রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের মাঠে বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা পোস্টার, লিফলেট দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছাত্রদল মনোনিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম' প্যানেলের সংসস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফী। তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাজে নির্বাচনী প্রচার করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। 

সোমবার (৬ অক্টোবর) ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাজে প্রচার চালাতে দেখা যায় তাকে।

আরো পড়ুন:

রাবির ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত

ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন

এ অভিনব সাজে প্রচার চালানোর কারণ জানতে চাইলে কাফী বলেন, “নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্রের কারণে পরাজিত হন। আজ আমি তার সাজে শুধুই প্রচার চালাতে আসিনি, এসেছি এক ধরনের প্রতিবাদের জায়গা থেকে।”

তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে, আমাদের বর্তমান সংস্কৃতির ওপর আবারো কোনো লর্ড ক্লাইভের আক্রমণ নেমে এসেছে। সেই প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবেই আমি ভোটারদের কাছে এসেছি। যেন পলাশীর যুদ্ধে নবাব হেরে গেলেও, এই নির্বাচনে আমায় যেন তারা হারতে না দেন। নির্বাচিত হতে পারলে আমি ক্যাম্পাসে মুক্ত ও প্রগতিশীল সংস্কৃতির চর্চা আবারো জোরদার করতে চাই।”

প্রায় ৩ যুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাকসু নির্বাচনের তারিখ চারবার পরিবর্তনের পর আগামী ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। দুর্গাপূজার ছুটি শেষে এ নির্বাচনকে সামনে জোরেশোরেই নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিধিমালা সংস্কার করে দ্রুত তফসিল দিন

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাণিজ্য সংগঠনগুলো হয়ে উঠেছিল সরকারের সম্প্রসারিত শাখা। এফবিসিসিআইসহ বড় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর শীর্ষ পদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতো। খুব স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বে যাঁরা আসতেন, তাঁদের পক্ষে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে শক্ত কোনো অবস্থান নেওয়া সম্ভব হতো না।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে—এমন প্রত্যাশা করা হলেও বাস্তবে সেটা ঘটেনি। ফলে সরকারের সঙ্গে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে ব্যবসা ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।

বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচনী বিধিমালায় ত্রুটি থাকায় সেটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। সে কারণে বিধিমালা সংস্কারের জোরালো দাবি ব্যবসায়ীদের দিক থেকেই ওঠে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদ বাতিল করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ১২০ দিনের মধ্যে বিধিমালা সংশোধন করে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গে কথা না বলেই যে বিধিমালা করা হয়, তা নিয়ে এফবিসিসিআইসহ অনেকগুলো ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা ক্ষুব্ধ হন। তফসিল ঘোষণার পর রিট মামলা হলে নির্বাচন ঝুলে যায়। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও সেটি কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি।

এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন না হওয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবেই বেশির ভাগ বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচনও ঝুলে আছে। মাত্র তিনটি সংগঠনে নির্বাচন হলেও এর একটি সমঝোতার ভিত্তিতে পর্ষদ করেছে। বাণিজ্য সংগঠনগুলো যেমন রাজনৈতিক সরকারের লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন হতে পারে না, আবার সেটা প্রশাসক দিয়েও বেশি দিন চলতে পারে না। উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের একটি অংশ প্রশাসকদের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এমন কিছু সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়েছে, যেটা কোম্পানি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বাণিজ্য সংগঠনগুলো যাতে সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে, সে উদ্দেশ্য থেকেই নির্বাচনী বিধিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেখানে কীভাবে একটি পক্ষ বিধিমালা প্রণয়নে প্রভাব তৈরি করতে পারছে?

যেখানে জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে ১০-১২ দিনের মধ্যে বিধিমালা সংশোধন করা সম্ভব, সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেন সেটা করতে মাসের পর মাস পার করে দিচ্ছে? এর অর্থ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব ফেরানো যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে না নিয়ে ওপর থেকে চাপিয়ে দিলে যেকোনো সংস্কারপ্রচেষ্টা যে ঝুলে যেতে বাধ্য, বাণিজ্য সংগঠনগুলোর এ ঘটনা তারই দৃষ্টান্ত।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের, এর প্রায় ৮৫ শতাংশই বেসরকারি খাতের অবদান। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ, বাজার ব্যবস্থাপনা—এসব জায়গায় বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে হলে সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃত্বের একটি সমন্বয় ও বোঝাপড়া প্রয়োজন হয়। এফবিসিসিআইসহ বড় বাণিজ্য সংগঠনে নির্বাচিত নেতৃত্ব না থাকায় এই আন্তসম্পর্কটা ভেঙে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ, কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা অনেকটা কমে গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এফবিসিসিআইসহ বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নির্বাচিত নেতৃত্বের গুরুত্ব বুঝতে হবে। বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞদের সঙ্গে বসে বিধিমালা সংশোধন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করুন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ