হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সচালকদের সংঘর্ষে সেবা বন্ধ, রোগীর মৃত্যু
Published: 9th, October 2025 GMT
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় গ্রুপের সাতজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে এ সংঘর্ষ চলাকালে হাসপাতালজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় প্রায় আধা ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকে। এ সময় হাসপাতালে আসা এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা রোগী মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, হাসপাতালে আনার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের কম্পাউন্ডে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রাখায় রোগী ও তাদের স্বজনদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে সদ্য যোগ দেওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তিনটি করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল কম্পাউন্ডে রাখার নির্দেশ দেন। অন্য বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে হাসপাতালের বাইরে রাখতে বলেন।
হামলায় আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স মালিক জাবেদ সেলিম অপর অ্যাম্বুলেন্স মালিক জামাল সিকদারকে তার দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি ভিতরে রাখতে বলেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরে সেলিম ও জামালের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সংঘর্ষ চলাকালে রোগী ও তাদের স্বজনরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসাসেবা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সংঘর্ষ চলাকালে হাসপাতালে আসা এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত হাফিজুর রহমান (৬০) গৌরনদী উপজেলার দিয়াশুর গ্রামের নুর মোহাম্মদ আকনের ছেলে।
তবে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, হাসপাতালে আনার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাফিজুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে। তারা ইসিজি করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হামলায় আহত জাবেদ সেলিমের ভাই সালাম বেপারী জানিয়েছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশ অন্য অ্যাম্বুলেন্সচালকদের জানাতে গেলে পরিকল্পিতভাবে জামাল সিকদার ও তার ছেলেরা হামলা চালায়। হামলার খবর পেয়ে তিনি (সালাম) ও তার স্বজন ইলিয়াস সরদার ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের ওপরও হামলা হয়। জাবেদ সেলিমকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে জামাল সিকদারের ছেলে সাইদ সিকদার অভিযোগ করেছেন, সেলিম ও তার লোকজন অশ্লীল ভাষায় তাদের গালিগালাজ করেন। এর প্রতিবাদ করায় তাকেসহ (সাইদ) তার বাবা জামাল সিকদার, ভাই শাহাদাত সিকদার ও হেলপার রাহাত ঘরামীকে মারধর করা হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো.
গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/পলাশ/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত ব সরক র স ঘর ষ ব ষয়ট উপজ ল গ রনদ
এছাড়াও পড়ুন:
ভাই খুন করার পর মৃত প্রেমিককে বিয়ে করলেন তরুণী
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজনের পরিচয়। এরপর ধীরে ধীরে ভালো লাগা। পরে মন দেওয়া–নেওয়া। একপর্যায়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কিন্তু শেষমেষ সাতপাকে বাঁধা হলো না। ভিন্ন জাতের কারণে ছেলেটিকে মেরে ফেলা হয়। অভিযোগ প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে। এতে দমে যাননি প্রেমিকা। প্রেমিকের মরদেহকে বিয়ে করে তাঁর বাড়িতে বসবাস শুরু করেছেন।
মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে। তরুণীর নাম আঁচল মামিদওয়ার (২১)। তাঁর প্রেমিকের নাম সক্ষম তাতে (২০)। মৃত প্রেমিককে বিয়ে করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
আঁচল বলেন, তাঁরা বিয়ে করলে মেনে নেবেন বলে পরিবারের সদস্যরা আশ্বস্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন বছর ধরে একসঙ্গে ছিলাম। কত স্বপ্ন দেখেছি। আমার ভাইয়েরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁরাই আমাদের বিয়ের আয়োজন করবেন; কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
সক্ষমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয়েছিল বলে জানান আঁচল। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (পরিবারের সদস্যরা) সক্ষমের সঙ্গে ভালো আচরণ করতেন, একসঙ্গে খেতেন। তাঁরা সক্ষমকে আশ্বস্ত করেছিলেন, সব ঠিক আছে। আমরা ভাবতে পারিনি যে এমন কিছু ঘটবে।’
পুলিশের উসকানি
আঁচল অভিযোগ করেন, ধীরাজ কোমলওয়ার ও মহিত আসারওয়ার নামের দুজন পুলিশ সদস্য এ কাজে তাঁর ভাইদের উসকানি দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড ছিল বলে জানা গেছে।
আঁচল বলেন, ‘সক্ষমকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন বেলা ১১টার দিকে আমার ছোট ভাই আমাকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সক্ষমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিতে বলে, যা ছিল মিথ্যা। আমি তাতে রাজি হইনি।’
মহারাষ্ট্রের এই তরুণী বলেন, ‘তখন পুলিশ আমার ভাইকে বলে, “তুমি তো মানুষ খুন করার পরেও এখানে আসো। তোমার বোন যাঁর সঙ্গে প্রেম করেন, তাঁকে মেরে ফেলো না কেন?”’
আঁচল বলেন, ‘পুলিশের কথার জবাবে আমার ভাই বলে, “ঠিক আছে, সন্ধ্যার মধ্যেই তাকে মেরে আপনাদের কাছে হাজির হব।”’
সক্ষমকে যেভাবে হত্যা করা হয়
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন সক্ষম। তখন আচঁলের ভাই হিমেশ মামিদওয়ারের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়, যা শেষ পর্যন্ত মারামারিতে রূপ নেয়। হিমেশ একপর্যায়ে ২০ বছর বয়সী সক্ষমকে গুলি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গুলিটি তাঁর পাঁজরে লাগে। এরপর হিমেশ তাঁর মাথায় টাইলস দিয়ে আঘাত করে ঘটনাস্থলেই তাঁকে মেরে ফেলেন।
এ ঘটনায় হিমেশ, তাঁর ভাই সহিল, তাঁদের বাবা গজনান মামিদওয়ার এবং আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, দাঙ্গাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
শেষকৃত্য রূপ নেয় বিয়েতে
পরদিন সন্ধ্যায় শুক্রবার সক্ষমের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি চলছিল। আঁচল তখন সক্ষমের বাড়িতে গিয়ে সিঁদুর পরে সক্ষমের মরদেহকে ‘বিয়ে’ করেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে সক্ষমের সঙ্গে প্রেম করেছি। কিন্তু জাতপাতের পার্থক্যের কারণে আমার বাবা এ সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিলেন। আমার পরিবার প্রায়ই সক্ষমকে হত্যার হুমকি দিত। আর এখন আমার ভাই ও বাবা সেটাই করে ফেলেছেন। আমি বিচার চাই। আমি চাই অভিযুক্তদের ফাঁসি হোক।’
আঁচল বলেন, এখন থেকে তিনি সক্ষমের পরিবারের সঙ্গে থাকবেন।
‘জাতপাতের কারণে হত্যা’
আঁচল জানিয়েছেন, পরিবার বলে দিয়েছে তাঁর জন্য বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জাতপাতের কারণে। আমার বাবা ও ভাইয়েরা বলতেন, “আমরা গ্যাংস্টার, সক্ষম তা জানে। সে কীভাবে আমাদের মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সাহস পায়?”’
আঁচল বলেন, সক্ষমের পরিবার তাঁকে মেনে নিয়েছে। তিনি আজীবন তাদের সঙ্গেই থাকবেন। তিনি ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
এই তরুণী বলেন, ‘অনেক মানুষ আমার পাশে রয়েছে। জাতের কারণে কাউকে হত্যা করা উচিত নয়।’