছে। আমরা যদি সুযোগ কাজে না লাগাই, তাহলে সামনে বড় ধরনের ভোগান্তি তৈরি হবে।’

মুন্সিগঞ্জের জামি’আ ইসলামিয়া হালীমিয়া মাদ্রাসার প্রধান ও মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনে বাতিলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়তে লড়তে মরব, কিন্তু বিভক্ত হব না ইনশা আল্লাহ।’ তিনি বলেন, ১৬ নভেম্বরের কাদিয়ানিবিরোধী আন্দোলন শেষ হয়নি, শুরু হয়েছে মাত্র। সরকারকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, পরেরবার আর সুযোগ দেওয়া হবে না।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। যারা কাজ করতে চায়, তাদের বাধা দেব না। আমরা নিজেরা নিজেদের শত্রু হব না, ইনশা আল্লাহ।’

সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ, জাতীয় উলামা কাউন্সিলের মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা সালাহুদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুশতাক আহমদ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ