ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের সংস্কৃতি ‘ফেরত আসছে’, উদ্বেগ জানাল বিপিটি
অন্তর্বর্তী সরকার গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ আমলের গুমের বিচারে উদ্যোগ নিলেও ‘গুমের সংস্কৃতি’ আবার ফিরে আসছে বলে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক দুটি ঘটনার উল্লেখ করে আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলে বাংলাদেশ পলিটিক্যাল থিংকারস (বিপিটি) নামের একটি সংগঠন। তারা বলছে, এ কারণে জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিপিটির কো-অর্ডিনেটর মো. নুর নবী। বক্তব্য দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান ও বিপিটির নির্বাহী সদস্য রায়হান চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্য আলমগীর হাসান।
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের ঘটনায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনায় পড়ার দিকটি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যানের বরাতে বলা হয়, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সাত শতাধিক মানুষের গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৫০ জনের বেশি মানুষের খোঁজ এখনো মেলেনি।
নুর নবী বলেন, সৌভাগ্যক্রমে আট বছর পর কথিত বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্ত হয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁরা নিজ নিজ বাসায় ফেরেন।
আবদুল্লাহিল আমান আযমী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আজমের (প্রয়াত) ছেলে। আহমাদ বিন কাসেম জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মীর কাসেম আলীর ছেলে। পাঁচ বছরের বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমারও ‘আয়নাঘর’ থেকে ফিরে আসার কথা বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
আওয়ামী লীগ আমলের এসব গুমের ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ভারতের জড়িত থাকারও অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে দাবি করে তার নজির হিসেবে ঢাকার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে সুখরঞ্জন বালি এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের গুমের ঘটনা দুটি বলেন নুর নবী।
দেশের মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জাতিসংঘের অনুরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের গত বছরের ২৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করা এবং গুমসম্পর্কিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ এবং বিচার শুরুর বিষয়টিও ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখায় বিপিটি।
এরপর সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিপিটির কো–অর্ডিনেটর নুর নবী। এক ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুরাগ থানার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কে এম মামুনুর রশিদ গত ২২ সেপ্টেম্বর সকালে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। ৪ দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচলের একটি মসজিদ থেকে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এনসিপির যুব উইংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও দলটি তা অস্বীকার করেছে।
আরেক ঘটনায় গাজীপুরের টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি এলাকার বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানী গত বুধবার সকালে নিখোঁজ হন। পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চগড় সদর থানার হেলিপ্যাড বাজার এলাকার রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মুফতি মুহিবুল্লাহ জুমার খুতবায় নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক মূল্যবোধ, আন্তধর্মীয় সম্পর্ক ও ইসকন নিয়ে নিয়মিত বক্তব্য রাখতেন। এর পর থেকে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে নুর নবী বলেন, ‘পূর্বের ন্যায় গুমের সংস্কৃতি ফেরত আসার ঘটনায় দেশের নাগরিকদের ভেতর উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অভিযোগ যাঁর দিকেই আসুক, সরকারকে এ ব্যাপারে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাধীন দেশে কোনো মানুষ গুমের শিকার হবে না, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
সংবাদ সম্মেলনে হাসিনুর রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ভারতকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। চোখে চোখ রেখে কথা বলেন।
মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানীকে তুলে নেয়ার পেছনে হিন্দু ধর্মীয় একটি সংগঠন জড়িত ছিল দাবি করে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কঠোর আইনের ধারায় আনতে হবে।