নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে এবং অবমাননাকারীর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিক্ষুব্ধ ধর্মপ্রাণ শিক্ষার্থীরা। কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি শুরু করেন।

আরো পড়ুন:

খুবিতে পূজার ছুটি বাড়ানোর দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

খুবির অধীনে মৎস্য বীজ খামার অন্তর্ভুক্তির দাবি

মিছিলটি স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে ফুলবাড়ি গেট হয়ে কুয়েট উডে এসে সমাপ্ত হয়। মিছিলে শিক্ষার্থীরা- ‘শাহজালালের বাংলায়, ইসলাম বিদ্বেষের ঠাঁই নাই’, ‘মানসিক ভারসাম্যের কথা বলে, ইসলামে বিষ ঢালে’, ‘ইসলামের অপমান, সইবে নারে মুসলমান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলেও খুব একটা শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এই আইনের ফাঁক দিয়ে তসলিমা নাসরিন, আসাদ নুরসহ অসংখ্য ধর্ম অবমাননাকারীর যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তারা এখনো ধর্ম নিয়ে কুৎসা রটিয়ে চলেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার পরেও যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত না করা গেলে সেটা বড় কোনো অঘটন সৃষ্টির কারণ হতে পারে।”

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আইনের সংশোধন করে ধর্ম অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

শনিবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল কর্তৃক কুরআন অবমাননার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে পুলিশে সোপর্দ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে।

ঢাকা/সাকিব/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নেতানিয়াহুর গাজা দখলের পথে সামান্য বাধা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সোমবার যে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তার পুরো পটভূমি বিশ্লেষণ করা ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। সেখানে তাঁরা গাজায় গণহত্যা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের এক সম্মেলনের এক সপ্তাহ পর এ ঘোষণা এসেছে। সেই সম্মেলনে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। একই সময় ইসরায়েলকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও বর্জনের ঢেউও তীব্র হয়।

এতে ইসরায়েলের ভেতরেও যুদ্ধবিরোধী সমালোচনা বাড়তে শুরু করেছে। কারণ, তারা এখন শুধু সাংস্কৃতিক নয়, অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় পাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গাজায় গণহত্যার কারণে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি স্থগিত করার কথা ভাবছে। এটি সেই ভয়কে আরও জোরদার করেছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রস্তাবটি নেতানিয়াহু বহু মাস আগেই গ্রহণ করতে পারতেন। তাতে হাজার হাজার নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নিহত হতো না, বরং আরও জীবিত বন্দী মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকত। কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ, তাঁর লক্ষ্য সব সময় একটাই থেকেছে—গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা।

এ অবস্থায় নেতানিয়াহু এখন বড় এক সংকটে আছেন। একদিকে তিনি একজন নিও–লিবারেল রাজনীতিক হিসেবে জানেন, ইসরায়েল পশ্চিমা শক্তি ও মুক্তবাজারের ওপর নির্ভরশীল। তাই আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া কতটা ক্ষতিকর, তা তিনি ভালোভাবেই বোঝেন।

অন্যদিকে নেতানিয়াহুর সামনে এসেছে ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উচ্ছেদ করার এক ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’। জায়নবাদী স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের দক্ষিণপন্থী সমাজের মধ্যে এখন এই ‘সুযোগ’ নেওয়ার বিষয়ে ব্যাপক সমর্থন আছে।

ফলে নেতানিয়াহুর সামনে এখন কঠিন দ্বিধা। তিনি পশ্চিমের সঙ্গে সমঝোতা করে আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা ধরে রাখবেন, নাকি দেশের ভেতরের শক্ত পৃষ্ঠপোষক-শিবিরকে সন্তুষ্ট করার জন্য সেই উচ্ছেদমুখী নীতিকে এগিয়ে নেবেন? তিনি দুদিকেই সমানভাবে আগ্রহ ও চাপে আছেন। তাই তাঁকে খুব সাবধানে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ট্রাম্পের ‘২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা’ বাস্তবে নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের লক্ষ্য, অর্থাৎ গাজাকে ফিলিস্তিনিশূন্য করার পথে খুব বড় কোনো বাধা হবে না।

নেতানিয়াহু জানেন, তাঁর দক্ষিণপন্থী সরকারের স্বপ্ন হলো গাজার সব ফিলিস্তিনিকে তাড়িয়ে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে পশ্চিম তীর থেকেও তাদের উচ্ছেদের নজির তৈরি করা। একই সঙ্গে তিনি বুঝতে পারেন, গাজার গণহত্যা নিয়ে ট্রাম্প দেশ-বিদেশে চাপের মুখে আছেন, তাই তাঁকেও কিছু ‘রাজনৈতিক ফলাফল’ দিতে হবে।

এই সপ্তাহে যে ‘২০ দফা পরিকল্পনা’ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে নতুন কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক আলোচক ব্রেট ম্যাকগার্কের মতে, এটি মূলত গত জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের অনুলিপি, যেটি মার্চে ইসরায়েল নিজেই ভেঙে দিয়েছিল।

পার্থক্য শুধু এই যে এবার সেটিকে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সমর্থন দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। কিন্তু আরবদের সেই সমর্থন ছিল শর্তসাপেক্ষ। অর্থাৎ শুধু তখনই তারা রাজি, যদি শেষ পর্যন্ত একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

ট্রাম্প এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার যে গাজা প্রশাসনের পরিকল্পনা দিয়েছেন, সেটি নাকি অস্থায়ী ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে গাজাকে ধীরে ধীরে পশ্চিম তীরের সঙ্গে একীভূত করার কথা বলা হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ট্রাম্প যে পরিকল্পনা সাধারণভাবে দেখিয়েছেন, সেটি আগেই আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে যে খসড়া আলোচনা করা হয়েছিল, তার সঙ্গে মেলে না। অর্থাৎ পরিকল্পনার প্রকৃত খসড়া এবং ট্রাম্প যা প্রদর্শন করেছেন, দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে এ তথ্য গোপন করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, গাজায় না হামাস, না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ—কেউই শাসন করতে পারবে না।

আগামী বছর ইসরায়েলে নির্বাচন। তাই নেতানিয়াহু এখন সময়কে নিজের অনুকূলে নিতেই ব্যস্ত। এ জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখার জন্য সবকিছু করতে রাজি। এমনকি গত মাসে দোহায় ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্পের কথামতো তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন, যদিও তাঁর ভোটাররা এটিকে দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন।

নেতানিয়াহু বুঝতে পেরেছেন, এখন ইসরায়েলসহ বৈশ্বিক দক্ষিণপন্থীরা মূলধারার সংবাদমাধ্যম নয়, বরং বিকল্প প্ল্যাটফর্ম থেকে খবর নেয়। সেখানে তাঁর অযৌক্তিক বক্তব্যের প্রতিবাদ করার মতো সাংবাদিক কেউ থাকেন না।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রস্তাবটি নেতানিয়াহু বহু মাস আগেই গ্রহণ করতে পারতেন। তাতে হাজার হাজার নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নিহত হতো না, বরং আরও জীবিত বন্দী মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকত। কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ, তাঁর লক্ষ্য সব সময় একটাই থেকেছে—গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা।

আবেদ আবু শাহাদা ফিলিস্তিনি রাজনীতিক

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ