Prothomalo:
2025-11-06@15:16:28 GMT

চা-বাগানের সীমানা পেরিয়ে

Published: 6th, November 2025 GMT

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা-বাগান। এই চা-বাগানেই আমি বড় হয়েছি। বাবা চা-শ্রমিক, রোজ ভোরে কাজে যেতেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করতেন। দিন শেষে মজুরি পেতেন মাত্র ১০২ টাকা। সেই টাকায় চলত পাঁচজনের সংসার। কিন্তু বাবা কখনো অভিযোগ করেননি। তিনি বলতেন, ‘জীবন যত কঠিনই হোক, মা, হাল ছেড়ো না।’ বাবার কথাটা আজও আমার ভেতরের শক্তি হয়ে আছে। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা পড়াশোনায় বাধা হয়েছিল। কিন্তু সেই বাধা অতিক্রম করেছি।

জীবন আমাদের প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখায়। কেউ শেখে বইয়ের পাতায় চোখ রেখে, কেউ শেখে হেঁটে চলা জীবনের পথ থেকে। আমি বিশ্বাস করি, সত্যিকারের শিক্ষা আসে জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। যখন আমরা হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই, আবার উঠে দাঁড়াই, তখনই শেখা শুরু হয়। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। তবু মনে প্রশ্ন জাগত, আমার স্বপ্ন কি সত্যিই একদিন পূরণ হবে?

স্বপ্নের পথে প্রথম বৈষম্য

চা-বাগানে মেয়েদের নিয়ে সবার একটা ধারণা থাকে, ওরা কতটুকুই–বা পড়াশোনা করবে! ছোটবেলা থেকেই এ ধরনের কথা শুনেছি। কষ্ট হতো, কিন্তু থামিনি। মনে মনে বলতাম, ‘আমি পারব।’

বাবার কষ্ট দেখেই নিজের মধ্যে শক্তি পেয়েছি। স্কুলের পর টিউশন পড়াতাম, যাতে নিজের পড়ার খরচ কিছুটা নিজেই জোগাতে পারি। কখনো কখনো এমন দিন গেছে, দুপুরে শুধু রুটি খেয়েছি। তবু মনে শান্তি ছিল। কারণ, জানতাম, আমি চেষ্টা করছি, সামনে এগোচ্ছি। সেসব দিন আমাকে শিখিয়েছে, সফলতা মানে শুধু বড় কিছু পাওয়া নয়, বরং ছোট ছোট অর্জনগুলোকে ভালোবাসা, কৃতজ্ঞ থাকা। স্কুল ও কলেজে ভালো ফলাফল করলেও আমার সবচেয়ে বড় লড়াইটা ছিল নিজের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখা। পরিবার তখনো ভাবত, মেয়েদের জন্য পড়াশোনা এতটা দরকারি নয়।

কখনো মানুষ উপহাস করেছে, কখনো নিজের ক্ষমতার ওপরেই সন্দেহ জেগেছে। কিন্তু প্রতিবারই ভেতরের একটা মৃদু কণ্ঠ বলেছে, ‘এগিয়ে চলো, হাল ছেড়ো না।’

নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে

কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই আত্মীয়রা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য মা–বাবাকে বোঝাতে থাকেন। মা–বাবাও ভাবছিলেন, মেয়ের এত পড়াশোনার কী দরকার? এর চেয়ে সংসার করা ভালো।

আমি ভয় পেয়ে যেতাম। মনে হতো, স্বপ্নটা হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে! রাতে ঘুমাতে পারতাম না, সংসারের ভেতর ঢুকে যাওয়ার ভয়ে। কিন্তু ভেতর থেকে একটা শক্তি বলেছিল, ‘না, আমি থামব না।’

একদিন ঠিক করি, নিজেকেই নিজের লড়াইটা লড়তে হবে। বিয়েতে ‘না’ বলি। আর এটা বলামাত্র আত্মীয়স্বজন আমাকে আর আমার পরিবারকে ভয় দেখাতে শুরু করে, অপমান করে। এমনকি বাড়ির চারপাশে পেট্রল ঢেলে আমাদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়েছিল!

চা-বাগানের শিশুদের অনেকে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাস করলেও মাধ্যমিক স্তরে গিয়ে ঝরে পড়তে থাকে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে ঢাকায় লড়াই করতে এসেছি, বললেন রাশা

হেমন্তের সকালে পল্টন আউটার স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছিলেন ফিলিস্তিনের আর্চার রাশা ইয়াহিয়া আহমেদ। চোখে কালো রোদচশমা, মাথায় সাদা হ্যাট আর পেছনের তির রাখা ব্যাগে ঝোলানো ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা। সবকিছু মিলিয়ে তাঁর উপস্থিতি যেন আলাদা আভা ছড়াচ্ছিল।

৮-১৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ২৪তম এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ। আসর সামনে রেখে প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছে রাশা। তিনি নারী রিকার্ভ এককে অংশ নেবেন। তাঁর সঙ্গে দলগতভাবে খেলবেন তিন পুরুষ সদস্য—আলী আলাহামাদ খালেদ, আওয়াদ সামি ও বাদওয়ান ওসায়েদ। তাঁরা খেলবেন কম্পাউন্ড ইভেন্টে।

রাশা বলেন, ‘এখানে শুধু আসার জন্যই আসা নয়, ভালো পারফরম্যান্স করা এবং লড়াই করে ভালো কিছু করার লক্ষ্যেই আমরা এখানে এসেছি।’

পল্টন আউটার স্টেডিয়ামে আজ অনুশীলন করেছেন রাশা ইয়াহিয়া আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ