খালেদা জিয়া, পরিবারের কেউ নির্বাচনে ভূমিকায় থাকবেন কি না, জানালেন তারেক রহমান
Published: 6th, October 2025 GMT
গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যে জনপ্রত্যাশিত নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, শারীরিক সক্ষমতা থাকলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাতে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন।
আজ সোমবার বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় থাকবেন কি না, বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্ন করা হয় তারেক রহমানকে।
জবাব দিতে গিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত বা পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘এবারও আপনাদের সবার চোখের সামনেই ঘটেছে যে কীভাবে স্বৈরাচারের সময় তাঁর ওপর অত্যাচারের খড়্গহস্ত নেমে আসে। কিন্তু তিনি আপস করেননি। এ রকম একজন ব্যক্তি আজ অসুস্থ। কেন, কীভাবে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেন? মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাঁকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো। আমরা দেখেছিলাম একজন সুস্থ মানুষ গিয়েছেন, কিন্তু যখন বেরিয়ে এসেছেন একজন অসুস্থ মানুষ বেরিয়ে এসেছেন। তাঁকে চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তারপরও যে মানুষটির এত বড় অবদান রয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার, আমি সেই দলের একজন কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস করতে চাই যে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যে জনপ্রত্যাশিত নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, শারীরিক সক্ষমতা থাকলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাতে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন।’
আরও স্পষ্ট হওয়ার জন্য বিবিসি বাংলা তারেক রহমানের কাছে জানতে চায়, সেটা নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে পারে কি না? এর উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ‘এটি আমি এখনো বলতে পারছি না। তাঁর শারীরিক এবিলিটির (সক্ষমতা) ওপর বিষয়টি কিছুটা হলেও নির্ভর করছে।’
আরও পড়ুন১৭ বছর পর সাক্ষাৎকার: কবে ফিরবেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, কী বললেন তারেক রহমান১ ঘণ্টা আগেবিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তাঁর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর একপর্যায়ে দলের দায়িত্ব নেন খালেদা জিয়া। তিনি চার দশক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন কার্যত বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। তাঁর কাছে বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব কতটা থাকবে? এই প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘দেখুন, বিষয়টিকে আমি একটু তাহলে অন্যভাবে উপস্থাপন করি। সব রকম ও সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাইছি। দেখুন, একজন চিকিৎসকের সন্তান যখন চিকিৎসক হয়, তখন সে ভালোও করে, খারাপও করে। একজন আইনজীবীর সন্তানও দেখা যায় যে অনেক সময় মা–বাবার মতো ভালো আইনজীবী হয় অথবা হয় না। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে অনেকের সন্তান রাজনীতিতে এসেছে। সবাই কি ভালো করেছে? সবাই ভালো করেনি। কেউ কেউ করেছে, কেউ কেউ করতে পারেনি ভালো।’
এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে ইঙ্গিত করে থাকেন, তাহলে এভাবে আমি বলব যে দেখুন বাংলাদেশের মতো দেশে রাজনীতি যাঁরা করেন, বিগত ১৭ বছরে যেমন দেখা গেছে, তার আগেও দেখা গেছে, রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হ্যারাসমেন্টের (হয়রানির শিকার হন। মিথ্যা মামলার শিকার হন। আমাদের বহু নেতা-কর্মী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, জেল-জুলুম খেটেছে, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যে কয়টা উদাহরণ দিলাম আমি মাত্র, আপনি কি বলতে পারবেন এর কোনোটার মধ্যে দিয়ে আমি যাইনি? এর প্রতিটার ভেতর দিয়ে আমি গিয়েছি। প্রতিটি স্তর পার করে এসেছি আমি। আমি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। যে নির্যাতনের চিহ্ন এখনো কখনো কখনো আমাকে সহ্য করতে হয়। জেল–জুলুম খেটেছি আমি। বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়েছি আমি। সবকিছুর ভেতর দিয়েই আমি পেরিয়ে এসেছি।’
এরপর এসব কথা বলার কারণ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ জন্য এ কথাগুলো আমি বললাম যে রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না। এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। কাজেই যে অর্গানাইজ (সংগঠিত) করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে, সে এগিয়ে যেতে পারবে। কেউ যদি এগিয়ে যেতে না পারে, তাহলে সে এগিয়ে যেতে পারবে না। সময়, পরিস্থিতি সবকিছু প্রমাণ করে দেবে।’
তারেক রহমানের স্ত্রী, কন্যা বা পরিবারের অন্য কেউ রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা আছে কি না বা তাঁরা রজনীতিতে আসতে আগ্রহী কি না, এই প্রশ্নও করেছিল বিবিসি বাংলা। জবাবে তারেক রহমান বলেছেন, বিষয়টি সময় ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তারেক রহমান। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব কতটা থাকবে, এমন প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।
বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কাদির কল্লোল সম্প্রতি তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব আজ সোমবার সকালে প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এর দৈর্ঘ্য ৪৪ মিনিটের বেশি। দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করা হবে আগামীকাল মঙ্গলবার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব ব এনপ র ভ গণতন ত র পর ব র র ন বল ন র জন ত প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যালয়ে যেনতেন পড়াশোনা, ভরসা কোচিং ও গৃহশিক্ষক
রাজধানীর ১৯০ বছরের পুরোনো ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকদের বসার কক্ষে একজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ চলছিল (১১ সেপ্টেম্বর)। তখন ক্লাস শেষ করে এলেন আরেকজন শিক্ষক। ওই শিক্ষক বললেন, তিনি একই সময়ে দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছেন। বাংলা ও কৃষিশিক্ষার। তবে তিনি হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক। শিক্ষকসংকটের কারণেই তাঁকে আরেক বিষয়ের ক্লাস নিতে হচ্ছে।
পাশে বসে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক। তিনি যোগ করলেন, তাঁকেও নিজের বিষয়ের পাশাপাশি শারীরিক শিক্ষার ক্লাস নিতে হয়। দিনে পাঁচ-ছয়টি করে সপ্তাহে প্রায় ২৫টি ক্লাস নিতে গিয়ে ভালোভাবে পড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলটি সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত। এটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই স্কুলে গিয়ে জানা যায়, সেখানে দুই পালায় শিক্ষার্থী প্রায় দুই হাজার। শিক্ষক আছেন মাত্র ৩৯ জন। শিক্ষকের পদসংখ্যা ৫৩। ১৪টি খালি। গড়ে ৫১ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক। শিক্ষকেরা পড়ানোর চাপে হিমশিম খান। ক্লাসে মানসম্মত পড়াশোনা করানো কঠিন হয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়টির দুজন শিক্ষার্থী জানাল, তারা নিয়মিত কোচিং ও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে। একজন বলল, সে বাসায় দুজন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে। খরচ মাসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের এ চিত্র আসলে পুরো দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিচ্ছবি; বরং কোথাও কোথাও পরিস্থিতি আরও খারাপ। শিক্ষকের অভাব, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট এবং দুর্বল পাঠদানের কারণে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। এতে পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ছে অনেকে।
সর্বশেষ বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২৩ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার ৩৩ শতাংশ।
সচ্ছল মা-বাবা সন্তানদের বাসায় গৃহশিক্ষক রেখে পড়াতে পারেন। কোচিং-বাণিজ্য রমরমা। মধ্যম আয়ের মা-বাবা সন্তানদের কোচিং ও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াতে গিয়ে বড় ধরনের আর্থিক চাপে পড়ছেন। নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা কোচিংয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না, বাসায় গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্য পরিবারগুলোর নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনায় ভালো করতে পারছে না।
অবশ্য সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুলের পেছনে জনগণের করের টাকা ঠিকই খরচ হচ্ছে। বেসরকারি বিদ্যালয়ে উচ্চ হারে বেতন ও ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পড়াশোনার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া এবং কোচিংয়ের এই প্রবণতা কেবল ঢাকা নয়, সারা দেশে মোটামুটি একই। ময়মনসিংহের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তান সকালে কোচিংয়ে পড়ে। তারপর বিদ্যালয়ে যায়। এরপর বিকেলে আবারও কোচিং। সন্ধ্যায় বাসায় আসেন গৃহশিক্ষক। তিনি বলেন, খরচ অনেক। কিন্তু কিছু করার নেই। ভালো পড়াশোনা তো করাতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি বিষয়ে কমিশন গঠন করলেও বাদ দিয়েছে শিক্ষাকে। প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে পরামর্শ দিতে শিক্ষাবিদ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদকে প্রধান করে কমিটি হয়েছিল। কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি সামান্যই।প্রথম আলো ফাইল ছবি