অলিপুরা রাবারড্যাম ধ্বংসের মুখে, বালু সন্ত্রাসীদের দাপটে কৃষির হৃদস্পন্দন নিভে যাচ্ছে
Published: 10th, November 2025 GMT
সোনারগাঁও উপজেলার ঐতিহাসিক অলিপুরা রাবারড্যাম আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একসময় স্থানীয় কৃষকের সেচনির্ভর জীবনের প্রাণ এই রাবারড্যাম এখন অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে স্থাপিত এই রাবারড্যামটি এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে টেকসই করার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বালু সন্ত্রাসীদের অবৈধ ড্রেজার মেশিনের কার্যক্রমে প্রকল্পটির মূল কাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রাতে ড্রেজারের গর্জন, দিনে কৃষকের কান্না রাত্রির নীরবতা ভেঙে বালু উত্তোলনের শব্দ এখন নিত্যসঙ্গী অলিপুরা এলাকায়। নদীর বুক চিরে তোলা হচ্ছে বালু, আর তার প্রভাবে ড্যামের পাড় ধসে পড়ছে একের পর এক। আশপাশের ফসলি জমিতে দেখা দিচ্ছে ফাটল, পানি সরে যাচ্ছে নিচে, নষ্ট হচ্ছে ফসল।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল মান্নান (৫২) বলেন, “এই রাবারড্যামই ছিল আমাদের জীবনের আশ্রয়। এখানকার পানি দিয়েই চাষ করতাম, সংসার চালাতাম। এখন জমি শুকিয়ে যাচ্ছে, ফসল নষ্ট হচ্ছে— অথচ কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
আইন লঙ্ঘন করে চলছে বালু উত্তোলন
পরিবেশবিদদের মতে, এই কর্মকাণ্ড ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)’ এবং ‘নদী ও বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১০’–এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।
গত ১০ নভেম্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাবারড্যামের কাছেই চলছে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন। স্থানীয়দের অভিযোগ— প্রশাসন জানলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আশপাশের জমি ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে, কিছু এলাকায় পানি সরে গিয়ে ফসলি জমি অনুর্বর হয়ে পড়েছে।
“রাবারড্যাম রক্ষা মানেই কৃষি রক্ষা” — মীযানুর রহমান
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির মহাসচিব মীযানুর রহমান বলেন,“অলিপুরা রাবারড্যাম শুধু একটি প্রকল্প নয়, এটি একটি এলাকার পরিবেশ, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এখানে বালু উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, ফসলি জমি ধ্বংস হচ্ছে। প্রশাসনের এখনই হস্তক্ষেপ করা জরুরি— নইলে সোনারগাঁওয়ের কৃষি ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয় নেমে আসবে।”
তিনি আরও বলেন,“আমরা পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি— অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে ড্যামটি পুনরুদ্ধার করা হোক। রাবারড্যাম রক্ষা মানে কৃষক রক্ষা, মাটি রক্ষা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা।”
কৃষির ঐতিহ্য হারানোর শঙ্কা অলিপুরা রাবারড্যাম একসময় ছিল সোনারগাঁওয়ের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির প্রতীক। এখানকার মানুষ এই ড্যামের পানি দিয়ে চাষাবাদ করত, মাছ ধরত, পরিবার চালাত। এখন সেই জলাশয় পরিণত হয়েছে ধুলার স্তূপে।
স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ড্যামটি পুরোপুরি ধসে পড়বে। আর তা হলে সোনারগাঁওয়ের কৃষি উৎপাদনে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র ব রড য ম ব যবস থ পর ব শ অল প র স ন রগ
এছাড়াও পড়ুন:
একসময় ঘড়ি আর ক্যালকুলেটর মানেই ছিল ক্যাসিও
নব্বই বা আশির দশকের তরুণ-কিশোরদের কাছে ‘ক্যাসিও’ শব্দটি বেশ পরিচিত। নব্বইয়ের দশকে ক্যাসিও ছিল হাতের কবজি বা স্কুল ব্যাগের এক অপরিহার্য অংশ। ঘড়ি আর ক্যালকুলেটর মানেই ছিল ক্যাসিওর নাম। স্মার্টওয়াচ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভিড়ে ক্যাসিওর সেই জৌলুশ আর নেই। ইতিহাস বলে, জাপানের এই ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠান কেবল ঘড়ি বা ক্যালকুলেটরে সীমাবদ্ধ ছিল না।
ক্যাসিওর বেশ পুরোনো কাজ আছে। ১৯৪৬ সালে কাজুও কাসিওর হাত ধরে জাপানের টোকিওতে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু। প্রথম দিকে এটি ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের মাধ্যমে শুরু করলেও ক্যাসিও তাদের দুটি প্রধান পণ্যের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫৭ সালে ক্যাসিও বিশ্বের প্রথম কমপ্যাক্ট ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটর ১৪ বাজারে আনে। এর আগের ক্যালকুলেটর ছিল যান্ত্রিক ও বিশাল আকারের। ক্যাসিও গণনার প্রক্রিয়াটিকে কেবল দ্রুতই করেনি, বরং এটিকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তোলে। নব্বইয়ের দশকে ক্যাসিওর সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে এক অপরিহার্য সরঞ্জাম। এফএক্স–৮২ বা এফএক্স–৯৯১ সিরিজের মতো মডেল জটিল গাণিতিক সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য জনপ্রিয় ছিল। তখন নির্ভরযোগ্যতা ও সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে প্রভাবশালী ব্র্যান্ডে পরিণত হয় ক্যাসিও।
১৯৭৪ সালে ক্যাসিও তাদের প্রথম ডিজিটাল হাতঘড়ি ক্যাসিওট্রন বাজারে আনে। ঘড়িটি কেবল সময় দেখাত না, বরং ক্যালেন্ডারও প্রদর্শন করত। এটি ছিল জাপানিজ কোয়ার্টজ প্রযুক্তির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ১৯৭৭ সালে ক্যাসিও এফ–১০০ নামের একটি রেট্রো-ফিউচারিস্টিক হাতঘড়ি বাজারে আনে। এই ঘড়ি ছিল বিশ্বের প্রথম হাতঘড়িগুলোর মধ্যে একটি, যা মূলত রেজিন দিয়ে তৈরি।
১৯৮৯ সালে ক্যাসিও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাতঘড়ি বাজারে আনে। এফ–৯১ ডব্লিউ বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত হাতঘড়ি ছিল একসময়। বার্ষিক উৎপাদন ৩০ লাখ ইউনিট। ক্যাসিওর এফ–৯১ ডব্লিউ মডেলের ঘড়ি সাশ্রয়ী মূল্যের পাশাপাশি সরলতা, স্থায়িত্ব ও ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতার জন্য বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ক্যাসিওর এফ-৯১ ডব্লিউ ঘড়ি