পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সর্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা জানাল বাংলাদেশ
Published: 24th, October 2025 GMT
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে সম্প্রতি খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট।
তথাকথিত ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব আরোপের নামে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেআইনি দখলদারত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বিশেষ করে রেজলু৵শন ২৩৩৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।
গত ২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-এর দেওয়া অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই মতামতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীন ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ জনগণের ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে ইতিহাস মুছে ফেলার রাজনীতি: এবার টার্গেট তাজমহল
মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী নিয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি ১২০৪ সালে লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে বাংলা জয় করেন। স্কুলে আমার পাশে বসত আমার বন্ধু নারায়ণ। আমার মনে আছে ইতিহাস শিক্ষক এই বিষয়টা যখন পড়াচ্ছিলেন, নারায়ণ খুব মন খারাপ করেছিল।
ইতিহাসের ক্লাসে আমাদের আরেক দিন পড়ানো হলো পলাশীর যুদ্ধ। নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর বিরাট বাহিনী নিয়েও হেরে গেলেন রবার্ট ক্লাইভের অল্প কয়জন সৈন্যের কাছে, অস্তমিত হলো বাংলার স্বধীনতা। এবার আমি ও নারায়ণ দুজনেই ক্লাসে খুব মন খারাপ করলাম।
ক্লাস থেকে বের হয়ে আবার আমরা স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা করলাম। কী আর আমরা করতে পারতাম? নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে তো আর ফিরিয়ে আনা যেত না!
ইতিহাসের এসব দুঃখবোধ সবার থাকবে, যার যেমন আবেগ। কিন্তু ইতিহাসের ঘড়ি ও ঘটনা তো পাল্টানো যাবে না, সবাইকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হয়। পুরোনো ইতিহাসকে টেনে এনে নিজের মনে ও অন্যদের মনে জ্বালা সৃষ্টি করা কোনো কাজের কাজ নয়। আর সমাজে প্রতিহিংসা সৃষ্টি করা তো আরও জঘন্য কাজ।
ঠিক এই জিনিসটাই হচ্ছে আজকের ভারতে। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন নিয়ে কিছু লোক এমনিতেই অন্তর্জ্বালায় ভুগছেন, নরেন্দ্র মোদির উত্থানের পর তাঁরা ক্রমান্বয়ে প্রতিহিংসার বারুদ ছড়াচ্ছেন। এই প্রতিহিংসা ভারতের হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদীদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে মিশে ধ্বংসাত্মক আকার ধারণ করছে। ইতিহাসের প্রতিহিংসার প্রথম বড় বলি ছিল অযোধ্যার বাবরি মসজিদ, যেটাকে ভেঙে গড়া হলো রামমন্দির।
ভারতের অসাম্প্রদায়িক ও উদারপন্থী জনগণ অবশ্য সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কার্যক্রমকে নিন্দা জানিয়ে আসছে। এমনকি গত সাধারণ নির্বাচনে রামমন্দির এলাকার সংখ্যাগুরু হিন্দু জনগণ ভোট দিয়ে বিজেপির লোকসভা প্রার্থীকে হারিয়ে জানান দেন—তারা এসব উগ্রতার বিরুদ্ধে।
লাভ হতে পারে ভারতীয় ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের এবং মোদির দল বিজেপির। তারা আশা করবে তাদের ভোটব্যাংকে যোগ হবে আরও অনেক বেশি হিন্দু ভোট। সংখ্যালঘুদের অপদস্থ করে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ভোট বাড়ানোই এসব প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির মূল উদ্দেশ্য। তবে হিতে বিপরীতও হতে পারে, যেমন করে মোদির দল গত নির্বাচনে হারিয়েছিল রামমন্দির এলাকার লোকসভা আসনটি।তাই বলে কি উগ্রবাদীদের দমানো যায়? তাঁরা মুসলমান বিদ্বেষ ছড়াবার জন্য নতুন নতুন কৌশল বের করা শুরু করলেন।
এইসব ‘সংশোধনবাদী ইতিহাসবিদেরা’, কেউ কেউ ‘স্থপতিবিদ’ সেজে মোগল স্থাপত্যের সমালোচনা করছেন। আবার কেউবা ‘প্রত্নতাত্ত্বিক’ সেজে কোন মসজিদের নিচে কয়টা মন্দির আছে এবং তাজমহল কোন মন্দির দখল করে গড়া হয়েছে, এসব নিয়ে ‘ইতিহাস’ গড়ছেন। এই উগ্রবাদীরা রাজনৈতিক কারণে ইতিহাসকে টেনেহিঁচড়ে অপ-ইতিহাস তৈরি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন এবং সমাজে ধর্মীয় বিভাজন ছড়াচ্ছেন।
তাঁরা এসব অপ-ইতিহাস প্রচার করতে বিভিন্ন উপায় বের করছেন এবং আরও বেশি লোককে ক্রুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে এই ইতিহাসের বিকৃতি আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দক্ষিণপন্থী চিত্র প্রযোজক-পরিচালক ও সিনেমাকর্মীদের একটা গ্রুপ ইতিহাসকে বিকৃত করে নতুন নতুন চলচ্চিত্র তৈরি করছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন মিঠুন চক্রবর্তী, অনুপম খের ও পরেশ রাওয়ালের মতো নামকরা অভিনেতারা।
এবার কল্পকাহিনির ভিত্তিতে সিনেমা বানানো হয়েছে তাজমহলকে নিয়ে, নাম—‘দ্য তাজ স্টোরি’।