ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় জাতীয়
Published: 6th, October 2025 GMT
নিরপেক্ষ প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত কামনা করে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন দলটির একাংশের মহাসচিব এবি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনী অনুসন্ধান দলের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলকে তিনি একথা জানান।
আরো পড়ুন:
আয়নার মতো স্বচ্ছ ভোট করতে চাই: সিইসি
আ.
রবিবার রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসরুর মওলার গুলশানের বাসভবনে ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনী অনুসন্ধান দলের প্রধান মেটে বাক্কেন ও সদস্য ম্যানুয়েল ওয়ালির সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন জাপা নেতারা।
জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসরুর মওলা।
বৈঠক প্রসঙ্গে সোমবার মাসরুর মাওলা জানান, তাদের সঙ্গে অত্যন্ত হ্রদ্যতাপুর্ণ পরিবেশে আমাদের আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ও দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। তারাও আসন্ন নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তাদেরকে জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। তাই আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করতে চায়। কিন্তু নির্বাচনের আগে যে পরিবেশ দরকার সে সেই ধরনের স্থিতিশীল পরিবেশ এখনো দেশে দৃশ্যমান নয়।
তিনি তাদের আরো বলেছেন, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে সাজানো হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। যদিও সরকার এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য নতুন আইন করেছে। কিন্তু সে আইনের বাস্তব প্রয়োগ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা নাই এমন অনেক নেতাকে স্বাভাবিক বিদেশ যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দ্রুত মিথ্যা মামলা ও বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার।
বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধি দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির পরিকল্পনা জানতে চেয়েছেন জানিয়ে মাসরুর মাওলা বলেন, বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধি দলকে আমাদের পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে। ৯০ এর পর একটি বাদে আমরা সকল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। নির্বাচনের বেশিদিন বাকি নাই, কিন্তু এখনও সুষ্ঠু পরিবেশ দেখছি না। শতভাগ সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে জাতীয় পার্টি। এ বিষয়টি তাদের অবহিত করা হয়েছে।
বৈঠকে দলের মহাসচিব আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জোট গঠন করে ভোট করতে পারে বলেও জানিয়েছেন। তবে কাদের সাথে জোট হবে, কোন প্রক্রিয়ায় জোট হবে সেটি পরবর্তীতে পার্টির ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন হাওলাদার।
এ সময় তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন তারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শঙ্কা ও ভীতি দূর না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে আরো বলিষ্ঠ ও স্বচ্ছ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেছেন, “নাগরিকদের মনে এখনো যে শঙ্কা ও ভীতি রয়েছে, তা দূর করা না গেলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।”
আরো পড়ুন:
সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা না গেলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি বাধাগ্রস্ত হবে: বিআরটিএ চেয়ারম্যান
অপশক্তি নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না: আইজিপি
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) খুলনায় এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। সকালে নগরীর হোটেল সিটি ইন-এ এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “জনগণ আস্থা না পেলে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রূপ পায় না। মুক্ত আলোচনা, স্বচ্ছতা ও সততার ভিত্তিতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার আজ সময়ের দাবি। দেশ নির্বাচনমুখী হয়ে উঠছে, নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী। আমরা কেমন নির্বাচন পাব- সেই প্রশ্ন জনগণের মনে রয়ে গেছে।”
খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভাবনা বহুদিন ধরে আলোচিত হলেও বাস্তবায়ন এখনো দৃশ্যমান নয়। পদ্মা সেতু চালুর পরে প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কর্মসংস্থান বা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি বাড়েনি; সভায় এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন নাগরিকরা বলে জানান তিনি।
সিপিডির আহ্বায়ক বলেন, “নতুন প্রজন্মের শ্রমিককে আকৃষ্ট করতে অঞ্চলভিত্তিক শিল্পায়ন জরুরি। খুলনা অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প, চিংড়ি ও মাছ উৎপাদন এবং পর্যটন খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবন ও সাংস্কৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠা সম্ভব।” এ বিষয়গুলো সভায় আলোচিত হয়েছে বলেও তিনি জানান।
খুলনা অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “এলাকা থেকে যারা নির্বাচন করবেন, তাদের অবশ্যই আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে দিতে হবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম পরবর্তীতে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা তৈরি করবে।”
“রপ্তানিমুখী অর্থনীতির জন্য দক্ষ বন্দর ব্যবস্থা অপরিহার্য। প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ জরুরি হলেও তা অবশ্যই স্বচ্ছ পদ্ধতিতে হতে হবে”, যোগ করেন তিনি।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “সঠিক সংস্কার যদি বেঠিক পদ্ধতিতে করা হয়, তাহলে তার সুফল পাওয়া যায় না। বন্দর সংস্কারে যে দ্রুততা ও অস্বচ্ছতা দেখা গেছে, তাতে ভালো উদ্যোগও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে।”
ড. দেবপ্রিয় জোর দিয়ে বলেন, “সংস্কার প্রয়োজন, বিনিয়োগও প্রয়োজন; কিন্তু তা হতে হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে, উন্মুক্ত আলোচনা ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তাহলেই সংস্কার টেকসই হবে।”
সভায় আগামী নির্বাচনের প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক নেতৃবৃন্দ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিরাপদ সড়ক, শিল্পের উন্নয়ন, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জনসহ সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পের বিকাশ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি। সভায় সমাপনী বক্তৃতা করেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর খুলনা মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, এনসিপির ডা. আব্দুল্লাহ চৌধুরী।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ