আলোর দোয়াতে কলমের নিব ভিজিয়ে নাও
Published: 6th, October 2025 GMT
করিনা জাঙ্ঘিয়াতুর জন্ম রোমানিয়ার বুখারেস্টে ১৯৮১ সালে। ১২ বছর বয়স থেকে কবিতা লিখতে শুরু করা করিনার এখন পর্যন্ত দুটো কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে—‘এক্সাইল ইন দ্য লাইট’ ও ‘রিচুয়াল অব সানলাইট’। করিনা ‘দ্য লিটারেরি ভয়েস ম্যাগাজিন’ এবং রোমানিয়ার ওয়ার্ল্ড পোয়েট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক। তিনি লিরিক গ্রাফ পাবলিশিং হাউসের এডিটর এবং ‘ভারত ভিশন’ ওয়েব ম্যাগাজিনের প্রকাশক-সমন্বয়ক। তিনি মোটিভেশনাল স্ট্রিপসের প্লাটিনাম ক্যাটাগরির সদস্য এবং রোমানিয়া জোনের প্রশাসক। এ ছাড়া তিনি কাজাকিস্তানের ‘ওয়ার্ল্ডনেশনস রাইটারস ইউনিয়ন’-এর প্রধান উপদেষ্টা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়ে আসছে। গুজরাট সাহিত্য একাডেমি ও মোটিভেশনাল স্ট্রিপসের দেওয়া ভারতের স্বাধীনতা দিবস সম্মাননা ২০২০–সহ তিনি কবিতার জন্য অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তাঁর কবিতায় তিনি জীবনের ভেতর-বাইরের অনেক জটিল বিষয় তুলে এনেছেন। নিরন্তর চর্চা ও অনুধ্যানের মাধ্যমে তিনি নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে পেরেছেন। তাঁর কবিতা পাঠকের কাছে এক চিরায়ত আনন্দের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশে আমরা এই কবিকে স্বাগত জানাই। আশা করি, বাঙালি পাঠকেরা তাঁর কবিতাপাঠে মুগ্ধ হবেন। নতুন করে জীবন ও জগৎকে ভাবার অবকাশ পাবেন। অনূদিত কবিতাগুলো ‘এক্সাইল ইন দ্য লাইট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
নীরবতাআমি নীরব!
তুমি যেসব শব্দ আজও শোনোনি
তাদের চেয়ে আমার নীরবতা বেশি কাজের।
আমি কোনো ক্ষতিপূরণের প্রত্যাশা করি না
কেবল এই শীতলতা ঢেকে দিতে
আমার স্বর্গদূতেরা তোমাকে নিয়ে দীর্ঘ সময় যা ভেবেছে
সেটুকু ছাড়া।
আমি নীরব!
তুমি যেসব শব্দ আজও শোনোনি,
তাদের চেয়ে আমার নীরবতা বেশি কাজের।
তোমার ঔদাসীন্যের মধ্যে যা শূন্য ও বাতিল
আমি জীবনের সুতায় জড়িয়ে হারিয়ে যাচ্ছি,
কিন্তু এখন কেবল বাতাসই তোমার স্মৃতি বহন করে।
আমি নীরব ছিলাম!
এবং এখন তুমি আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছ
সেই সব উপকূলে যেখানে কোনো সমুদ্র নেই।
আজকের এই সকালে আকাশ যখন নীল চুমকিখচিত
আমি আমার স্বপ্নবয়ন বন্ধ করে দিলাম,
আমার ধমনিতে প্রবহমান অজস্র অনুর্বর উদ্বিগ্নতা
এবং চারপাশে সবকিছুর বংশবৃদ্ধি হচ্ছে বিপরীতভাবে
দোজখের আয়নার ভেতর যা দেখা যায়;
তুষের স্তুপের মধ্যে বিবর্তন প্রতিফলিত হচ্ছে,
জীর্ণ গ্রহ ছড়িয়ে যাচ্ছে অজস্র কলঙ্ক,
অচ্ছুত হাসপাতালগুলো ধ্বংস করছে স্বাস্থ্য,
বিচারালয়গুলো পিষে মারছে ন্যায়বিচার,
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে জ্ঞান,
সরকারগুলো সমূল বিনাশ করছে স্বাধীনতা,
গণমাধ্যমগুলো সত্যের অপলাপ করছে,
আর ধর্ম আধ্যাত্মিকতাকে নিষ্ক্রিয় করছে।
একটি ষড়যন্ত্র চক্রের মধ্যে আমরা আটকে পড়েছি,
একটি পাশবিক খাঁচা
যেখানে আলো নেই, স্বাস্থ্য নেই, আনন্দ নেই,
একমাত্র বিবেক আমাদের প্রতারিত করে না
এবং কটূক্তিও করে না আমাদের।
চলো, আমরা চেতনার স্বর্গীয় স্বভাব পরিত্যাগ করি যা
আমাদের ওপর, আমাদের আত্মায়, সুবর্ণ সময়ের
মতবাদে, লক্ষ্যে ও সত্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
সুখ,
একটি অতীন্দ্রিয় প্রাপ্তি,
যখন আমরা সার্বভৌমের কাছে কৃতজ্ঞ থাকি
আমরা বিশ্বলোক থেকে আত্মতৃপ্তি পাই।
আমাদের সীমাবদ্ধতাহীন জীবনের জন্য
একটি সংঘাতহীন, ভয়হীন জীবন,
যখন আমরা নিজেদের স্বপ্নের শান্তিতে বিশ্বস্ত হই
এবং মহৎ কাজে সেবা দিতে প্রস্তুত হই।
সুখ,
হৃদয়ের ঝরনা থেকে নেমে আসা একটি প্রগাঢ় প্রবাহ,
আত্মার চূড়ায় এ এক স্বস্তির মৃদু টান
যা তোমাকে উদ্দীপিত করবে এবং প্রশান্তি দেবে।
সুখ,
এক স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ,
আকাশের ঐন্দ্রজালিক পথে দ্রবীভূত হয়ে
ভঙ্গুর ছায়ার মতো তরল হয়ে আসে
যার জন্ম আত্মতার শুভ্র বিস্তার থেকে
কৃতজ্ঞতার আলোয় খোদিত
এই যে আমরা জীবনেরই স্ফুলিঙ্গ।
হে মাটির কবি, তোমার তো সুযোগ রয়েছে
কবিতার স্বরের মধ্য দিয়ে সমস্ত আত্মাকে একত্র করার।
আলোর দোয়াতে কলমের নিব ভিজিয়ে নাও,
বিশ্বজগতের বিকিরণকেন্দ্র থেকে,
যেটা স্বর্গীয় অগ্নিশালার মতো, নক্ষত্রদের হৃদয় থেকে
জ্ঞান আহরণ করো!
পুরোনো ও মিথ্যা বিগ্রহগুলো সরিয়ে ফেলো!
আমাদের আত্মার উন্নয়নের বস্তুটিকে আন্দোলিত করো
মানবিকতার চূড়াটিকে উন্মোচনের জন্য!
জীবনের সাজানো গল্পটি নবায়ন করো এবং সুন্দরভাবে
নির্মাণ করো মূল্যবোধের পরম্পরা!
তোমার পিছু লেগে থাকা অনড় উদ্বিগ্নতার মধ্যে
জেগে থাকো সব সময়,
তোমার সক্রিয় স্বচ্ছতায়, নিষ্ঠুর নিদ্রাহীনতায়
বাতিল ধারণাগুলোর দিকে বুদ্ধিকে সজাগ রেখে
যা কিছু ক্লিশে,
তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের মেজাজটা ধরে রাখো
সত্যের পথে এগোতে থাকো!
জ্ঞানের চূড়ার দিকে মানবতার যে যাত্রা
সেখানে নতুন মূল্যবোধের আলোর সন্ধান করো
অভাবনীয় স্বর্গীয় সংযোগের মাধ্যমে
তোমার সুযোগ রয়েছে রহস্যের অতি সূক্ষ্ম বিষয়গুলো
দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার!
সৃষ্টিশীল অবচেতনকে আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে,
বিশোধন প্রক্রিয়ায় এবং ভেতরের স্পন্দনে
তোমার রয়েছে আত্মশুদ্ধির মহৎ দৈবপ্রাপ্তিযোগ
আর এটা মিশে যাবে তোমার দিবাস্বপ্নের বর্ণিল বলয়ে!
হে মাটির কবি, তোমার তো সুযোগ রয়েছে
কবিতার স্বরের মধ্যে দিয়ে মানবতা ও দেবত্বের
সেতুবন্ধন তৈরির!
আমি জন্মেছি এক বিস্ময়কর মর্মরধ্বনি নিয়ে
তাৎক্ষণিক মুগ্ধতা রচনা করে
জোর দিয়ে রহস্যগুলোর জট খুলে ফেলতে।
আমি জন্মেছি শতদল কোষ থেকে,
যেগুলো ছিল শান্ত অবস্থায়
এবং সরলতার উষ্ণ গভীরে।
আমার জন্ম হয়েছে গোপনে কাঁদার জন্য,
অন্যের বেদনায় আমার উপাসনালয়কে স্থির রাখতে।
আমার জন্ম হয়েছে ভেতরের পাতালকুঠুরিগুলো ঘুরে দেখে
অনেক ওপরে উঠে স্বর্গের দরজাগুলো স্পর্শ করার জন্য।
আমার জন্ম হয়েছে সৃষ্টশীলতার আবরণে
পৃথিবীর চমৎকার প্রাসাদগুলোকে
আমার মার্বেল পাথরের মূর্তি দিয়ে
নির্মাণ ও সজ্জিত করতে।
আমার জন্ম হয়েছে এক অদ্ভুত খেলার ভেতরে
অনির্ণেয় সামান্য সূক্ষ্ম বস্তু ও ফলনশীল দ্বন্দ্ব থেকে
উচ্ছ্বাস ও যন্ত্রণার মধ্যে চরম লাফালাফি শেষে।
আমি জন্মেছি হতবুদ্ধিতা ও বিপদের চিহ্ন ধারণ করে।
আমি জন্মেছি এক নারী হয়ে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বর গ য় জন ম ছ আম দ র র স বর জ বন র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কমেছে তিস্তার পানি, দুর্ভোগে মানুষ
ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বিপৎসীমা অতিক্রম করার পর তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) পানি কমে আসায় নিজেদের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন লালমনিরহাটে এই নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষজন। তবে, কমেনি তাদের কষ্ট, এখনো নিম্নাঞ্চলে পানি রয়েছে। নদী পাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতংক।
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ দিন ধরে বন্ধ টিকাসেবা
৬ ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আজ দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১০ মিটার। যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে। গতকাল রাতে পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরে রাত ৯টায় পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তাপাড়ে রেডএলার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অতিরক্ত পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ফ্লান্ড বাইপাস কেটে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে তারা। ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষের। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কিছু অংশ প্লাবিত হয়। পানির চাপে ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বিশেষ করে আদিতমারী উপজেলার সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর ব্রিজ অংশের নিচে সুরঙ্গ হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বাঁধটি ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কিছু রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।
সিন্দুর্না এলাকার রইচ উদ্দিন বলেন, “বাড়ির উঠানে কোমড় পানি। রাতে ঘুমাতে পারিনি। শিশুদের কোলে নিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। কখন কোনো সন্তান বিছানা থেকে পড়ে পানিতে ডুবে যায়, সেই আতংকে রাত কেটেছে।”
গোবর্দ্ধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, “সবখানে পানি আর পানি। আমন ধানের পাশাপাশি নানা ধরনের ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে। পুকুরে থাকা মাছ পানিতে ভেসে গেছে।”
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, “তিস্তার পানি বেড়ে গতকাল রাতে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকালে তা বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। বৃষ্টির পানি থাকায় পানি নেমে যেতে একটু সময় লাগছে। উজানের চাপ কমে যাওয়ায় বিকেলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। আমরা সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
ঢাকা/সিপন/মাসুদ