অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নির্বাচনের আয়োজন করা। সেটি সুষ্ঠুভাবে করা, যাতে গত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতার পরিবর্তন ঘটে। মানুষ যেন নিরাপদে এবং সুস্থভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, ভোট দিতে পারে। সংঘাত বা সহিংসতা যেন না হয়
কিংবা রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো পক্ষপাত যেন দেখা না যায়—এগুলোই এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব।

এই দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারের কী ধরনের কাঠামো প্রয়োজন, সেটাই এখন প্রশ্ন। বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমনিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনের বিষয়ে একটি সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্ত আছে, আদালতের রায়ও আছে। সেই হিসেবে এই অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করতে পারে, তাতে কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু সরকারের যা নিশ্চিত করতে হবে, তা হলো—সরকার যেন পক্ষপাতহীন থাকে, প্রশাসন এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে বিন্যাস করে। প্রয়োজনে পুনর্বিন্যাস করবে, প্রয়োজনে কাঠামোর ভেতরে যে পরিবর্তন দরকার, সেটা করবে।

আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদল দেওয়ার প্রস্তাবটা আসলে খারাপ নয় ৫৪ মিনিট আগে

বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তিনটি দলই আলাদা আলাদা বৈঠকে ‘কিছু উপদেষ্টার’ অপসারণ চেয়েছে। তিনটি দল আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের অপসারণ চাওয়াটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে, উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে তাদের যদি সমবেতভাবে অভিযোগ থাকে, তবে সেটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে সাধারণত তিন ধরনের অভিযোগ হতে পারে—অদক্ষতা, দুর্নীতি ও দলীয় পক্ষপাত।

যদি এসব অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হয়, সেখানে যদি তথ্যপ্রমাণ থাকে, তাহলে সরকারকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে তা বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু যদি অভিযোগগুলো অযৌক্তিক হয় কিংবা জোরজবরদস্তি হয়—যেমন আমরা অনেক সময় দেখি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লোক বসানো বা সরানোর ক্ষেত্রে মব সন্ত্রাসের মতো প্রবণতা তৈরি হয়, তাহলে সেটাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

এখন এই অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে পুরো দায়িত্বই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর বর্তায়। তাঁর বিচার-বিবেচনা, দক্ষতা, সক্ষমতা, নিরপেক্ষতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা সবকিছুর ওপর এখন অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি কতটা তা কার্যকরভাবে করতে পারবেন, সেটিই এখন মূল বিষয়।

তিনটি রাজনৈতিক দল যে তিন ধরনের অভিযোগ করছে, আমরা তো বাইরে থেকে দেখছি। তবে এই তিন দলের মধ্যেই দলীয় প্রভাব বাড়ানোর একটা প্রবণতা আছে। কোথাও জোরজবরদস্তি হচ্ছে, কোথাও কৌশল প্রয়োগ হচ্ছে, কোথাও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই প্রবণতা গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য একটা বড় হুমকি। সাধারণভাবে এখন বলা হয় যে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি—এই তিন দলের সমন্বয়ে এই সরকার চলছে। তাই যদি এই তিন দলের মধ্যে নিজেদের অংশ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়, সেটা দেশের নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

আমরা অতীতে দেখেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করেছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে বড় কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এখনকার অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই নানা বিতর্ক ও দলীয় প্রভাবের মধ্যে আছে, ফলে সমাজে একধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে।

এই অনাস্থা অতিক্রম করে সরকারকে এমন এক অবস্থান নিতে হবে, যাতে মনে হয় তারা যথাযথ নির্বাচনের জন্য দৃঢ় অবস্থানে আছে এবং কোনো দলের অযৌক্তিক দাবির কাছে আত্মসমর্পণের মতো দুর্বলতা তাদের নেই।

লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট সরক র র র জন য র বর ত অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

কার্ড বেড়েছে আড়াই গুণ, লেনদেন ৩ গুণের বেশি

দেশে কার্ডভিত্তিক লেনদেন দিন দিন বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে দেশে নতুন কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। এ সময়ে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে তিন গুণের বেশি।

কার্ডের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ জুলাই মাসের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহার, লেনদেনের প্রবণতা ও বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের ধরনের চিত্র তুলে ধরা হয়।

বর্তমানে দেশের ৫৬টি ব্যাংক ও ১টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি) কার্ড সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে ৪৮টি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড, দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড ও প্রিপেইড কার্ড সেবা দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের আগস্ট শেষে দেশে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ২২ লাখ। ২০২৫ সালের জুলাই শেষে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৬৯ লাখ। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বছরে কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে ১৫৬ শতাংশ বা আড়াই গুণের বেশি। দেশে সর্বাধিক প্রচলিত তিন ধরনের কার্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা। পাঁচ বছরে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি (১২০ শতাংশ) বেড়েছে। সেই তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের বৃদ্ধি কম, ৯৪ শতাংশ। সর্বশেষ পাঁচ বছরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনও ২৩২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের আগস্টে মোট কার্ডভিত্তিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত বেতন ভাতা, নগদ উত্তোলন ও দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ডেবিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও এখনো এটির ব্যবহার শহরকেন্দ্রিক। শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচ বছরে বেড়েছে প্রায় ১৬ গুণ। মূলত অনলাইন কেনাকাটা, ভ্রমণ ব্যয় ও নির্দিষ্ট লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রিপেইড কার্ড জনপ্রিয়।

* ২০২০ সালের আগস্ট শেষে দেশে কার্ডের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ২২ লাখ, যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৬৯ লাখ।
* ২০২০ সালের আগস্টে কার্ডে লেনদেন হয়েছিল ১৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ৪৭৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার অবস্থান। একসময় ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি খরচ হতো ভারতে, কিন্তু ভিসা জটিলতায় ভারতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমে যাওয়ায় দেশটি এখন ৬ নম্বরে নেমে এসেছে। আর ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ডেবিট কার্ড বিদেশে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। এরপর ব্যবহার হয় যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, চীন ও ভারতে। প্রিপেইড কার্ডও সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় যুক্তরাজ্যে।

গত জুলাই মাসে দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা খরচ করেছেন গ্রাহকেরা। এর মধ্যে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র; বিদ্যুৎ, গ্যাসের মতো বিভিন্ন পরিষেবা বিল; ওষুধ ও ফার্মেসি, নগদ উত্তোলন, পরিবহন ও তহবিল স্থানান্তর হিসেবে ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ লেনদেন হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে দেশে মোট ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। তবে জুনের তুলনায় জুলাইয়ে ভোক্তা ব্যয়ে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা বৃদ্ধি, ব্যাংকের বিভিন্ন প্রচারণামূলক অফার, দৈনন্দিন কেনাকাটায় ডিপার্টমেন্ট স্টোরের সুবিধাজনক ভূমিকা ও এসব প্রতিষ্ঠানে কার্ড ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির কারণে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়।

অন্যদিকে জুলাই মাসে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় এক–চতুর্থাংশ অর্থ খরচ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা। এরপর বিদেশিদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ভারত, মোজাম্বিক, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকেরা বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন ক্রেডিট কার্ডে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কার্ড বেড়েছে আড়াই গুণ, লেনদেন ৩ গুণের বেশি
  • শামসুর রাহমানের অবদান ও অপরিহার্যতা