বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কখনোই তেমন একটা স্বস্তিতে ছিল না। তাদের জমি, সম্পদ, ধর্ম, সংস্কৃতি নানা মাত্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠের আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিগত সরকারের আমলেও এ আক্রমণের ধারাবাহিকতা দেখেছি। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে ডানপন্থার উত্থানের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

ডানপন্থী রাজনীতি প্রায়ই সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম ও জাতিসত্তার বাইরে ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি, জাতীয়তাকে হুমকি হিসেবে দেখে। এ কারণেই আমরা দেখেছি, ডানপন্থার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে ভিন্নমতাবলম্বী, প্রান্তিক, সংখ্যালঘু ও নারীদের ওপর হামলা-হয়রানি বেড়েছে, বেড়েছে মব–সহিংসতা। একের পর এক মাজারে হামলা, বিভিন্ন মেলা, ওরস, বাউল উৎসব বন্ধ, নাটক ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে বাধা, ধর্ম অবমাননার দায়ে হামলা-হুমকি, ফকির-সাধুদের ধরে নিয়ে চুল কেটে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব থামাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বিচ্ছিন্ন হতে চায় না, তারা গণতান্ত্রিক অধিকার চায়। সমতলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের মতো তাদেরও অধিকার রয়েছে বেসামরিক প্রশাসনের আওতায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার। গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে যেসব দেয়াললিখন মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, তার মধ্যে একটি ছিল, ‘সমতল থেকে পাহাড়/ এবারের মুক্তি সবার।’ মনে রাখতে হবে, পাহাড় মুক্তি না পেলে, সমতলও মুক্তি পাবে না।

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা জাতিগতভাবেও সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক, তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ। উপরি হিসেবে তাদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের’ অভিযোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে গুলিতে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এ রকমই একটা প্রেক্ষাপটে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালায় অষ্টম শ্রেণির এক মারমা কিশোরী প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে তিনজন বাঙালি যুবক কর্তৃক দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীল (২১) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে অভিযুক্ত অন্য দুজনকে গ্রেপ্তারে টালবাহানার প্রতিবাদে, সব অপরাধীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ও পাহাড়ে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে পাহাড়ি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার ছাত্র-তরুণেরা আন্দোলনের ডাক দেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্কুল-কলেজের ক্লাস বর্জন, মহাসমাবেশ, সড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ হলো, এসব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হলেও একপর্যায়ে সেটলার বাঙালিদের একটা পক্ষ ও সেনাবাহিনী কর্তৃক বাধা দেওয়ার কারণেই সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আরও পড়ুনশান্তিশৃঙ্খলা ফেরানো সরকারের মূল দায়িত্ব৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সহিংসতা উসকে দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নানা গুজব ছড়ানো হয়। এর মধ্যে ছিল দিনাজপুরের জীবনমহলের অগ্নিসংযোগকে খাগড়াছড়ির মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা হিসেবে প্রচার, কাঠমান্ডুর ভিডিওকে সেনা-বিজিবির ওপর পাহাড়িদের হামলার ভিডিও হিসেবে দেখানো, ২০২৩ সালে সীমান্তে গরু নিয়ে সংঘাতের ভিডিওকে সেনা-বিজিবির ওপর হামলা বলে চালানো, ভারতের ত্রিপুরার উসকানিমূলক বক্তব্যকে বাংলাদেশের পাহাড়িদের বলে উপস্থাপন, সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের হামলায় সেনাসদস্যের আহত হওয়ার ভিডিওকে পাহাড়িদের আক্রমণ বলে প্রচার ইত্যাদি। (ফ্যাক্টচেক: রিউমর স্ক্যানার ও ডিসমিসল্যাব)

এভাবে কয়েক দিন ধরে পাহাড়ি ‘সন্ত্রাসী’ কর্তৃক রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ওপর হামলার কথা প্রচার করা হলো। এরপর দেখা গেল গুলিতে যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই পাহাড়ি। সবাই খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা। একেবারে অল্প বয়সী তিন তরুণ—আথুই মারমা (২১), আথ্রাউ মারমা (২২) ও তৈইচিং মারমা (২০)। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতেই এ ঘটনা ঘটল। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় পুড়িয়ে দেওয়া হলো গুইমারার রামেসু বাজারের দোকানপাট ও তৎসংলগ্ন পাড়ার বসতবাড়ি। এসব বসতঘর ও দোকানমালিকদের অধিকাংশই পাহাড়ি। এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচার কি আদৌ কোনো দিন হবে বাংলাদেশে?

এ রকম প্রশ্ন উঠছে, কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কোনো ধরনের নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়াই বলে দিয়েছেন এ ঘটনার পেছনে ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধন রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও আমরা দেখেছি সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত ছাড়াই বিএনপি–জামায়াত বা কোনো বিদেশি শক্তিকে দায়ী করে বক্তব্য দেওয়া হতো।

এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংস হামলা যে এবারই প্রথম হয়েছে, তা নয়। গত বছর ২০২৪–এর ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে এক বাঙালি যুবক গণপিটুনিতে নিহত হন। অরাজক পরিস্থিতিতে মব–সহিংসতার এ ঘটনাকে পরবর্তী সময়ে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ দেওয়া হয়। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর গণপিটুনিতে মারা যান এক পাহাড়ি ব্যক্তি। রাতে জেলা সদরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে দুই পাহাড়ি যুবক নিহত হন। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরে অনিক কুমার চাকমা নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

কাপেং ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ভিন্ন জাতিসত্তার নারীদের ওপর ২৪টি নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২১টি ঘটেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে, ৩টি সমতলে। ছয়জন নারী ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। দুজন নিহত হয়েছেন। পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে গ্রেপ্তারের পর মৃত্যু, বিনা বিচারে আটক, মারধর, হেনস্তা ও জোর করে ধর্মান্তরিত করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ৩৪টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কয়টার বিচার হয়েছে, কয়জন অপরাধীর শাস্তি হয়েছে?

পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এ প্রেক্ষাপটেই বিচার করতে হবে। নইলে অনুধাবন করা যাবে না, মারমা কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনায় কেন এতটা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে গোটা পাহাড়ি জনপদ। পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এর সঙ্গে জাতিগত নিপীড়নের সম্পর্ক রয়েছে। এখানে ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে ভুক্তভোগী ও আন্দোলনকারীরা হামলার মুখে পড়েন, মামলার দীর্ঘসূত্রতায় ভোগেন ও রাষ্ট্রীয় অসহযোগিতার শিকার হন।

এ রকম তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর ঘটনার বিচারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সদিচ্ছা নিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থাহীনতা রয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাতেও আমরা দেখছি অপহরণের পর খেত থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া মারমা কিশোরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে যে মেডিকেল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, সেটি অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে তারা ২০১৮ সালে বিলাইছড়িতে দুই মারমা কিশোরীর ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট পরিবর্তনে রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ থেকে শুরু সমতলে কিশোরী তনু কিংবা আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে কারসাজির উদাহরণ সামনে আনছেন।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ ধরনের আশঙ্কা অমূলক নয়। এ সমস্যার মোকাবিলার জন্য ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দেওয়ার বদলে আস্থা সৃষ্টি করা জরুরি। এ জন্য ধর্ষণ বিষয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মতামতের ভিত্তিতে বিশ্বাসযোগ্য পুনঃতদন্ত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ঘটে যাওয়া লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণের ঘটনারও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। আহত, নিহত ও লুটপাট-অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করতে হবে।

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বিচ্ছিন্ন হতে চায় না, তারা গণতান্ত্রিক অধিকার চায়। সমতলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের মতো তাদেরও অধিকার রয়েছে বেসামরিক প্রশাসনের আওতায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার। গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে যেসব দেয়াললিখন মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, তার মধ্যে একটি ছিল, ‘সমতল থেকে পাহাড়/ এবারের মুক্তি সবার।’ মনে রাখতে হবে, পাহাড় মুক্তি না পেলে, সমতলও মুক্তি পাবে না।

কল্লোল মোস্তফা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক

[email protected]

মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনগ ষ ঠ র ম স প ট ম বর পর স থ ত সরক র র এ ঘটন তদন ত র ওপর র ঘটন ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজধানীতে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলা’

রাজধানীতে আগামী শুক্র ও শনিবার (২১ ও ২২ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলা। উন্নয়ন সংগঠন নাগরিক উদ্যোগ ও আদিবাসী সুহৃদদের যৌথ উদ্যোগে মিরপুর ১৩–এর পার্বত্য বৌদ্ধসংঘ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

মেলার আয়োজকদের পক্ষে মেইনথিন প্রমীলা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মেলার স্টল বরাদ্দের বিষয়টি প্রচার হওয়ার পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের পাশাপাশি সমতলের মান্দি, মনিপুরি, সাঁওতাল ও রাখাইনদের অনেক উদ্যোক্তা ইতিমধ্যেই স্টলের জন্য বুকিং দিয়েছেন। স্টল বুকিংয়ের মধ্যে আদিবাসী নারী উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য রয়েছে বলে তিনি জানান। মেলায় আছে রাজধানীর সুপরিচিত পাহাড়ী নারী পরিচালিত ‘হেবাং রেস্তোরাঁ’।

আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনপ্রণালির তেল ও মসলামুক্ত জনপ্রিয় খাবার নিয়ে অনেক স্টল থাকছে মেলায়। থাকছে পাহাড়ের জনপ্রিয় বাঁশ কোড়ল, কলা পাতার রান্না করা বিভিন্ন পদের হেবাং। পাহাড়ি মুরগি ও কাপ্তাই হ্রদের মাছসহ জুমের (পাহাড়ের বিশেষ কৃষিপদ্ধতি) সবজির মুখরোচক খাবার থাকছে। এ ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার পাজনের স্বাদ নিতে পারবেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা।

মেইনথিন প্রমীলা জানান, সমতলের আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় খাবারের পসরা সজিয়ে বসবেন মনিপুরি, গারো ও রাখাইনরা। কালো ও সাদা বিনি চালের বিভিন্ন প্রকার মুখরোচক পিঠা নিয়ে হাজির হচ্ছেন রাখাইন জাতিসত্তার খাদ্য উদ্যোক্তরা। থাকছে হালনাগাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা অনেক ধরনের মুন্ডি।

থাকবে নানা প্রকার টাটকা ফলের ঝাল আইটেম। এই ঝাল আইটেম ‘লাকসো’ নামে বেশি পরিচিত। মেলায় থাকছে কালা বিনিসহ বিভিন্ন জাতের বিনি চালের সমাহার। পাহাড়ি মধুও মেলায় পাওয়া যাবে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।

জুমের শাকসবজি, ফলমূল, বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা জাতের কৃষিপণ্যের সমাহার এবং শুঁটকির পসরা নিয়ে অনেক উদ্যোক্তা উপস্থিত হবেন।

অন্যতম আয়োজক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন মেলার বিষয়ে জানান, দেশের শহুরে নাগরিক জনগোষ্ঠীকে আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ জুম কৃষির বিভিন্ন শস্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এই মেলার আয়োজন। তিনি আরও বলেন, আদিবাসী উদ্যোক্তরা যেন বেশি বেশি ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে পারেন, সেই তাগিদ থেকেই আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলা-২০২৫-এর আয়োজন করা। এবার চতুর্থ বছরের মতো আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলাটি ইতিমধ্যে রাজধানীবাসীর কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছে।

মেলার বিষয়ে আয়োজকদের অন্যতম সদস্য মেন্টল চাকমা বলেন, আমাদের দেশে বহুত্ববাদী সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আদিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের সঙ্গে বাঙালি জনগণের খাদ্যাভ্যাসের মেলবন্ধন ঘটানোর লক্ষ্যে আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলার মাধ্যমে তাঁরা সেই প্রয়াস চালাচ্ছেন।

মেলার পাশাপাশি প্রতি সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ আদিবাসী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাও দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আইডল মং, পাহাড়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জলিপ্রু মারমা, সমান্তর চাকম, কুলিন চাকমা ও গারোদের উদীয়মান গায়ক মার্কুস চিসিমের পরিবেশনা থাকবে। এ ছাড়া থাকছে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনা। মেট্রোরেলে মিরপুর ১০ স্টেশন থেকে রিকশায় পাঁচ মিনিটে মেলার স্থানে পৌঁছানো যাবে। মেলার স্থান পার্বত্য বৌদ্ধসংঘ কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে স্কলাসটিকা এবং এসওএস শিশুপল্লী। বিপরীতে রয়েছে বিআরটিএর কার্যালয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দীনেশচন্দ্র সেন: বাংলা সাহিত্যের মহান ইতিহাসকার
  • রাজধানীতে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলা’