বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ স্মৃতি স্মরণে আগ্রাসনবিরোধী ‘আট স্তম্ভ’ উদ্বোধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বুয়েট সংলগ্ন পলাশী গোলচত্বরে আট স্তম্ভ উদ্বোধন করা হয়।

আরো পড়ুন:

আমরা এখনো সুষ্ঠু বিচার পাইনি: আবরারের বাবা

আবরারের রক্ত বৃথা যায়নি, জাতিকে জাগিয়ে তুলেছে

আগ্রাসনবিরোধী অবস্থানের কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সদস্যরা।

শহীদ আবরারের স্মৃতি ও আগ্রাসনবিরোধী চেতনাকে সমুজ্জ্বল রাখতে ‘শহীদ আবরার ফাহাদ স্মৃতি স্মরণে পলাশী গোলচত্বরে আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ নির্মাণ ও পলাশী ইন্টারসেকশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে।

আটটি স্তম্ভ হচ্ছে—সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দেশীয় শিল্প—কৃষি-নদী-বন-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদাকে নির্দেশ করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “আট স্তম্ভের অবয়বের চেয়ে, আট স্তম্ভে লিখে রাখা বিষয়গুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই শব্দগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই বদ্বীপের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে।”

ফ্যাসিবাদের সময়ে হাজার-হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখার বিভিন্ন ভাস্কর্য-প্রকল্প নির্মিত হলেও বর্তমান সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির পক্ষে কিছু করলেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হতে হয় উল্লেখ করে তিনি জানান, আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ নির্মাণে মাত্র ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো.

রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, “আবরার ফাহাদের স্মৃতিকে ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”

ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “আবরার ফাহাদ কেবল একজন ব্যক্তি নয়, আবরার ফাহাদ একটি চেতনা, একটি আদর্শ।”

আবরার ফাহাদ ২০১৯ সালে যে বীজ বপন করেছিলেন, সেটি একটি মহীরুহ হয়ে ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাইয়ে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে ডিএসসিসি এই স্তম্ভ নির্মাণ করেছে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম, বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, শহীদ আবরার ফাহাদের পিতা মো. বরকতুল্লাহ ও ভাই আবরার ফাইয়াজ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আবর র ফ হ দ র ব ব স তম ভ ন র ম ণ আবর র ফ হ দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৩৮ শতাংশ শিশুর শরীরে সিসা

সারা দেশে ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ৩৮ শতাংশের শরীরে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় এই সংখ্যা ৬৫ শতাংশ। সিসা শিশুদের মস্তিষ্কসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ ব্যাহত করে। বিশ্বব্যাপী সিসাদূষণে মৃত্যুর সংখ্যা ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা এবং এইচআইভিতে মোট মৃত্যুর থেকেও বেশি। সিসাদূষণ ঠেকাতে জাতীয় পর্যায়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ইউনিসেফ হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস)২০২৫–এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ইউনিসেফ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যৌথভাবে জরিপটি পরিচালনা করে।

এই জরিপে বাংলাদেশের শিশুদের বর্তমান জীবনমান, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও অধিকারের চিত্র ওঠে আসে। জরিপের কয়েকটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা গেলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সূচকে অবনতি দেশের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে বক্তাদের কথায় ওঠে আসে।

এমআইসিএস ২০২৫-এর ফলাফলে উদ্বেগজনক চিত্র দেখা গেছে বিষাক্ত সিসাদূষণ নিয়ে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় ৬৫ শতাংশ শিশু সিসাদূষণের শিকার। শহরটির কিছু এলাকায় এ সংখ্যা আরও বেশি। দৈনন্দিন ব্যবহারের প্রসাধনী, মসলা ও শিশুদের খেলনায় উচ্চ মাত্রায় সিসা পাওয়া গেছে, যা ভবিষ্যতের উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব ফেলবে।’

এ ছাড়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে শিশুশ্রম বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। বলা হয়, ২০১৯ সালের তুলনায় আরও ১২ লাখ শিশু নতুন করে শ্রমে যুক্ত হয়েছে, শিশুশ্রমের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশে। এ ছাড়া শিশুদের ওপর পরিবারের সহিংস আচরণও দুশ্চিন্তার কারণ। ৮৬ শতাংশ শিশু নিজ বাড়ির মধ্যেই কোনো না কোনোভাবে সহিংস শাস্তির শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের এ হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী বিবাহিত তরুণীর মধ্যে দেখা গেছে ৪৭ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫১ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে জন্মনিবন্ধনের হার ২০১৯ সালে ছিল ৫৬ শতাংশ, যা বর্তমানে বেড়ে ৫৯ শতাংশ হয়েছে।

দেশে ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে ১৩ শতাংশ তাদের উচ্চতার তুলনায় কৃশকায়। তীব্র অপুষ্টির কারণে দ্রুত ওজন কমে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বয়সের তুলনায় খর্বকায় (উচ্চতা কম) শিশুদের হার ২৪ শতাংশ। তাদের শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ কম হয়। আর এই উভয় কারণে বয়সের তুলনায় ওজন কম থাকতে পারে, এমন শিশুদের সংখ্যা ২৩ শতাংশ। আর রক্তশূন্যতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় , দেশের অর্ধেকের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী রক্তশূন্যতায় (অ্যানিমিয়া) ভুগছেন। তাদের সংখ্যা ৫৩ দশমিক ১ শতাংশ। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশের শরীরে সিসার মাত্রা সহনশীল মাত্রার অনেক বেশি। অন্যদিকে প্রসবের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের হার ৭৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি হাজারে কিশোরী মায়ের সংখ্যা গড়ে ৯২ জন।

সংবাদ সম্মেলনে ‘পিজি পার্টনারশিপ ফর আ লেড ফ্রি ফিউচার’–এর পরিচালক আবদুল্লাহ ফাদিল বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আট কোটির বেশি শিশু সিসাদূষণের শিকার। এটি শিশুদের জন্য এক মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। সিসা শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মস্তিষ্কের বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এই ভারী ধাতুর ফলে প্রতিটি শিশুর আইকিউ (মানুষের বয়স ও মানসিক বয়সের অনুপাত) ৫ থেকে ৭ পয়েন্ট কমে যেতে পারে। জাতীয় পর্যায়ে জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সিসাদূষণ ঠেকানো যাবে না। সরকার ইতিমধ্যে ২০২৫ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে।

উল্লেখ্য, ‍যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শিশুদের দেহে প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের উপস্থিতিকে উদ্বেগজনক মাত্রা বলে বিবেচনা করে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। সিসার যেকোনো মাত্রাই শিশুর জন্য ক্ষতিকর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৩৮ শতাংশ শিশুর শরীরে সিসা