১ কোটি ১৪ লাখ টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করবে অ্যাপেক্স ফুডস
Published: 10th, October 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাপেক্স ফুডসের মুনাফা এক বছরের ব্যবধানে ১৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে মুনাফা বাড়লেও কোম্পানিটির লভ্যাংশ বাড়েনি। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরেও কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ গত অর্থবছরের আয়–ব্যয় পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বুধবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আর নিয়ম অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এসব সিদ্ধান্তের কথা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। তার আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা ৪৩ লাখ টাকা বা প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে।
১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যাপেক্স ফুডস শতভাগ হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮১ সালে। এটি স্বল্প মূলধনি একটি কোম্পানি। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেস ভ্যালুর ৫৭ লাখ শেয়ারে বিভক্ত।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের একটানা ২০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। তাতে শেয়ারের বাজারমূল্য যাই থাকুক না কেন প্রতি শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারধারীরা বছর শেষে ২ টাকা করে লভ্যাংশ পাচ্ছেন। সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৫ সালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঢাকার বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২৩২ টাকা।
কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের জন্য যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তাতে লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটির খরচ হবে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে সিংহভাগই পাবেন কোম্পানিটির উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা। কারণ, কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৩৯ শতাংশই রয়েছে উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। সেই হিসাবে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা ঘোষিত লভ্যাংশ বাবদ পাবেন প্রায় ৬১ লাখ টাকা। ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। কারণ, কোম্পানিটির ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর বাকি ৭ দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। সেই হিসাবে লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটির শেয়ারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন প্রায় ৮ লাখ টাকা।
এদিকে মুনাফা ও লভ্যাংশ ঘোষণার খবরেও গতকাল শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এদিন ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৩ টাকা বা সোয়া ৫ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ২৩২ টাকায়। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তি এ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের গোদরেজের সাম্রাজ্য পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাইরিকা হোলকার
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ভারতের চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে। মুহূর্তেই চাঁদে মহাকাশযান নামানো বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ইতিহাস রচনা করে ভারত।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর এই অসাধারণ অভিযানের পেছনে কাজ করেছে কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান; সেগুলোরই একটি গোদরেজ অ্যারোস্পেস মুম্বাইভিত্তিক গোদরেজ অ্যান্ড বয়েস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ইউনিট, শতবর্ষী গোদরেজ এন্টারপ্রাইজ গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
চার দশকের বেশি সময় ধরে তারা সরবরাহ করছে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও মহাকাশযানের যন্ত্রাংশ; এমনকি ২০১৪ সালের মঙ্গল অভিযানেরও অংশীদার ছিল তারা।
ফলে যে গোদরেজকে মানুষ চিনে এসেছে ফ্রিজ, তালা বা ইস্পাতের আলমারির ব্র্যান্ড হিসেবে, সেই কোম্পানি যে মহাকাশ প্রযুক্তির অংশীদার, এ খবর শুনলে অবাকই হতে হয়।
গোদরেজ অ্যান্ড বয়েসের নির্বাহী পরিচালক ও পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি নাইরিকা হোলকার বলেন, ‘আমরা ভারতের প্রায় সব মহাকাশ অভিযানের অংশ হয়েছি—এটা আমাদের জন্য বড় সম্মান।’
সেপ্টেম্বর মাসে ফোর্বস এশিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হোলকার এসব কথা বলেন মুম্বাইয়ের উত্তর-পূর্ব উপকণ্ঠে বিক্রোলির ঘন ম্যানগ্রোভ ঘেরা সদর দপ্তরে বসে। হোলকারকে তাঁর কাকা, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামশেদ গোদরেজের (বয়স ৭৬) উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হোলকারের মা স্মিতা গোদরেজ কৃষ্ণাসহ (৭৪) দুজনের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১১ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১২০ কোটি ডলার। ভারতের শীর্ষ ১০০ ধনীর তালিকায় তাঁদের অবস্থান ২০তম।
ভারতে ‘গোদরেজ’ নামটা সাধারণত মহাকাশ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; বরং ঘরের চেনা জিনিসপত্রের জন্যই বেশি পরিচিত—তালা, আসবাব, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি। দশকের পর দশক ধরে মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরে ঘরে দেখা গেছে গোদরেজের ইস্পাতের আলমারি, যেখানে জামাকাপড় থেকে শুরু করে গয়না ও কাগজপত্র পর্যন্ত সবই স্থান পায়। এসব ভোক্তাপণ্য থেকেই আসে গোদরেজ অ্যান্ড বইস কোম্পানির মোট আয়ের ৬০ শতাংশ। ২০২৫ অর্থবছরে গোদরেজ অ্যান্ড বইসের আয় হয়েছে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ২৩০ কোটি ডলার, সেখানেই এখন হোলকারের প্রধান মনোযোগ।
৪৩ বছর বয়সী হোলকার বলেন, পুরোনো একটি ব্র্যান্ডকে নতুন প্রজন্মের জন্য উপযোগী করে তোলা, বিশেষ করে জেন–জি প্রজন্মের জন্য এটাই হলো চ্যালেঞ্জ। দুটি কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে কোম্পানিটি প্রায় ৫৩০ মিলিয়ন বা ৫৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। লক্ষ্য—উন্নত পণ্য তৈরি করে নতুন বাজারে প্রবেশ।
এই পরিস্থিতিতে গবেষণা, পণ্য উন্নয়ন ও ডিজিটাল প্রযুক্তিতে জোর দিচ্ছে গোদরেজ। গত তিন বছরে এই পরিবর্তনের ফল মিলছে—২০২৫ অর্থবছরে বার্ষিক আয় প্রায় দ্বিগুণ; আর কর-পরবর্তী মুনাফা চার গুণ বেড়ে ৬৭ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার হয়েছে।
আসবাব ব্র্যান্ড ইন্টারিওর লক্ষ্য আরও বড়—২০২৯ সালের মধ্যে আয় তিন গুণ করে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১২০ কোটি ডলারে নেওয়া। এই মুহূর্তে তাদের আয় ৪১ কোটি ডলার। সে জন্য ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে ৫০০টি নতুন দোকান খুলছে তারা মূলত দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরগুলোয়।
বর্তমানে ইন্টারিওর দোকানের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫০০। হায়দরাবাদভিত্তিক গবেষণা সংস্থা মরডর ইন্টেলিজেন্স বলছে, ভারতের আসবাবের বাজার আগামী পাঁচ বছরে গড়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বেড়ে ২০৩০ সালে ৪৩ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। এর পেছনে কাজ করছে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ক্রমবৃদ্ধি ও দ্রুত নগরায়ণ।
ইন্টারিও এখন তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করে পণ্য তৈরি করছে—গেমারদের জন্য আরগোনমিক বা শরীর-উপযোগী চেয়ার, শিশুদের ঘরের আসবাব এমনকি অ্যালুমিনিয়াম আউটডোর সেট। একসময় ধূসর রঙের ইস্পাতের আলমারিগুলো এখন নানা রঙে পাওয়া যায়, ‘বেকড অ্যাপল’ বা ‘ডাস্টি রোজ’-এর মতো নামেই সেগুলো বিক্রি হয়।
অনলাইন বিক্রিতেও বড় অগ্রগতি হয়েছে। ২০২২ সালে যেখানে মাসে ৪ হাজার পণ্য বিক্রি হতো, ২০২৫ সালের মার্চ নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজারে। বড় দোকানগুলোতেও এসেছে পরিবর্তন—আগের গুদামের মতো দোকানের পরিবর্তে এখন দোকানঘরের মতো করে সাজিয়ে আসবাব বিক্রি হচ্ছে। মানুষ আসবাব কিনতে গিয়ে এখন সাজসজ্জার পরামর্শও চান, বললেন হোলকার।
নতুন প্রজন্মের ভোক্তাদের বোঝার জন্য অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন হোলকার—আই ট্র্যাকিং (চোখের গতি বা দৃষ্টিপথ পর্যবেক্ষণ), হিটম্যাপিং (দৃষ্টিপথের ঘনত্বকে রঙের মাধ্যমে দেখানো হয়, যেখানে লাল মানে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ বা কার্যকলাপ) ও হার্ট রেট বিশ্লেষণ (কোনো পণ্যের প্রতি ব্যবহারকারীর মানসিক প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য হৃৎস্পন্দনের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা)। একই সঙ্গে তিনি গত এক বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝার চেষ্টা করছেন, মানুষ কীভাবে বাসস্থান ব্যবহার করছে।
‘কোভিড অনেক কিছু বদলে দিয়েছে’ বলেন হোলকার। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা ঘরে বেশি সময় কাটাতাম না, তাই বাড়ির ব্যাপারে ভাবতামও না; কিন্তু এখন মানুষ খেয়াল করে দরজার হাতল ঠিক মানাচ্ছে কি না, এসবও।’
মরডর ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, বিক্রির হিসাবে ভারতের আসবাব বাজারে ইন্টারিওর অবস্থান ১ নম্বরে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম নয়, দেশজুড়ে হাজারো ছোট উৎপাদক, মুম্বাইভিত্তিক নীলকমল ও ডুরিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ, নেদারল্যান্ডসের আইকিয়া ও অনলাইন ব্র্যান্ড পেপারফ্রাইয়ের সঙ্গে চলছে প্রতিযোগিতা। তবু হোলকারের আত্মবিশ্বাস, ‘আমরাই পুরো মূল্য চক্রটা নিয়ন্ত্রণ করি, ডিজাইন থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং, সরবরাহ ও বিক্রয়-পরবর্তী সেবা পর্যন্ত।’
একই সঙ্গে গোদরেজ ব্র্যান্ডকে আধুনিকীকরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন হোলকার। ইন্টারিওর প্রধান স্বপ্নিল নাগারকারের ভাষায়, ‘হোলকার গ্রাহককেন্দ্রিক, নতুন ধারার পণ্য আনতে সব সময় তৎপর।’
এই ভোক্তাবাজারের প্রসারের সঙ্গে বাড়ছে গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদাও। শিল্প সংস্থা সিআইআই ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইওয়াই পার্থেননের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত এখন বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান টেকসই ভোগ্যপণ্যের বাজার। ২০২৯ সালের মধ্যে এই খাতের আয় দাঁড়াতে পারে ৩৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
২০২৫ সালে গোদরেজ অ্যান্ড বইসের গৃহস্থালি পণ্যের আয় ছিল ৮২০ মিলিয়ন বা ৮২ কোটি ডলার। আগামী অর্থবছরে যা আরও ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে আশা।
তবে প্রতিযোগিতাও অনেক—এলজি ও স্যামসাংয়ের মতো কোরীয় মহিরুহ কোম্পানি, টাটা গ্রুপের ভোল্টাস, হ্যাভেলস বা মার্কিন ওয়ার্লপুলের ভারতীয় শাখা—সবাই এক ময়দানে। হোলকার বলেন, আমরা এখনো কোরীয় ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি, তারা দ্রুত ছোট শহরগুলোয় পৌঁছে যাচ্ছে।
গোদরেজ একসময় ফ্রিজের বাজারের পথিকৃৎ ছিল, ১৯৫৮ সালে ভারতে প্রথম রেফ্রিজারেটর তৈরি করে এবং পরে ১৯৯০-এর দশকে জেনারেল ইলেকট্রিকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ১৯৯৯ সালে সেই চুক্তি শেষ হয়, ঠিক তখনই কোরীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার দখল শুরু করে। তবু গোদরেজ লড়ছে, দেশজুড়ে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৪০ হাজার, যার মধ্যে রয়েছে ১৫০টি নিজস্ব ‘গোদরেজ ইনস্পায়ার হাব’।
কোভিডের পর কোম্পানি এখন উন্নতমানের পণ্যে জোর দিচ্ছে, এআই-নির্ভর ফ্রিজ, ভয়েসকন্ট্রোল এয়ারকন্ডিশনার, সেন্সরভিত্তিক ওয়াশিং মেশিনে। ফলও মিলছে, ২০২৫ অর্থবছরে মুনাফার হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
হোলকারের সংস্কার অভিযানের বড় অংশ ডিজিটাল রূপান্তর—১৪ কোটি ডলার ব্যয়ে কোম্পানির সব বিক্রয় ও সেবার তথ্য একটি প্ল্যাটফর্মে একত্র করা হচ্ছে। হোলকার বলেন, এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য, গ্রাহকের সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া; ‘বিক্রয়-পরবর্তী সেবা ধরে রাখা মানে সম্পর্কটাও দীর্ঘমেয়াদি রাখা।’
যদিও হোলকারের মূল মনোযোগ ভোক্তাপণ্য বিভাগে। তাঁর কাকা জামশেদের তত্ত্বাবধানে অ্যারোস্পেস ইউনিটও বাড়ছে। মুম্বাইয়ের দক্ষিণে খালাপুরে তৈরি হচ্ছে যন্ত্রাংশের কারখানা। ইসরো যেহেতু নতুন স্যাটেলাইট ও মানুষসহ মহাকাশযাত্রার পরিকল্পনা করছে, গোদরেজ অ্যারোস্পেসও এবার বিভিন্ন মহাকাশ-স্টার্টআপের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে।
আইনজীবী হিসেবে শুরু করেছিলেন হোলকার। ২০১৫ সালে গোদরেজ অ্যান্ড বইসে যোগ দেন, ২০১৮ সালে হন নির্বাহী পরিচালক। পরিবারে তিনিই প্রথম চতুর্থ প্রজন্মের নির্বাহী সদস্য। তাঁর নেতৃত্বেই ২০২৪ সালে দীর্ঘ আলোচনার পর গোদরেজ সাম্রাজ্য দুই ভাগে বিভক্ত হয়, গোদরেজ এন্টারপ্রাইজেস গ্রুপ (জামশেদ ও স্মিতা গোদরেজের নেতৃত্বে) এবং গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপ (আদি ও নাদির গোদরেজের নেতৃত্বে)। কিছু বিষয়ে মতভেদ ছিল, তবু শেষ পর্যন্ত সবার জন্য ন্যায্য সমাধান করতে পেরেছেন বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন হোলকার।
এক শতাব্দীর বেশি পুরোনো গোদরেজ সাম্রাজ্যের শুরু ১৮৯৭ সালে। তখন ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়েছে। ডাক উঠেছিল ‘দেশি পণ্য’ তৈরির। গোদরেজ তৈরি করেছিলেন প্রথম তালা; এরপর এল সেফ, বসন্ততেলের সাবান, চাবি, টাইপরাইটার, ফ্রিজ—যেসব পণ্য একে একে ভারতের মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতীক হয়ে ওঠে।
আজ সেই গোদরেজ ব্র্যান্ড নতুন যুগের দোড়গোড়ায়, মহাকাশেরযানের ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ঘরের ফ্রিজ পর্যন্ত; ঐতিহ্য ও এক আধুনিকতার অনন্য সংমিশ্রণে বেড়ে উঠবে তারা।